
ড. আব্দুল ওয়াদুদ.
শিশু দিবসের উদযাপনের তারিখ দেশভেদে আলাদা হলেও এ দিবসের মূল লক্ষ্য এক ও অভিন্ন; শিশুদের অধিকার রক্ষা ও তাদের সুখী-সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করা। ১৯২৫ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত বিশ্ব শিশু কল্যাণ সম্মেলনে প্রথম আন্তর্জাতিক শিশু দিবস ঘোষিত হয়। পরে ১৯৫০ সাল থেকে বেশিরভাগ কমিউনিস্ট ও পোস্ট-কমিউনিস্ট দেশে ১ জুন দিনটি পালন শুরু হয়।জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৫৯ সালের ২০ নভেম্বর শিশু অধিকার ঘোষণাপত্র গৃহীত হওয়ার স্মরণে ২০ নভেম্বরকে বিশ্ব শিশু দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। শিশু দিবসের সূচনা হয় ১৮৫৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে, যেখানে ইউনিভার্সালিস্ট চার্চের যাজক রেভারেন্ড চার্লস লিওনার্ড প্রথম শিশুদের জন্য বিশেষ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। পরে তুরস্ক ১৯২০ সালে ২৩ এপ্রিলকে জাতীয় শিশু দিবস ঘোষণা করে, যা বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্রীয় স্বীকৃত শিশু দিবস।
১৯৮৯ সালের ২০ নভেম্বর বিশ্বনেতারা শিশু অধিকার বিষয়ে জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়ন করেন। এটি পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যাপকভাবে অনুমোদিত মানবাধিকার চুক্তি।
শিশু অধিকার সনদের আলোকে শিশুদের জন্য এবং শিশুদের নিয়ে বিশ্বব্যাপী ইউনিসেফ বিশ্ব শিশু দিবস পালন করে। এই দিনে ইউনিসেফ শিশুদের সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলো সমাধানে সমর্থন আদায় করে, শিশু অধিকার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ায় এবং প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করে। ‘My day, my rights’ স্লোগানে এবছর বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস।
আজকের শিশুরাই আগামী দিনের জাতির ভবিষ্যৎ। তারা শারীরিক-মানসিক স্বাস্থ্যে, শিক্ষায়, চিন্তায়-চেতনায় ও মননে যত সমৃদ্ধ হবে জাতির ভবিষ্যৎ তত শক্তিশালী হবে। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে শিশুদের সার্বিক পরিস্থিতি আশাব্যঞ্জক নয়। দারিদ্রের কষাঘাতে বহু শিশু তাদের বেঁচে থাকার অধিকার, বিকাশের অধিকার, জীবনযাত্রার মান ভোগ ও বিনোদনের অধিকার ইত্যাকার নানা অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে অভিভাবকরা অভাবের তাড়নায় তাদের শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োগ করছেন। আবার ছিন্নমূল শিশুরা পেটের তাগিদে নিজেরাই টোকাই হচ্ছে, ঝুকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত হচ্ছে. কোন কোন ক্ষেত্রে নানা অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে। শিশুদের এহেন অবস্থা থেকে রক্ষার আইন আছে, সরকারি-বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক সনদ ও প্রতিশ্রুতি আছে কিন্তু এগুলো প্রতিপালিত হচ্ছে না। জাতির কর্ণধার, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের তাই এই দিকটায় বিশেষ নজর দেয়া দরকার।
শিশু অধিকার সনদে যেসব অধিকারের কথা বলা হয়েছে সেগুলো হলো : ১. শিশুর বেঁচে থাকার অধিকার, যেমন স্বাস্থ্য সেবা, পুষ্টিকর খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ; ২. বিকাশের অধিকার, যেমন শিক্ষার অধিকার, শিশুর গড়ে ওঠার জন্য উপযুক্ত একটি জীবনযাত্রার মান ভোগের অধিকার এবং অবকাশ যাপন বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের অধিকার; ৩. সুরক্ষার অধিকার, যেমন শরণার্থী শিশু, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন শিশু, শোষণ নির্যাতন ও অবহেলার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন শিশু; ৪. অংশগ্রহণের অধিকার, যেমন শিশুদের স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার, অন্যান্যের সাথে অবাধে সম্পর্ক গড়ে তোলার অধিকার এবং তথ্য ও ধারণা চাওয়া পাওয়া ও প্রকাশের অধিকার।
খাদ্য নিরাপত্তা ও জাতীয় নজরদারি প্রকল্পের (এফএসএনএসপি) সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, এখনো শিশু পুষ্টিহীনতার উন্নয়নে বাংলাদেশের অগ্রগতি খুব ধীর। এখনো এটি উচ্চহারে অবস্থান করছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের আনুপাতিক হিসেবে এটি বরং আরো বাড়ছে। রিপোর্ট অনুযায়ী এই হার ৪৫ শতাংশে অবস্থান করছে। এটি বাংলাদেশের শিশুপুষ্টির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ৬০ শতাংশেরও বেশি পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বাস করছে।
জাতিসংঘের বিশ্ব পুষ্টি পরিস্থিতি বিষয়ক ষষ্ঠ রিপোর্ট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের ৪০.২ শিশুই অপুষ্টির শিকার। এদেশে প্রতিদিন ২৫০ জন পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু অপুষ্টিতে মৃত্যুবরণ করে। ইউসেফের তথ্য মতে, দেশে অপুষ্টির শিকার শিশুর সংখ্যা প্রায় এক কোটি।
বাংলাদেশ জনস্বাস্থ্য সেবা (বিডিএইচএস) ২০১১ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ বয়স অনুযায়ী কম ওজন সম্পন্ন, ৪১ শতাংশ খর্বকায় এবং ১৬ শতাংশ কৃশকায়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভ্রুণ থেকে পরবর্তী তিন বছর বয়সটা শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। মস্তিষ্কের ৭৫-৮০ ভাগ বিকাশ ঘটে এই সময়ের মধ্যে। তিন থেকে পাঁচ বছর বয়সে ১৫ ভাগ এবং পাঁচ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে অবশিষ্ট ৫ ভাগের বিকাশ ঘটে। অপুষ্টির শিকার শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঠিকমত হয় না।
বিদ্যমান শ্রম আইনে শিশু শ্রম নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও ব্যাপক সংখ্যক শিশু ঘরে ও বাইরে বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। এসব কাজে নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেই। সরকারের পরিসংখ্যান বিভাগের হিসাব মতে, দেশের মোট শ্রমিকের ১২ শতাংশই শিশু শ্রমিক। কম মজুরি, মাত্রাতিরিক্ত খাটুনি ও ঝুঁকিপূণ শ্রম নিয়ে উদ্বেগজনক অবস্থায় আছে আমাদের দেশের শিশুশ্রম পরিস্থিতি। শিশুরা এসব কাজে নিয়োজিত থেকে অনেক সময়ই কেবল জীবনধারণের খোরাকি পেয়ে থাকে, যা দয়া-দক্ষিণা বলেও বিবেচিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে শিশুদের কাজগুলোকে দাসতুল্য বলা হয়।
বাংলাদেশে অন্তত ৪৫ লাখ শিশু নিষিদ্ধ শিশু শ্রমে জড়িয়ে আছে। তারা হারিয়ে ফেলেছে তাদের দুরন্ত শৈশব। নিয়মিত অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে ওদের সোনালি ভবিষ্যৎ। পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার জরিপ অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে মোট ৪৫ ধরনের কাজে। এর মধ্যে ৪১ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজেই শিশুরা অংশ নিচ্ছে। গত পাঁচ বছরে দেশে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে ১০ লাখ। মোট শিশু শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৭৯ লাখ। সরকারি হিসেবে দেশে শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে শিশুশ্রমের প্রবণতা অনেক বেশি। শিশু শ্রমিকদের মধ্যে আবার ১৫ লাখ শহরে এবং ৬৪ লাখ গ্রামে কাজ করে। এদের মধ্যে ৭৩ ভাগ ছেলে এবং ২৭ ভাগ মেয়ে।
শিশুশ্রম বন্ধ করতে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী একটি শিশুকেও তার জীবন নির্বাহের জন্য কোন প্রকার শ্রমে নিয়োজিত করার কথা নয়। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পেক্ষাপটের কারণে শিশুরা শ্রমে জড়িত হয়ে থাকে। একই কারণে অভিভাবক ও মালিক উভয়েই শিশুদের শ্রমে নিয়োজিত করে। কাজেই আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমেই কেবল শিশুশ্রম নিরসন সম্ভব হবে। আর এ জন্য সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরী ।
বিবিসির এক জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশের পথশিশুদের বয়স ৩ থেকে ১৮ বছর। এদের সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। তাদের অধিকাংশই পরিবারের ভাঙনের ফলে পথশিশু হয়ে উঠেছে এবং এই শিশুরা প্রায় সবাই শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। এদের অনেকেই যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তারা পথে ঘাটে অনিরাপদ অবস্থায় থাকে। বাংলাদেশে বিরাট অংশের মধ্যে প্রায় ৬ লাখ শিশু ছিন্নমূল অর্থাৎ পথশিশু। যার মধ্যে ৫৩% ছেলে এবং ৪৭% মেয়ে। এরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে না। আবাসচ্যুত অর্থাৎ এদের বাড়িঘর নেই। অনেকের বাবা মা নেই। বিরাট অংশের এই শিশুরা রাস্তায় জীবনযাপন করতে গিয়ে নানা রকম কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলছে। কখনও কখনও নিজেকে জড়িয়ে ফেলছে নানারকম অপরাধজনক কাজেও। কেউ কেউ নেশাগ্রস্ত হচ্ছে। এদেরকে ব্যবহার করা হচ্ছে নানারকম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও।
এক জরিপে দেখা যায়, শতকরা ৮৫ জন পথশিশু কোন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা পায় না। কোন সরকারি বা বেসরকারি সাহায্য তারা পায় না। ন্যূনতম শিক্ষা কিংবা অধিকারও তারা পায় না। ফলে এই শিশুরা বড় হয়ে সমাজবিরোধী অনেক কর্মকাণ্ড করে। কিন্তু প্রত্যেক শিশুরই বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব হচ্ছে তার বেঁচে থাকা এবং বিকাশের অধিকার নিশ্চিত করে দেয়া।
ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ কেমন হবে, তার প্রধান পূর্বাভাস লুকিয়ে থাকে আজকের শিশুদের স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা, নিরাপত্তা ও মানসিক বিকাশের সূচকে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) এবং ইউনিসেফ যৌথভাবে প্রকাশ করেছে Multiple Indicator Cluster Survey (MICS) 2025 – Preliminary Report। এই রিপোর্টটি দেশে শিশুদের অবস্থা সম্পর্কে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাত্ত তুলে ধরেছে—যা আমাদের সামনে যেমন একটি বাস্তব চিত্র হাজির করেছে, তেমনি ভবিষ্যতের জন্য জরুরি সতর্কবার্তাও দিয়েছে।
শিশুদের শারীরিক স্বাস্থ্যই তাদের ভবিষ্যৎ শিক্ষাজীবন, সামাজিক বিকাশ ও মানসিক বৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলে। কিন্তু সাম্প্রতিক তথ্য শিশুস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে উদ্বেগজনক।
BBS–UNICEF রিপোর্টে দেখা গেছে—
১২–৫৯ মাস বয়সী শিশুদের ৩৮%-এর রক্তে সীসার মাত্রা নিরাপদ সীমার ওপরে। ঢাকার শিশুদের মধ্যে এই হার আরও ভয়াবহ—প্রায় ৬৫% শিশু অতিমাত্রার সীসাদূষণের শিকার। সীসা মস্তিষ্কের বিকাশে যে ক্ষতি করে, তা আর কখনো পূরণ হয় না। শিশুর শেখার ক্ষমতা কমে যায়, মনোযোগ ধরে রাখতে পারে না, আচরণগত সমস্যা বাড়ে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জ্ঞানভিত্তিক সক্ষমতা কমে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। এটি শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকি নয়—এটি একটি জাতীয় মানবসম্পদ সংকট। শিশুর wasting (তীব্র অপুষ্টি) বেড়ে হয়েছে ১২.৯%।২০১৯ সালে ছিল ৯.৮%। দারিদ্র্য, খাদ্যমূল্য বৃদ্ধি, বৈষম্য, জলবায়ু পরিবর্তন—সবকিছু মিলিয়ে শিশুপুষ্টিতে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি দেখা যাচ্ছে। অপুষ্টি শিশুদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, স্কুলে মনোযোগ নষ্ট করে, বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে বাধা দেয়। প্রতি ১,০০০ জীবিত জন্মে ২২ জন নবজাতক মারা যাচ্ছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থায় উন্নতি সত্ত্বেও নবজাতক মৃত্যুহার কমে না আসা আমাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করে।
শিশুশ্রম শুধু শিশুদের অধিকার লঙ্ঘন নয়—এটি মানবসম্পদেরও অপচয়।
৫–১৭ বছর বয়সী শিশুদের ৯.২% এখন শিশুশ্রমে যুক্ত।
২০১৯ সালের ৬.৮% থেকে এটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি।
গত চার বছরে ১২ লাখ নতুন শিশু শ্রমে যুক্ত হয়েছে। পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের মধ্যে ৫৯% জন্ম নিবন্ধিত। কিন্তু মাত্র ৪৭% তাদের হাতে বাস্তব জন্মসনদ পেয়েছে।
শারীরিক শাস্তি শিশুদের মানসিক গঠনে গভীর ক্ষত তৈরি করে। তা সত্ত্বেও—
৮৬% শিশু অন্তত একবার সহিংস বা শারীরিক শাস্তির শিকার হয়েছে।
৪৭% মেয়েশিশুর বিয়ে হয় ১৮ বছরের আগে।
যদিও ২০১৯-এ এটি ছিল ৫১.৪%, তবুও হার এখনও অত্যন্ত বেশি।
MICS 2025 রিপোর্ট আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে—বাংলাদেশে শিশুদের বড় অংশ এখনো স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা, নিরাপত্তা এবং আইনি পরিচয়ের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে। সমাজ–রাষ্ট্র–পরিবার—সবাই মিলে এখনই পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ তার সম্ভাবনা হারাতে পারে।
Wordsworth-এর ভাষায়- ‘Child is the father of a nation’. বস্তুত শিশুর মধ্যে নিহিত রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। কারণ, শিশুই একদিন বড় হয়ে দেশ ও সমাজের দায়িত্ব গ্রহণ করবে। তারা হবে দেশের আদর্শ নাগরিক। এ জন্য চাই শিশুর সযত্ন প্রতিপালন; বিকাশ সাধনের সুষ্ঠু পরিবেশ। শিশুদেরকে আদর, সোহাগ, যত্ন ও সুশিক্ষা দিয়ে বড় করে তোলার জন্য চাই অনুকূল পরিবেশ, উপযুক্ত শিক্ষা। উপযুক্ত অভিভাবক পেলে একটি শিশু আদর্শ মানুষরূপে বড় হয়ে উঠতে পারে। শিশু মন ফুলের মতো পবিত্র, সরল। সে যে পরিবেশে থাকে সে তার পারিপার্শ্বিক আচার-আচরণ অনুকরণ করে এবং তাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
যেহেতু শিশুর মধ্যে জাতির উন্নতি ও সমৃদ্ধির বীজ লুক্কায়িত থাকে, তাই শিশুর সযত্ন প্রতিপালন, সুশিক্ষা ও চরিত্র গঠনে প্রত্যেক অভিভাবককে দায়িত্ব নিতে হবে এবং এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার শতকরা ২৫ ভাগই শিশু। এটা পরম সত্য যে, শিশুরাই জাতির ভবিষ্যৎ এবং আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক। তারাই একদিন সুনাগরিক হয়ে দেশের নেতৃত্ব দেবে। তাই তারা অবহেলিত থাকলে ভবিষ্যাৎ প্রজন্ম মুখ থুবড়ে পড়বে। সুন্দর মানব-সমাজ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে শিশুকে যত্নসহকার গড়ে তুলতে হবে। আজকের শিশু আগামীর কর্ণধার।
লেখক : ফিকামলি তত্ত্বের জনক,
গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক,ওয়াইল্ডলাইফ বিশেষজ্ঞ।