1. news@dainikalokitonews.com : দৈনিক আলোকিত নিউজ : দৈনিক আলোকিত নিউজ
  2. info@www.dainikalokitonews.com : দৈনিক আলোকিত নিউজ :
বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০:০২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
আইনের শাসনের অনুপস্থিতি দেশের সার্বিক উন্নয়নকে ব্যাহত করে আজকের লকডাউন ঘিরে গাজীপুরের সার্বিক পরিস্থিতি দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে যৌন উত্তেজক ঔষুধ খেয়ে এক ব্যাক্তির মৃত্যু সংবাদ প্রকাশের পরও থামছে না কাঠ পাচার, বন বিভাগকে ম্যানেজ করেই চলছে চোরা সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য র‍্যাবের যৌথ অভিযানে হাতুড়ির আঘাতে ট্রাক ড্রাইভারের মৃত্যুর পলাতক আসামি গ্রেফতার লকডাউন ঘিরে গাজীপুরে উত্তেজনা যান চলাচল সীমিত,বাসে অগ্নিসংযোগ মাদারীপুরে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর ২৩ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত ঈশ্বরগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা এখন বিএনপির সাধারন সম্পাদক পদপ্রার্থী রাজাপুরে আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলায় মিরেরহাট স্পোর্টিং ক্লাব চ্যাম্পিন রাজবাড়ীর কালুখালীতে দুই বাসের সংঘর্ষে আহত ৫০জন

আইনের শাসনের অনুপস্থিতি দেশের সার্বিক উন্নয়নকে ব্যাহত করে

  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫
  • ০ বার পড়া হয়েছে

ড. আব্দুল ওয়াদুদ.

সামাজিক ভারসাম্য ও শৃঙ্খলা সংরক্ষণের তাগিদে আমরা আইনের শাসন তথা ন্যায়বিচার শব্দের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি। পৃথিবীর আদিকাল থেকে এক সময় যা ন্যায়বিচার বলে বিবেচনা করা হয়, তা হয়তো অন্য সময়ে একইভাবে বিবেচনা নাও হতে পারে। সে কারণে ন্যায়বিচার শব্দের আপেক্ষিকতা স্থান, কাল ও সময়ের বিবর্তনে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। গ্রীক দার্শনিক এ্যারিস্টটলের মতে, ‘যে ব্যক্তি দেশের আইন লঙ্ঘন করে অথবা তার যা প্রাপ্য তার চেয়ে বেশি গ্রহণ করে, সে অন্যায়কারী অথবা ন্যায়বিচার বিরোধী।’ উল্লিখিত গুণাবলী নিয়ে কোন মানুষ ন্যায়বিচারের ধারণা করতে পারে না। অবিচার থেকে ন্যায়বিচারের প্রয়োজন সহজে অনুভব করা যায়। আইন পদ্ধতির মৌলিক বিধি উপেক্ষা করে কোন ব্যক্তিকে তার জানমাল ও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যায় না। যে আইন পদ্ধতিতে ন্যায়পরতার ন্যূনতম প্রয়োজনীয় বিধি অনুসরণের নিশ্চয়তা থাকে না, তা থেকে নাগরিকদের অধিকার সংরক্ষিত হয় না। নির্বাহী কর্তৃপক্ষ ও আইন পরিষদের যথেচ্ছ হস্তক্ষেপ প্রতিরোধকল্পে সংবিধানে ন্যায়বিচারের বিধান করা হয়েছে।

১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর আমাদের মহান জাতীয় সংসদে অনুমোদিত বাংলাদেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে ‘আমরা আরও অঙ্গীকার করিতেছি যে, আমাদের রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে আইনের শাসনের মূল দর্শন হিসেবে প্রতিফলিত হয়েছে। এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।( All citizens are equal before law and are entitled to equal protection of law)

যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং বাংলাদেশের ন্যায় অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের সংবিধানে আইনানুগ ন্যায়বিচার মূল দর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ, আইন পরিষদ ও নিম্ন আদালতসমূহের যথেচ্ছ হস্তক্ষেপ থেকে ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং মর্যাদা রক্ষার এটাই একমাত্র রক্ষাকবচ। মানুষের জন্যই সরকার, মানুষ সরকারের জন্য নয়, এই মতবাদ থেকে আইনানুগ ন্যায়বিচার নীতি জন্মলাভ করেছে। এই নীতি অনুসারে জনগণ নির্দিষ্ট আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আগেকার দিনে রাশিয়া, চীন ও স্পেনের ন্যায় একদলীয় শাসন পদ্ধতিতে আইনানুগ ন্যায়বিচার কল্পনা করা যেত না। সামরিক শাসনেও এরূপ অবস্থার অবতারণা হয়, যা সুশাসন ও ন্যায়বিচারের দর্শনে গ্রহণযোগ্য নয়। একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য- (১) আইনের যথাযথ প্রক্রিয়া (২) আইনের শাসন (৩) আইনের বিধিবহির্ভূত কোন নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করা (৪) শুনানির সুযোগ দান ব্যতীত দণ্ড দান না করা (৫) কেউ নিজের বিচারক নিজে হতে পারে না (৬) সার্বভৌম কোন অন্যায় করতে পারে না (৭) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা আদালতের সহজাত এখতিয়ার (৮) ন্যায়পরতা ও বিচক্ষণতা (৯) পুনঃবিবেচনা (১০) দায় অব্যাহতি বিধি অনুসরণ করা হয়।

আমাদের সংবিধানে ভোটাধিকারকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মৌলিক অধিকার, যেমন
চিন্তা-বিবেক-বাক্, ধর্মীয়, চলাফেরার, সমাবেশের, সংগঠনের, পেশা-বৃত্তির, সমতা, জীবন ও ব্যক্তিস্বাধীনতা ইত্যাদি মানুষের ‘আনঅ্যালিয়েনেবল রাইটস’ (unalienable rights) বা অবিচ্ছেদ্য অধিকার, যা হরণ করা যায় না। এগুলো তাদের জন্মগত অধিকার এবং আইন দিয়ে এগুলো রহিত করা যায় না। সর্বোপরি এগুলো আদালতের মাধ্যমে বলবতযোগ্য। পক্ষান্তরে ভোটাধিকার আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত অধিকার, যা আইনের মাধ্যমে রহিতও করা যায়। অর্থাৎ মানুষের মৌলিক অধিকার অপেক্ষাকৃত উন্নতমানের অধিকার, যদিও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য ভোটাধিকারও আবশ্যক।
আইন এবং সংবিধানে মানুষের অধিকারের স্বীকৃতি থাকলেই হবে না, এগুলো বলবত করাও আবশ্যক। এজন্য অবশ্য প্রয়োজন আদালত ও নিরপেক্ষ বিচারিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে আইনের যথার্থ প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায়। আর বিচারিক আদালতের মাধ্যমে আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার সুযোগ নিশ্চিত হওয়া আইনের শাসনের অপরিহার্য অঙ্গ।
ব্যাপক অর্থে আইনের শাসনের তিনটি উপাদান রয়েছে : ১. একটি যথার্থ আইনি কাঠামো, ২. আইনের নির্মোহ প্রয়োগ এবং ৩. আইনের আশ্রয় নেওয়ার ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তির সুযোগ বা ‘একসেস টু জাস্টিস’।
আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অবশ্যই একটি আইনি কাঠামো থাকতে হবে। তবে কাঠামোটি_ যার মধ্যে সংবিধান, আইন ও সংশ্লিষ্ট বিধি-বিধান অন্তর্ভুক্ত_ কালো আইনমুক্ত হতে হবে। অর্থাৎ আইন হতে হবে জনবান্ধব ও গণমুখী। তাই আইন থাকলেই হবে না, আইনে মানুষের অধিকারের স্বীকৃতি থাকতে হবে। এ কারণে সামরিক শাসনামলে সামরিক আইন প্রয়োগ হলেও সে আইনে মানুষের অধিকার খর্ব করা হয়, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় না।
আইনের নিরপেক্ষ ও নির্মোহ প্রয়োগ না হলেও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় না।

বিচারহীনতার সংস্কৃতি বাংলাদেশের এক ভয়াবহ বাস্তবতা, যা সমাজের নৈতিক ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, সামরিক অভ্যুত্থান, দুর্নীতি ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে অপরাধীদের দায়মুক্তি দেওয়ার একটি অপ্রত্যাশিত ধারা গড়ে উঠেছে স্বাধীনতা-উত্তরকালে দেশে সংঘটিত হত্যাকান্ডগুলোর যথাযথ বিচার না হওয়াতে এদেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়। পরবর্তীতে সামরিক শাসনামলে বিচারহীনতার এই প্রবণতা আরও সুসংহত হয়, যা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুর্নীতিকে উৎসাহিত করেছে। একটি রাষ্ট্রের ন্যায়বিচার ব্যবস্থা যখন দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন সমাজে অন্যায় ও অবিচারের স্বাভাবিকীকরণ ঘটে। রোমান দার্শনিক সিসেরোর উক্তি “যেখানে ন্যায়বিচার নেই, সেখানে রাষ্ট্রের অস্তিত্বও দুর্বল হয়ে পড়ে”। স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশে সংগঠিত প্রতিটি খুন, দুর্নীতি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুন্ঠনের ক্ষেত্রে কঠোর ও নিরপেক্ষ বিচার নিশ্চিত করা উচিত ছিল, যা দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা করতে পারিনি। এই বিচারহীনতার ফলে অপরাধীরা আরও দুঃসাহসী হয়ে ওঠেছে এবং সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলার প্রতি অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। তারই অনিবার্য প্রতিফল হিসেবে সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ও ক্ষমতার অপব্যবহার বাড়তে থাকে, যা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আইনের শাসনের অনুপস্থিতির প্রভাব বহুমাত্রিক ও সুদূরপ্রসারী। এটি শুধুমাত্র একটি রাষ্ট্রীয় সমস্যা নয়; বরং সমাজের প্রতিটি স্তরে নৈরাজ্য, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসকে উসকে দেয়। যখন অপরাধীরা শাস্তি থেকে রেহাই পায়, তখন তা সমাজে আইনের প্রতি ভয় ও শ্রদ্ধাবোধ কমিয়ে দেয়, যা দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক কাঠামোকে দুর্বল করে। একটি রাষ্ট্র তখনই কার্যকর থাকে, যখন তার নাগরিকরা আইনের আশ্রয়ে নিরাপত্তা পায় এবং রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়। কিন্তু বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতির ফলে জনগণের আস্থা কমে যাচ্ছে, যা সামাজিক অস্থিরতার জন্ম দিচ্ছে। দার্শনিক জন লকের ‘সামাজিক চুক্তি’ তত্ত্ব অনুযায়ী, রাষ্ট্রের প্রধান দায়িত্ব হলো নাগরিকদের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু যখন রাষ্ট্র সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়, তখন জনগণের মধ্যে ক্ষোভ, হতাশা ও আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ফলে সমাজে নৈতিক অবক্ষয় ত্বরান্বিত হয়, যেখানে দুর্নীতিবাজ ও ক্ষমতাবানরা দায়মুক্তি পায়, আর সাধারণ জনগণ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা তখনই সম্ভব, যখন আইন সকলের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হয় এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামো ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না করতে পারলে সামগ্রিক উন্নয়ন ব্যাহত হবে এবং জনগণের মৌলিক অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়তো কখনোই সম্ভব হবে না।

বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি থেকে মুক্তির উপায় সুস্পষ্ট ও বাস্তবভিত্তিক হতে হবে। এ থেকে উত্তরণের প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা ছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। দার্শনিক মন্টেস্কিয়োর ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ তত্ত্ব অনুযায়ী, বিচার বিভাগকে নির্বাহী ও আইন বিভাগ থেকে স্বাধীন রাখতে হবে, যাতে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা যায়। প্রথমত, বিচার বিভাগকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা অপরিহার্য। যখন বিচারব্যবস্থা রাজনৈতিক প্রভাবের কাছে নতিস্বীকার করে, তখন তা প্রকৃত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়। বিচারকদের নিয়োগ, পদোন্নতি ও অবসরের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট নীতি গ্রহণ করতে হবে।
পৃথকভাবে সচিবালয়ে তৈরি করে বিচার বিভাগের জন্য পৃথক বাজেট তৈরি করতে হবে। অন্য সার্ভিসের সঙ্গে বিচার বিভাগের বেতন, সুযোগসুবিধায় যে বৈষম্য রয়েছে, তা নিরসন করতে হবে। বিচার বিভাগে কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগে স্বচ্ছতার জন্য কমিশন নিয়োগ করতে হবে।
এক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর বিচারব্যবস্থা উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। একটি কার্যকর বিচারব্যবস্থা শুধু অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করে না; এটি আইনের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনে এবং সমাজে ন্যায়বিচারের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হলে দ্রুত বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি থেকে মুক্তির পথে দেশকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অন্যতম প্রধান শর্ত হলো জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার জন্য আইনের সমান প্রয়োগ নিশ্চিত করা। একটি রাষ্ট্র তখনই গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক হয়ে ওঠে, যখন আইনের চোখে সব নাগরিক সমান হয় তথা ধনী-দরিদ্র, প্রভাবশালী-সাধারণ নির্বিশেষে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, সমাজের ধনী, প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা প্রায়শই আইনকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে, যেখানে সাধারণ জনগণ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। প্রখ্যাত গ্রীক দার্শনিক প্লেটো তার ‘রিপাবলিক’ গ্রন্থে বলেছেন ‘প্রকৃত ন্যায়বিচার তখনই প্রতিষ্ঠিত হবে, যখন দুর্বল ও শক্তিশালীরা সমান আইনি সুরক্ষা পাবে’। বাংলাদেশসহ অনেক দেশে দেখা যায়, প্রভাবশালীরা নানা উপায়ে বিচারপ্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করে পার পেয়ে যায়, যা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা। একটি কার্যকর ও স্বচ্ছ বিচারব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে আইনের প্রয়োগে শ্রেণিগত বৈষম্য দূর করতে হবে। এ জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা রাজনৈতিক চাপ বা অর্থনৈতিক লোভের কাছে নতি স্বীকার না করে।

প্রকৃতপক্ষে সুশাসন ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করলেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে একটি সুবিচারভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় মানবাধিকার ও নৈতিক শিক্ষার প্রসার অপরিহার্য। একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ তখনই গড়ে ওঠে, যখন নাগরিকরা মানবাধিকার, ন্যায়বিচার ও আইন সম্পর্কে সচেতন থাকে এবং নিজেদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে যথাযথভাবে অবগত হয়। কিন্তু বাংলাদেশসহ অনেক দেশে সাধারণ জনগণের মধ্যে আইনের শাসন ও মানবাধিকারের ধারণা এখনও পর্যাপ্তভাবে বিকশিত হয়নি, যার ফলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে।

আইনের শাসন তখনই কার্যকর হবে, যখন নাগরিকরা সচেতনতার মাধ্যমে ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানোর মানসিকতা গড়ে তুলবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোনো সমাজই শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারে না। বিচারহীনতার সংস্কৃতি রাষ্ট্রের মৌলিক ভিত্তিকে দুর্বল করে এবং দীর্ঘমেয়াদে সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টি করে। ইতিহাস আমাদের স্পষ্টভাবে শেখায় যে, যখন আইন উপেক্ষিত হয়, তখন সমাজে অন্যায়, অনাচার, অবিচার ও অব্যবস্থাপনা বিস্তার লাভ করে। রোমান সাম্রাজ্যের পতন থেকে শুরু করে ফরাসি বিপ্লব পর্যন্ত সর্বক্ষেত্রে অন্যায়, দুর্নীতি ও বিচারহীনতাই সমাজকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এমনকি আজকের বিশ্বে উন্নত দেশগুলোর সফলতার পেছনে রয়েছে আইনের কঠোর প্রয়োগ ও ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা। তাই বাংলাদেশের টেকসই শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ শুধু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই নিরাপদ হতে পারে।

লেখক :

ড. আব্দুল ওয়াদুদ

ফিকামলি তত্ত্বের জনক,
গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক,ওয়াইল্ডলাইফ বিশেষজ্ঞ।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ,কলাম,তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট