
কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে ঢাকা-২ ও ঢাকা-৩ সংসদীয় আসনে রাজনৈতিক উত্তাপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। দুই আসনে মোট সর্বমোট ১৫ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা-২ আসনে ৩ জন, এবং ঢাকা-৩ আসনে ১২ জন। সংখ্যার বিচারে ঢাকা-৩ আসনকে বলা যেতে পারে বহুপক্ষীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতার কেন্দ্র।
ঢাকা-২: সীমিত প্রতিযোগিতা
ঢাকা-২ আসনে মনোনয়ন দাখিল তুলনামূলকভাবে সীমিত হলেও রাজনৈতিক গুরুত্ব কম নয়। সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুর দুইটার দিকে বিএনপির প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য আমান উল্লাহ আমান রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম-এর কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
এর আগে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাওলানা জহিরুল ইসলাম মনোনয়ন জমা দেন। শেষ মুহূর্তে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে কর্নেল (অব.) আব্দুল হক মনোনয়নপত্র দাখিল করলে ঢাকা-২ আসনে তিন প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা চূড়ান্ত হয়।রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ঢাকা-২ আসনের প্রতিযোগিতা তুলনামূলকভাবে সরল কাঠামোর। এখানে মূলত কয়েকটি দলের মধ্যে সরাসরি ভোট লড়াই তৈরি হবে, তবে জোট ও ভোট ভাগাভাগির প্রভাব লক্ষ্যণীয় হতে পারে।
ঢাকা-৩: গয়েশ্বরের আসনে প্রার্থীর হিড়িক
ঢাকা-৩ আসনে মনোনয়ন দাখিলের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এই আসনে প্রার্থী হওয়ায় শেষ দিন পর্যন্ত প্রার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।বেলা তিনটার দিকে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওমর ফারুক-এর কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। তার বিপরীতে একই আসনে ১২ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেছেন—যার মধ্যে রয়েছেন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র উভয় ধরনের প্রার্থী।
ঢাকা-৩ আসনে দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন—
জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অধ্যক্ষ শাহীনুর ইসলাম
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী সুলতান আহমেদ খান,গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী সাজ্জাদ আল ইসলাম,বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মোহাম্মদ জাফর, গণসংহতি আন্দোলনের প্রার্থী বাচ্চু ভুঁইয়া।স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন—বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নাজিমউদ্দিন মাস্টার,যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি রেজাউল কবির পল, ঢাকা জেলা (দক্ষিণ) ছাত্রদলের সভাপতি পাভেল মোল্লার মা পারুল মোল্লা, সাবেক ছাত্রদল নেতা মনির হোসেন ও বেলাল হোসেন।মনোনয়নপত্র কিনলেও শেষ পর্যন্ত জমা দেন নি ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও গয়েশ্বর পুত্রবধু নিপুণ রায় এবং দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ
প্রতীক ও রাজনৈতিক সমীকরণ
ঢাকা-২ ও ঢাকা-৩—উভয় আসনেই ধানের শীষ, দাড়িপাল্লা ও হাতপাখা প্রতীকের একজন করে প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এতে বোঝা যায় প্রধান রাজনৈতিক শক্তি ছাড়াও ধর্মভিত্তিক দল ও বিকল্প ধারার সংগঠনগুলোর সক্রিয়তা। একই সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উপস্থিতি নির্বাচনী সমীকরণকে জটিল ও বহুমাত্রিক করে তুলেছে।
ঢাকা-২ আসনে প্রতিযোগিতা সীমিত ও সরল কাঠামোর হলেও ঢাকা-৩ আসনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিপরীতে একাধিক রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর উপস্থিতি ভোটের হিসাবকে বহুমাত্রিক করেছে। ভোট বিভাজন, ব্যক্তিগত প্রভাব ও স্থানীয় সমীকরণ ফল নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, মনোনয়ন যাচাই-বাছাই ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পরই প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বিতার চূড়ান্ত চিত্র স্পষ্ট হবে। তখন বোঝা যাবে—বহুপক্ষীয় উপস্থিতি শেষ পর্যন্ত শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করবে, নাকি ভোটের মাঠে নতুন সমীকরণ রচনা করবে।