
কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
ঘন কুয়াশার কারণে চাঁদপুরের হাইমচর এলাকায় মেঘনা নদীতে যাত্রীবাহী দুই লঞ্চের সংঘর্ষে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজন যাত্রী আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার পর হতাহত যাত্রীদের ঢাকা নদী বন্দর সদরঘাট টার্মিনালে আনা হয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলা ও হরিণা এলাকার মাঝামাঝি স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নৌ পুলিশ সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহাগ রানা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, লঞ্চ সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও কয়েকজন যাত্রী। নিহতদের মরদেহ সদরঘাট টার্মিনালে রাখা হয়েছে। সুরতহাল শেষে মরদেহগুলো ময়নাতদন্তের জন্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে।
নিহতরা হলেন ভোলার লালমোহন উপজেলার আব্দুল গনি, মো. সাজু, রিনা বেগম এবং চরফ্যাশন উপজেলার মো. হানিফ।
প্রত্যক্ষদর্শী ও যাত্রীদের বরাতে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে ভোলার ঘোষেরহাট ঘাট থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করে এমভি জাকির সম্রাট-৩। চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে পৌঁছানোর পর ঘন কুয়াশার কারণে লঞ্চটি ধীর গতিতে চলছিল। এ সময় বরিশালগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ অ্যাডভেঞ্চার-৯-এর সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে এমভি জাকির সম্রাট-৩ লঞ্চের এক পাশ দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং লঞ্চে থাকা যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করা হয়। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে শুক্রবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর সদরঘাটে দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চ এমভি জাকির সম্রাট-৩ পরিদর্শন করেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় তিনি নিহত ও আহতদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এসময় নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি লঞ্চ দুটির মালিকপক্ষকে তলব করা হয়েছে। দায়ী মালিকপক্ষ থেকেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনা তদন্তে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আট সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “লঞ্চ অ্যাডভেঞ্চার-৯-এর পাঁচজন স্টাফকে ইতোমধ্যে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ঘন কুয়াশার মধ্যে লঞ্চ চলাচল না করার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিটি লঞ্চে ফগ লাইট ও সাইড লাইট নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি লঞ্চগুলোর ফিটনেস ও লাইসেন্স নিয়মিত তদারকির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই দুর্ঘটনার পর নৌপথে যাত্রী নিরাপত্তা ও কুয়াশাকালীন নৌ চলাচল নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।