1. news@dainikalokitonews.com : দৈনিক আলোকিত নিউজ : দৈনিক আলোকিত নিউজ
  2. info@www.dainikalokitonews.com : দৈনিক আলোকিত নিউজ :
সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৩০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
যশোর-২ বিএনপির প্রার্থী সাবিরা নাজমুল মুন্নির মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ৯০ দিনের মধ্যে হাদি হত্যার বিচার সম্পন্ন হবে: আইন উপদেষ্টা ১৫ বছর পর বিশ্বের বৃহত্তম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র ফের চালু করছে জাপান লালমনির হাট সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক আহত মাদারীপুর নতুন বাসষ্ট্যান্ড থেকে ডাম ট্রাক রাতে অন্ধকারে চুরি জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের কেন্দ্রীয় আহবায়ক কমিটির সদস্য পদ পেলেন রাজাপুরের সন্তান শহিদুল ইসলাম বগুড়ায় যৌথ বাহিনীর ‘ক্র্যাকডাউন’: ইয়াবা–হেরোইনসহ ৬ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কঠোর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার মাদকবিরোধী অভিযানে গাঁজা উদ্ধার, তিনজন দণ্ডিত আলোর পথিক ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে ও বেগম রোকেয়া পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের উদ্যোগে রোকেয়া মেধাবৃত্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ

দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে -রানার-ডাক 

  • প্রকাশিত: রবিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৮৩ বার পড়া হয়েছে
ফিরোজ মাহমুদ,রংপুরঃ
আজ থেকে কয়েকশো বছর আগে, যখন দেশে টেলিফোন, টেলিগ্রাম বা ডাকবাহক ট্রেনের অস্তিত্ব ছিল না -তখনই বাংলার যোগাযোগ ব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ ছিল -রানার-বা ডাক।ইতিহাস বলে-রানার পেশার সূচনা হয়েছিল ১৭শ শতকের দিকে মোগল আমলে। তবে এটি সংগঠিত রূপে চালু হয় ১৭৬৪ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ডাক বিভাগ প্রতিষ্ঠার পর। প্রথমে এই ব্যবস্থা চালু হয় কলকাতা–ঢাকা–মুর্শিদাবাদ–চট্টগ্রাম রুটে। বাংলায় আসে ইংরেজরা যখন ভারতে তাদের প্রশাসনিক যোগাযোগ দ্রুত করতে চাইল, তখন তারা ইউরোপীয় ডাক-সিস্টেমের আদলে পায়ে হেঁটে চলা -রানার-দের নিযুক্ত করে। এই পেশাটি তখন থেকেই বাংলায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ঢাকা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ, কুমিল্লা ও রাজশাহী অঞ্চলে রানারদের পদচারণা ছিল সাধারণ দৃশ্য। একজন রানার সাধারণত কাঁধে ডাকের থলে, হাতে একটি ঘণ্টা বা বর্শা নিয়ে পায়ে হেঁটে কয়েক মাইল পথ অতিক্রম করতো।
ঘণ্টার শব্দে মানুষ বুঝতো -ডাক আসছে প্রতিটি রুটে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর “রানার পোস্ট” বা “ডাক বাংলো” থাকতো, যেখানে একজন রানার এসে চিঠি হস্তান্তর করতো পরবর্তী রানারের হাতে। এভাবেই এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে খবর পৌঁছে যেত দিনে বা রাতে, বৃষ্টি-ঝড় উপেক্ষা করে। রানারদের গুরুত্ব ঢাকায় নবাব, জমিদার ও সরকারি প্রশাসনে যোগাযোগ রক্ষার একমাত্র মাধ্যম ছিল এই রানাররা।তারা ছিলেন বিশ্বাসের প্রতীক, কারণ তাদের ওপরই নির্ভর করতো প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ চিঠিপত্র, যুদ্ধবাণী বা বাণিজ্যিক বার্তা।
 রানারদের অন্য নামও রয়েছে তাদের অনেক জায়গায় বলা হতো ডাক-বাহক,ডাক-পিয়ন, বা রানার-বালক।গ্রামীণ বাংলায় -রানার এসেছে-এই ডাক মানেই ছিল এক নতুন খবর, কখনো আনন্দ, কখনো বেদনার সংবাদ। সময়ের পরিবর্তনে রেললাইন, টেলিগ্রাফ, তারপর আধুনিক ডাক ও ডিজিটাল যোগাযোগের যুগে এই পেশাটি আজ ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে।তবুও বাংলাদেশের অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো কয়েকজন গ্রামীণ ডাকবাহক সেই পুরোনো ঐতিহ্যের ধারক।রানার ছিল শুধু একটি পেশা নয় — এটি ছিল বিশ্বাস, দায়িত্ব ও দেশের প্রাণস্পন্দনের প্রতীক।
তাদের ঘাম, ক্লান্তি আর দৃঢ় পদক্ষেপের ওপরই দাঁড়িয়েছিল বাংলার যোগাযোগের প্রাচীন ইতিহাস।বাংলাদেশের রানার  এক সময়ের অবিচল পথিক, যার ঘাম, মাটি, ক্লান্তি আর দায়িত্ববোধ মিলে গড়ে উঠেছিল যোগাযোগের প্রথম অধ্যায়। তাদের কার্যক্রম শুধু ডাক পৌঁছানো নয়, ছিল মানুষের মনের খবর পৌঁছে দেওয়া -আনন্দের চিঠি, যুদ্ধের সংবাদ, কিংবা প্রিয়জনের কান্নামিশ্রিত লেখা।ভোরের আলো ফোটার আগেই রানার বেরিয়ে পড়ত।কাঁধে ডাকের থলে, হাতে ঘণ্টা বা হ্যারিকেন, আর বর্শা – যেন সাহস ও দায়িত্বের প্রতীক।
বৃষ্টিতে ভিজে, রোদে পুড়ে, কাঁদায় পা ডুবিয়ে – তারা ছুটত মাইলের পর মাইল।প্রতিটি পথের নির্দিষ্ট দূরত্বে ছিল “ডাক বাংলো বা রানার পোস্ট।একজন রানার সেখানে এসে তার থলে খুলে দিত,পরবর্তী রানারের হাতে তুলে দিত বার্তাগুলো-এভাবেই গন্তব্যে পৌঁছাত প্রশাসনের চিঠি, ভালোবাসার খবর, বা দুঃসংবাদ।
মানুষের বিশ্বাসের প্রতীক রানার এসেছে এই ডাক শুনলেই গ্রাম জেগে উঠত।কেউ খুশিতে দৌড়ে আসত, কেউ অজান্তে চোখের জল ফেলত।রানার ছিল মানুষের কাছে খবরের দূত,
একজন অচেনা কিন্তু সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মুখ।
পথের লড়াই ও দায়িত্ব বাঘ, সাপ, ডাকাত — কিছুই তাদের থামাতে পারত না।
তারা জানত, এই চিঠির মধ্যে কারও জীবনের আশা লুকানো। তাই পা ক্লান্ত হলেও তারা থামত না কারণ তাদের বিশ্বাস ছিল-বার্তা পৌঁছাতে হবেই।একটি আবেগ, এক ঐতিহ্য
আজ সেই রানার নেই, কিন্তু তাদের গল্প রয়ে গেছে বাংলার মাটিতে। গ্রামীণ পথের ধুলোয়, পুরনো ডাক বাংলোতে,এখনও যেন ভেসে আসে সেই ঘণ্টার আওয়াজ ডাক আসছে!”
 চিঠির অপেক্ষায় এক গ্রাম রানারের পদধ্বনি যেন হৃদয়ের স্পন্দন বাংলার কোনো এক শান্ত গ্রাম দিগন্তে সূর্য ডুবছে, গরু ফিরছে মাঠ থেকে,আর গ্রামের মাটির পথ ধরে দূর থেকে ভেসে আসছে ঘণ্টার শব্দ -ডাক আসছে সেই শব্দে গ্রামের মানুষ থমকে দাঁড়ায়।
কেউ দৌড়ে আসে উঠানে, কেউ দরজায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে -রানার আসছে। প্রেমিক-প্রেমিকার অপেক্ষা তখন ফোন ছিল না, চ্যাট ছিল না,একটা চিঠিই ছিল ভালোবাসার একমাত্র সেতু।প্রেমিকা অপেক্ষা করতো।আজ হয়তো রানার আসবে, হয়তো তার খবর নিয়ে আসবে।রানার হাতে সেই কাঁপা কাগজের টুকরোটা পেতেই হাসি মিশে যেত চোখের জলে। চিঠিটা খুলে পড়ার আগে বুক ধকধক করতো,আর চিঠি শেষ হতেই ঠোঁটে চাপা হাসি।গ্রামের সাধারণ মানুষের খবরের আশায় কারও ছেলেপুলে শহরে কাজ করে,
কারও ভাই সৈন্যবাহিনীতে তাদের খবর আসে রানারের হাতে। রানারের কণ্ঠে শোনা যেত-এই নিন, ঢাকার থেকে চিঠি এসেছে।
এই ছোট্ট বাক্যটাই ছিল কত ঘরের আনন্দ, কত চোখের কান্না।ব্যবসায়ীদের ভরসা ছিল রানার বণিকেরা তাদের মালামাল পাঠাত দূর শহরে। বিক্রির খবর, দামের হিসাব, বাণিজ্যের বার্তা সবই পৌঁছাত রানারের মাধ্যমে।
রানার দৌড়ে যেত নদীর ঘাট থেকে হাটে,
হাট থেকে আবার পরের গ্রামের মহাজনের কাছে।তাদের দ্রুততা ও বিশ্বাসের ওপরই দাঁড়িয়ে ছিল বাংলার ব্যবসার পুরোনো চাকা। রানার হয়তো কোনো খবর নিজে পড়তে পারতো না,কিন্তু জানতো, এই চিঠির ভেতরে আছে কারও অপেক্ষা, কারও অশ্রু, কারও আনন্দ। তাই সে থামতো না-ঝড় হোক, বৃষ্টি হোক রাত হোক।কারণ সে জানতো,
“আমি না পৌঁছালে কারও সুখ দেরি হবে
আজ সেই রানার নেই,তবুও বাংলার গ্রামীণ পথের ধুলোয় যেন এখনো ভেসে আসে সেই ঘণ্টার ধ্বনি,যেন কেউ বলছে “ডাক আসছে…”রানার: পরিশ্রম, ত্যাগ আর দায়িত্বের অনন্য প্রতীক বৃষ্টিভেজা কাদা-পথ,অন্ধকার রাত, কোথাও বন্যা, কোথাও পাহাড়ি জনপথ তবুও থামতো না সে, বাংলার সেই অবিচল পথিক, রানার।কাজের প্রতি অবিচল বিশ্বাস
রানারের জীবন মানেই ছিল ঝুঁকির জীবন।
দিনে রোদে পুড়ে, রাতে বন্য জনপথে সাপ-গোখরোর ভয়,তবুও সে পা থামাত না। তার মনে থাকত একটাই কথা এই চিঠি শুধু চিঠি নয় হাসি কান্না সুখ দুঃখের খোরাক।
আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ,কলাম,তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট