
মকবুলার রহমান,ডোমার প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের সীমান্ত পাড়ায় ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে চিরচেনা কৃষিচিত্র। একসময় যেখানে ধানই ছিল প্রধান ভরসা, সেখানে এখন লাভজনক বিকল্প হিসেবে জায়গা করে নিচ্ছে ভুট্টা চাষ। ক্রমবর্ধমান উৎপাদন খরচ, সেচ সংকট ও আবহাওয়ার অনিশ্চয়তায় দিশেহারা কৃষকরা নতুন সম্ভাবনার খোঁজে ঝুঁকছেন ভুট্টার দিকে।
স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধান চাষে অতিরিক্ত পানি ও শ্রমের প্রয়োজন হওয়ায় ব্যয় দিন দিন বাড়ছে। অন্যদিকে ভুট্টা চাষে তুলনামূলক কম সেচ লাগে, পরিচর্যাও সহজ। অল্প সময়ের মধ্যেই ফলন পাওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ দ্রুত বাড়ছে।
কম বিনিয়োগে বেশি আয় সীমান্ত পাড়ার কৃষক মো. হাফিজুল ইসলাম বলেন,“এক বিঘা জমিতে ধান লাগাতে যে খরচ হয়, তার চেয়ে অনেক কম খরচে ভুট্টা চাষ করা যায়। ফলন ভালো হলে লাভও বেশি হয়।”
আরেক কৃষক সফিকুল ইসলাম জানান,
“ভুট্টায় রোগবালাই কম হয়, আলাদা করে বেশি শ্রমিকও লাগে না। এখন শ্রমিক পাওয়া কঠিন, তাই ভুট্টা আমাদের জন্য সুবিধাজনক।”
বাজারে ভুট্টার কদর বাড়ছে
ভুট্টা চাষে আগ্রহ বৃদ্ধির পেছনে বড় কারণ হয়ে উঠেছে এর নিশ্চিত বাজার। পোল্ট্রি ও ডেইরি শিল্পের সম্প্রসারণে ভুট্টার চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। স্থানীয় হাটবাজার ছাড়াও পাইকাররা সরাসরি ক্ষেত থেকেই ভুট্টা সংগ্রহ করছেন।
ভুট্টা ব্যবসায়ী মনির হোসেন বলেন,
“এই এলাকার ভুট্টার মান ভালো। শুকনো ভুট্টার চাহিদা বেশি থাকায় কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি কিনে নেওয়া হচ্ছে।”
কৃষি বিভাগের পাশে থাকা
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নে ভুট্টার আবাদ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষকদের উন্নত জাতের বীজ, সঠিক সার ব্যবস্থাপনা ও আধুনিক চাষপদ্ধতি সম্পর্কে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ডোমার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন,“ভুট্টা একটি লাভজনক ও সম্ভাবনাময় ফসল। এই এলাকার মাটি ও জলবায়ু ভুট্টা চাষের জন্য উপযুক্ত। সঠিক পরিকল্পনা ও সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে সীমান্ত পাড়া ভুট্টা উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।”
আশাবাদী কৃষকরা স্থানীয়দের ধারণা, ভুট্টা চাষের বিস্তার ঘটলে কৃষকদের আয় বাড়বে, পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। ধান নির্ভরতা কমে কৃষিতে আসবে টেকসই পরিবর্তন।
সবুজে ঢাকা বিস্তীর্ণ ভুট্টাক্ষেত এখন শুধু ফসল নয়, সীমান্ত পাড়ার মানুষের নতুন স্বপ্ন ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনার প্রতীক হয়ে উঠেছে।