1. news@dainikalokitonews.com : দৈনিক আলোকিত নিউজ : দৈনিক আলোকিত নিউজ
  2. info@www.dainikalokitonews.com : দৈনিক আলোকিত নিউজ :
মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৮:৫৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ডিএনসি বগুড়ার মাসিক সমন্বয় সভা: নতুন স্বাগত, বিদায় ও পারফরম্যান্স পুরস্কার ভারতে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনে হামলার ঘটনায় ঢাকার তীব্র নিন্দা ভূঞাপুর প্রেসক্লাবের নির্বাচন সম্পন্ন সভাপতি রাজ্জাক,কামাল সম্পাদক উত্তরের হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে ডোমার, দিনেও জ্বালাতে হচ্ছে যানবাহনের হেডলাইট ঈশ্বরগঞ্জে পর্নোগ্রাফি মামলায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে তিনজন আটক নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা চায় পুলিশ সরাইলে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে অনিয়ম,কাজ বন্ধের নির্দেশ ইউএনও রাজশাহীতে আলু চাষিরা সারের তীব্র সংকটে: ফসলের ভাগ্য অনিশ্চিত বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতিকে সংবর্ধনা সিংগাইরে গাঁজাসহ মাদক কারবারি গ্রেফতার

রাজশাহীতে আলু চাষিরা সারের তীব্র সংকটে: ফসলের ভাগ্য অনিশ্চিত

  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ৫ বার পড়া হয়েছে

নাহিদ ইসলাম,রাজশাহী ব্যুরো:

গত বছরের আলু চাষে বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছিলেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার দেউলিয়া গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান। ক্ষতি পূরণে আশায় এবারও আলু রোপণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। কিন্তু এবার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে রাসায়নিক সারের অভাব। স্থানীয় অনুমোদিত ডিলার পয়েন্টে সার পাওয়ার জন্য বিক্ষোভ করলেও চাহিদামত সার পাওয়া যাচ্ছে না। যার কারণে আলু রোপণ কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে।

হাবিবুর রহমান একাই নয়, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার হাজার হাজার কৃষকও আলু চাষের মৌসুম শুরুতেই সার সংকটের শিকার। কৃষকরা অভিযোগ করছেন, কিছু মুনাফালোভী ডিলার রাতের অন্ধকারে সরকারি বরাদ্দ সার কালোবাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি করছেন। এর ফলে ডিলার পয়েন্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও কৃষকরা প্রয়োজনীয় সার পাচ্ছেন না। অন্যদিকে, কোথাও সার মিললেও এক কৃষককে এক বা দুই বস্তার বেশি দেওয়া হচ্ছে না, যা আলু এবং শীতকালীন সবজি চাষের জন্য যথেষ্ট নয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে মোট আলু উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ টন। এর মধ্যে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে প্রায় ৮৭ লাখ টন উৎপাদন হয়েছে। চলতি মৌসুমে এই দুই বিভাগে ৩ লাখ ৪৩ হাজার হেক্টর জমিতে প্রায় ৮৪ লাখ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

কৃষকদের হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বিঘা জমিতে আলু চাষের জন্য প্রয়োজন প্রায় ২ বস্তা (১০০ কেজি) এমওপি, ১ বস্তা (৫০ কেজি) ডিএপি এবং ১ বস্তা টিএসপি। কিন্তু কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বরাদ্দ দিচ্ছে বিঘাপ্রতি মাত্র ২৩.১৫ কেজি এমওপি, ৩৬ কেজি ডিএপি ও ১.৩ কেজি টিএসপি, যা বাস্তব চাহিদার তুলনায় অনেক কম।

রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত নভেম্বর মাসে রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এমওপি ১৪,৫৫১ টন, ডিএপি ২৫,২৮১ টন এবং টিএসপি ৯,৫৭০ টন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চলতি ডিসেম্বর চার জেলায় বরাদ্দ দেওয়া হবে ১৫,৩৮০ টন এমওপি, ২৯,৪৫০ টন ডিএপি এবং ৯,৪৬৬ টন টিএসপি।

রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) অনুমোদিত ডিলার পয়েন্টের সামনে সকাল থেকে কৃষকদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।

বাগমারা উপজেলার একটি ডিলার পয়েন্টে দাঁড়িয়ে হাবিবুর রহমান জানান, “আমার অন্তত ১৮ বস্তা সার দরকার। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়েছি, এখনও একটি বস্তাও পাইনি। সামনে কয়েকশ মানুষ অপেক্ষায় রয়েছেন।”

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায়ও একই অবস্থা। কৃষক নাইম ইসলাম বলেন, “৫০ বস্তা সার দরকার, কিন্তু ডিলাররা এক বা দুই বস্তা বেশি দিচ্ছেন না। এতে সময় নষ্ট হচ্ছে এবং জমিতে সঠিক মাত্রায় সার দেওয়া যাচ্ছে না।”

বাগমারা উপজেলার বিএডিসি ডিলার হাফিজুর রহমান জানান, “আমার তিন ট্রাক সার পাওয়ার কথা, কিন্তু মাসের শুরুতে মাত্র এক ট্রাক মিলেছে। ফলে কৃষক পাঁচ বস্তা চাইলে দিতে পারি এক বস্তা। সার কম পাওয়ায় পরদিন আবার সবাই আসে, তখন চাপ আরও বাড়ে।”

সঙ্কটের কারণে অনেক কৃষক বিকল্প উৎস থেকে অতিরিক্ত দামে সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। তানোর উপজেলার কৃষক লুৎফর রহমান অভিযোগ করেন, সরকারি দামে সার না পেয়ে তিনি বাইরের বাজার থেকে টিএসপি ও ডিএপি প্রতি বস্তা ১,৭০০ টাকা এবং এমওপি ১,৩৫০ টাকায় কিনে আলু রোপণ করেছেন। যেখানে সরকারি দাম যথাক্রমে এমওপি ১,০০০, ডিএপি ১,০৫০ এবং টিএসপি ১,৩৫০ টাকা।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাজাহার গ্রামের কৃষক সাকিউল ইসলাম বলেন, তাদের এলাকায় হাট-বাজারে টিএসপি ১,৯৭০ টাকা, ডিএপি ১,৪৭০ টাকা এবং এমওপি ১,১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া অনেক বিক্রেতাই কোনো রসিদ দিচ্ছেন না।

সঙ্কটের কারণে অনেক কৃষক বাধ্য হয়ে কম পরিমাণ সার দিয়ে আলু রোপণ করছেন, ফলে ফলন নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আলু চাষের শুরুতেই সঠিক মাত্রায় সার না দিলে গাছের প্রাথমিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং পুরো মৌসুমের ফলনে প্রভাব পড়ে।

তানোর উপজেলার কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, “যতটা সার দেওয়ার কথা, তার চেয়ে কম দিয়ে বীজ লাগাতে হয়েছে। এতে ফলন কম হবে এটা নিশ্চিত।”

কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অনুমোদিত দোকান বা গুদামে না রেখে বাড়ি ও গোপন স্থানে সার মজুত করছেন। এছাড়া মাছচাষিরা পুকুরে ইউরিয়া ব্যবহার করায় কৃষি খাতে সারের সংকট আরও বাড়ছে।

সম্প্রতি বাগমারায় উপজেলা কৃষি অফিস ও পুলিশের যৌথ অভিযানে এক স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতার বাড়ি থেকে ৪৪৪ বস্তা অবৈধভাবে মজুত করা সার জব্দ করা হয়েছে। পরে তা সরকারি দামে কৃষকদের মধ্যে বিক্রি করা হয়েছে।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সাবিনা বেগম বলেন, “সারের তেমন কোনো সংকট নেই। অনেক কৃষক প্রয়োজনের চেয়ে তিন থেকে চার গুণ বেশি সার ব্যবহার করছেন। যেখানে জমিতে ৩০-৩৫ কেজি সার প্রয়োজন, সেখানে অনেকে ১০০ কেজি পর্যন্ত ব্যবহার করছেন।”

তিনি আরও জানান, “ডিএপি সারে ফসফেট উপাদান থাকায় অনেক ক্ষেত্রে আলাদা করে টিএসপি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবুও কৃষকরা ডিএপি ও এমওপি একসঙ্গে ব্যবহার করছেন।”

সাবিনা বেগম জানান, কৃষকদের সচেতন করতে মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণ, প্রদর্শনী ও লিফলেট বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, “কিছু এলাকায় টিএসপি ১,৭০০ থেকে ১,৯০০ টাকায় বিক্রির অভিযোগ এসেছে, যা আইনবিরোধী। কৃষকরা অবশ্যই ক্যাশ মেমো নিতে হবে। এতে অতিরিক্ত দাম নেওয়া আটকানো সম্ভব।”

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ,কলাম,তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট