ষ্টাফ রিপোর্টার:
পঞ্চগড়ে ভিডব্লিউবি (Vulnerable Women Benefit) কর্মসূচির আওতায় গরীব ও অসহায় মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত চাল গত আড়াই বছর ধরে নিজের ও পূত্রবধুর নামে তুলে নিচ্ছেন- এমন অভিযোগ ওঠেছে পারভীন আক্তার নামে এক নারী ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে তার ও পূত্রবধুর নামে বরাদ্দ আসা ১০ বস্তা চাল আটকে দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান। চাল গুলো বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের হেফাজতে রয়েছে।
অভিযুক্ত ওই নারী পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত আসনের মহিলা মেম্বার। তিনি একই ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের স্কুলশিক্ষক রফিজ উদ্দীনের স্ত্রী।
তথ্য মতে, পারভীন আক্তার গত আড়াই বছর ধরে নিজের ও পুত্রবধূ মায়া আক্তারের নামে ভিডব্লিউবি (Vulnerable Women Benefit) কর্মসূচির চাল উত্তোলন করে আসছিলেন। এ পর্যন্ত তিনি দুই নামে ৫৮ বস্তা চাল উত্তোলন করেছেন। একেকটি বস্তায় চাল ছিলো ৩০ কেজি করে। এর মধ্যে ১০ বস্তা চাল জব্দ রয়েছে। অর্থ্যাৎ, এই ১০ বস্তা বাদেও গত আড়াই বছরে মোট ৪৮ বস্তায় এক হাজার ৪৪০ কেজি চাল বিধিবহির্ভুতভাবে উত্তোলন করেছেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পারভীন আক্তার পূর্বে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং সেই প্রভাব দেখিয়ে উপকারভোগীর তালিকায় নিজের নাম যুক্ত করেছেন। শুধু এটাই না, এই নারী ইউপি সদস্য এসব সুবিধা দিতে উপকারভোগিদের কাছে ৫ থেকে ১০ হাজার করে টাকাও নিয়েছেন। আবার অনেকের কাছে টাকা নিয়েও এসব কর্মসূচির আওতাভুক্ত করেননি।
স্থানীয় ফরিদার রহমান বলেন, এসব চাল গরীব ও অসহায়দের জন্য হলেও মহিলা মেম্বার দায়িত্বে থেকে আত্মসাত করেছেন। তার পরিবার আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। তার স্বামী একজন স্কুলশিক্ষক এবং তার ছেলের কয়েকটি ট্রাক্টর রয়েছে। যেখানে, অনেক গরীব-অসহায়রা এসব সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য পারভীন আক্তার বলেন, তখন দলীয় সিদ্ধান্তে নিজের দুইটা নাম দিয়েছিলাম। তবে চালগুলো আমি খাইনি, এসব চাল গরীবদের মাঝে বিতরণ করে দিতাম।
হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, মহিলা মেম্বার এবং তার ছেলের বউয়ের নামে আসা ১০ বস্তা চাল আমরা জব্দ করেছি। আমরা অবগত হয়েছি, তিনি ইতোপূর্বেও চাল উত্তোলন করে নিয়েছেন। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, এসব চাল গরীব ও অসহায় উপকারভোগিদের জন্য। যদি কোন মেম্বার স্বচ্ছল হয়েও এসব সুবিধা গ্রহণ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই ঘটনায় ইউনিয়নজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বলেছেন, যদি জনপ্রতিনিধিরাই গরীবের চাল আত্মসাৎ করেন, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে? এই ধরনের দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধে প্রশাসনের তৎপরতা আরও জোরদার করা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন তারা।