ড. আব্দুল ওয়াদুদঃ
আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস বা বিশ্ব শান্তি দিবস হলো জাতিসংঘ ঘোষিত একটি দিবস। বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঘোষিত দিবসটির উদ্দেশ্য হলো পৃথিবী থেকে যুদ্ধ ও সংঘাত চিরতরে নিরসন এবং সেই লক্ষ্যে পৃথিবীর যুদ্ধরত অঞ্চলসমূহে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের মাধ্যমে সেসব অঞ্চলে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া। ১৯৮১ সালে দিবসটি সর্বপ্রথম উদযাপিত হয়। বর্তমানে জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্র, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক দলের সদস্য এবং বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণ যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করে থাকে।
প্রতি বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে ‘শান্তির ঘণ্টা’ বাজানো ও বিশেষ বাণী প্রদানের মধ্য দিয়ে দিবসটির উদযাপনের সূচনা হয়। জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এই দিনে বিশেষ আয়োজন করে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন দেশের শিল্পী, শিক্ষাবিদ ও মানবতাবাদীদের ‘জাতিসংঘ শান্তিদূত’ হিসেবে নিয়োগ করা হয় ও তাদের কর্মকাণ্ড স্মরণ হয়ে থাকে।
১৯৮১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে একটি যুদ্ধবিহীন বিশ্ব প্রতিষ্ঠার যুক্তরাজ্য ও কোস্টারিকার একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের গৃহীত প্রস্তাব নম্বর ৩৬/৬৭ অনুসারে প্রতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় মঙ্গলবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরু হওয়ার দিনটিকে “যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই” স্লোগানে “আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস” হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। পরবর্তীতে, ২০০১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের গৃহীত প্রস্তাব নম্বর ৫৫/২৮২ অনুসারে ২০০২ সাল থেকে প্রতিবছরের ২১ সেপ্টেম্বর তারিখে “আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস” হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক শান্তি দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বিশ্বের প্রতি আহ্বান— Act Now for a Peaceful World রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ তথ্য কেন্দ্র ঢাকা থেকে জাতিসংঘ মহাসচিবের একটি লিখিত বার্তা প্রদান করেন। বার্তায় বলা হয়েছে, আমাদের পৃথিবী আজ যুদ্ধ ও সংঘাতে বিদীর্ণ। লাখো পরিবার ঘরবাড়ি হারাচ্ছে, শিশুদের শৈশব নিশ্চিহ্ন হচ্ছে, আর মানবিক মর্যাদা প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ হচ্ছে, আর রেকর্ডসংখ্যক মানুষ শরণার্থী হতে বাধ্য হচ্ছে। মহাসচিবের মতে, “তারা শুধু শান্তি চায়। শান্তি সবার দায়িত্ব। যুদ্ধের প্রভাব শুধু সংঘাতপীড়িত অঞ্চলে নয়, বরং পুরো বিশ্বেই ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি আরও বলেন, বন্দুক থামাতে হবে, দুর্ভোগের অবসান ঘটাতে হবে, বিভাজন মুছে ফেলে সেতুবন্ধন গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে হবে, কারণ যেসব দেশে উন্নয়ন সবচেয়ে পিছিয়ে আছে, তাদের মধ্যে নয়টিই বর্তমানে সংঘাতের শিকার। শান্তির পথে এগোতে হলে বর্ণবাদ, অমানবিকীকরণ ও ভ্রান্ত তথ্যের প্রচার দমন জরুরি—যা সংঘাতকে উসকে দেয়। পরিবর্তে, আমাদের উচিত শ্রদ্ধার ভাষা বলা, সহমর্মিতা দেখানো এবং ইতিবাচক প্রভাব ব্যবহার করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।
বার্তায় আরও বলা হয়, যেখানে শান্তি আছে, সেখানে পরিবার একত্রিত হয়, সমাজ পুনর্গঠিত হয়, শিশুরা শেখে ও খেলাধুলা করে। তাই শান্তি বিলম্ব সহ্য করে না—শুরু করতে হবে এখনই।
দিবসটির সূচনালগ্নে এই সুবিশাল বসুন্ধরার কোণে কোণে নিপীড়িত ও নির্যাতিত জাতিরা একটি সবুজ স্বপ্ন দেখেছিল, সোনালি আশায় বুক বেঁধেছিল যে, আজ থেকে পৃথিবীর বুক থেকে চিরকালের জন্য বিদায় নিতে চলেছে অন্যায়-অবিচার, মিটতে চলেছে ধর্ম আর বর্ণের বিদ্বেষ, ঘুচে যাবে ধনী-গরিবের ব্যবধান, মুছে যাবে ক্ষমতার দাম্ভিকতা আর আধিপত্যবাদের দাপট, থেমে যাবে সংঘাত আর হানাহানি, ভুলে যাবে যুদ্ধ-বিদ্রোহ, তালা পড়বে অস্ত্র উত্পাদনকারী সংস্থাগুলোতে। এর পরিবর্তে শান্তির অজস্র ধারা প্রবাহিত হবে, বহু কাঙ্ক্ষিত সুখ-শান্তিতে পৃথিবী ভরপুর হয়ে উঠবে, প্রতিষ্ঠিত হবে বহুপ্রত্যাশিত শান্তি ও সম্প্রীতি, স্থাপিত হবে বিভিন্ন জাতি-ধর্মের মানুষের মধ্যে হৃদ্যতা ও সৌহার্দ, গড়ে ওঠবে একটি নিরাপদ, সংঘাতমুক্ত ও শান্তিপূর্ণ প্রথিবী। অথচ আজকের পৃথিবী সংঘাত ও অশান্তিতে পরিপূর্ণ। উত্পীড়িতের ক্রন্দন-রোলে ভারাক্রান্ত হচ্ছে আকাশ-বাতাস। মা ও শিশুদের আর্তনাদে ফেটে যাচ্ছে পৃথিবীর বুক। বিশেষ করে ফিলিস্তিন, সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশে অশান্তির উত্তাল তরঙ্গ শান্তির স্বপ্নকে ভেঙেচুরে চুরমার করে দিয়েছে। সেখানে শান্তি একটা দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কী হতে পারে?
আজকের বিশ্বে যেখানে দ্বন্দ্ব এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য জটিল উপায়ে আচ্ছাদিত করে আছে, সেখানে শান্তির অন্বেষণ কেবল একটি নৈতিক বাধ্যতামূলক নয় বরং টেকসই উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য শর্ত। শান্তি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন শুধু পারস্পরিক সম্পর্কিতই নয়, এ দুটি একে-অপরকে শক্তিশালী করে। শান্তি স্থিতিশীল অর্থনীতি গড়ে তোলে, যেখানে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা সামাজিক অস্থিরতাকে উস্কে দেয়।
এটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সহিংসতা ও যুদ্ধের বিপরীতে বৈশ্বিক সম্প্রীতির চিন্তাকে প্রতিফলিত করে।
শান্তি–এ ধারণাটি ততক্ষণ পর্যন্ত বিমূর্তই থেকে যাবে, যতক্ষণ না এটি একটি সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অনুশীলনে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে, যেখানে সমাজের প্রতিটি স্তর এতে যুক্ত থাকবে। শান্তির ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত করতে ছোটবেলা থেকেই এ নিয়ে নৈতিক আলোচনা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার মূল্যবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। এসব আদর্শ প্রজন্ম ও ভৌগোলিক সীমানা জুড়ে বিস্তৃত হতে হবে। শান্তির এ সাংস্কৃতিক বিস্তৃতির মাধ্যমে আমরা এমন একটি বিশ্ব গড়ে তোলার আশা করতে পারি, যেখানে সংঘাত সহিংসতার মাধ্যমে নয়, আলোচনা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হবে।
মানবসভ্যতা সততা, উন্নতি ও সামাজিক সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হতে গিয়ে প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক আদর্শগুলো অতীত চুক্তির মাধ্যমে মানবজাতির অগ্রগতি এবং সামাজিক সমন্বয়ের দিকে এগিয়ে যেতে চেষ্টা করে। যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই এই নীতিমূলক ধারণাটি আমাদের মানবিক ও সামাজিক প্রগতির দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে। যুদ্ধের ফলাফল অত্যধিক নাশক হয় এবং এটি সমাজ এবং অব্যবস্থা উৎপন্ন করে। যুদ্ধের মাধ্যমে জীবনস্তর হানি, সংসারের ভাঙন, অর্থনৈতিক মন্দা এবং সামাজিক নৈরাজ্য উৎপন্ন হয়। মানবজাতির ইতিহাস পৃথিবীর মুখোমুখি যুদ্ধ ও সংঘর্ষের সাক্ষী হয়ে আসে। শতকের পর শতক ধরে মানবসমাজ বিভিন্ন কারণে যুদ্ধের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেছে। সহযোগিতার ওপর ভিত্তি করে, আমরা যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই এমন একটি আদর্শমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারি যা আমাদের পৃথিবীকে আরও শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ এবং উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে। মানবজগৎ ইতিবাচক চুক্তি স্বাগত জানায়, যুদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান নয়। এটি শুধু বহিষ্কারের একটি উপায় নয় বরং এটি সমস্যার আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি করে। যুদ্ধের সঙ্গে আসা নিরাপত্তা অস্ত্রাগার এবং সহযোগিতা সংস্থাসহ বৈশিষ্ট্যপূর্ণ চেষ্টাগুলো স্থাপনে ব্যর্থ হয়েছে। তাছাড়া, যুদ্ধের ফল হতে পারে অমূল্য মানবজীবনের হানি, অর্থনৈতিক ক্ষতি, সামাজিক সংঘাত ও বিশৃঙ্খলা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশের ধ্বংসাত্মক প্রভাবের প্রস্তাবনা। এখানে নিরাপত্তা, ন্যায় এবং মানব অধিকারের মূল্যায়ন অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ। সমাজের প্রতিটি সদস্যের জীবন এবং মৌলিক অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা ও জাগরূকতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। ন্যায়-বিচারের স্বাধীনতা, সমতা এবং মানবিক মূল্যায়নের মৌলিক আইন। এটি একটি শান্ত সমাজ এবং স্থিতিস্থাপনের জন্য শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। রাজনীতিতে একটি শান্তির ভাবনা ও প্রয়োজনীয় যোগাযোগ বৃদ্ধি প্রয়োজন। দেশের অংশীদারগুলো এবং আন্তঃদেশীয় সম্পর্কের মাধ্যমে সমস্ত বিষয়ে আলোচনা এবং সমঝোতা সম্ভব। এটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উন্নতি এবং সম্প্রদায় বিচয়নে সাহায্য করতে পারে। বৃদ্ধি এবং অগ্রসর হতে গিয়ে এই যুগে, প্রয়োজন সকলের এক সাথে কাজ করার এবং সামাজিক ন্যায়ের মাধ্যমে একটি বেশি উন্নত ও সমৃদ্ধ বিশ্ব নির্মাণ করার। এটি শিক্ষা, সৃষ্টি এবং প্রগতির মাধ্যমে সম্প্রদায় এবং রাষ্ট্রের বিকাশ নিশ্চিত করতে সাহায্য করতে পারে। এই প্রস্তাবনা নিয়ে, আমরা যুদ্ধ নীতি এবং সামাজিক শক্তির প্রতি আমাদের নম্র অনুরোধ জানাই, যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানাই এবং শান্তি এবং সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা সম্প্রদায়, রাষ্ট্র এবং বিশ্বে উন্নতি ও সামাজিক ন্যায় নিশ্চিত করার সমর্থন জানাই। আমরা একটি শান্তিপূর্ণ এবং উন্নত বিশ্বের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি এবং এটি করার জন্য আমরা সবাই একসাথে কাজ করতে প্রস্তুত।
আমরা যদি যুদ্ধের অতীত ইতিহাস দেখি তবে সেখানে দেখি কোনো যুদ্ধই মানবসভ্যতার জন্য কল্যাণকর ছিল না। প্রতিটি যুদ্ধ এবং যুদ্ধের পরবর্তী অবস্থা ছিল খুবই ভয়বহ উদ্বেগজনক। যুদ্ধ কখনো সভ্যতার ইতিবাচক বা সৃজনশীল পরিবর্তন আনতে পারে না, যার কারণে আমরা কোনোভাবেই যুদ্ধকে সমর্থন করতে পারি না কিংবা করি না। যুদ্ধের মধ্যে আছে শুধু ধ্বংস আর ধ্বংস এবং সাম্রাজ্যবাদীদের আধিপত্য বিস্তার। যুদ্ধ ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ধ্বংস করে। যারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা বলে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তুলেছেন সেই তারাই আজ অস্ত্র ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখার জন্য দেশে দেশে যুদ্ধ বাঁধিয়ে রেখেছেন। মানবসভ্যতার ইতিহাসে শান্তির অত্যাধিক মূল্যাংকন হয়েছে, যা জীবনের অমূল্য একটি উপহার। যুদ্ধের উৎস সদা অসন্তোষ এবং দ্বন্দ্বতাত্ত্বিক ধারণা থেকে আসে; কিন্তু শান্তি না হলে মানবসমাজের উন্নতি এবং সমর্থন সম্পন্ন হতে পারে না। শান্তির সাধারণ প্রতীক হলো একাত্মতা, সহযোগিতা, মৌলিক অধিকার এবং সমঝোতা। এটি একটি সৃজনশীল পরিস্থিতি তৈরি করে, যা যুদ্ধের ধারণার বিপরীত। যুদ্ধ ব্যক্তিগত এবং সামাজিক নরকে প্রদর্শন করে, যেখানে বিপক্ষের নিমিত্তে ব্যক্তিগত প্রতিবন্ধী হওয়া যায়। অবশ্য, এটি ব্যক্তিগত অধিকার এবং ন্যায়পরায়ণ সমাজের মূল সৌন্দর্যেরও সর্বনাশ করতে পারে।
শান্তি মানবসমাজের একটি মৌলিক অধিকার এবং জীবনের একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ। শান্তির গুরুত্ব অপরিসীম। এটি একটি সুস্থ, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য প্রাধান্যমূলক শর্ত। শান্তি একটি দেশের অগ্রগতি এবং বৃদ্ধির সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শান্তির মাধ্যমে ভূখন্ডে সহযোগিতা ও সহমর্মিত সম্পর্ক উন্নয়ন করা যায়, যা আবারও যুদ্ধের পথে অগ্রসর হওয়ার প্রেক্ষিপ্ত অবস্থা তৈরি করতে পারে। সকল সুযোগ এবং সম্ভাবনা নিয়ে আমরা শান্তি ও উন্নতির দিকে মনোনিবেশ করতে এবং আমাদের পৃথিবীকে একটি স্থায়ী শান্তিপূর্ণ ও সম্প্রীতিপূর্ণ সমাজ সৃষ্টি করতে পারি। যদি আমরা সবাই এক সাথে এই লক্ষ্যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হই তাহলে
‘যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই’ সম্ভব হতে পারে এবং আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ তৈরি করতে সাহায্য করতে পারি। শান্তি বিকল্পের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, যা সমাজ ও জীবনে বিকাশ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করে। শান্তির সাহায্যেই বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতা, বাণিজ্যিক পরিষ্কারতা, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি, সাহিত্য এবং শিল্পের আদান-প্রদান সম্ভব হয়। এটি সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংজ্ঞায়ন তৈরি করে এবং একটি শক্তিশালী এবং প্রগতিশীল সমাজের আধার তৈরি করে।
শান্তি নিয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পুনর্নির্মাণ করা প্রয়োজন, যেহেতু আমাদের বর্তমান পৃথিবী ভিন্নভিন্ন নিত্যনতুন বহুমাত্রিক সমস্যার মুখে সম্প্রীতি সৃষ্টিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যুদ্ধ, বিনামূল্যে জীবন গুজবের মাধ্যম হিসেবে অবশ্যই গভীর ও জটিল সমস্যা সৃষ্টি করে এবং তা সমাধানের পথে অনেকটা বাধা তৈরি করে। এই বাধাগুলো নিম্নলিখিত উন্নতির জন্য অপসারণ করতে হবে। বাণিজ্যিক সম্পর্ক এবং আর্থ-সামাজিক বিকাশের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মধ্যে শান্তি স্থাপন করা সম্ভব। শিক্ষা একটি প্রতিষ্ঠানিক মাধ্যম সৃষ্টি করে যা মানবিক সম্পদ ও বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিশ্বসাম্য এবং আদান-প্রদান সৃষ্টি করে এবং এটি বৃদ্ধি করার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে পারি। শান্তির সংরক্ষণ ও যুদ্ধ এবং সংঘর্ষের প্রতিরোধ করার জন্য সবাই এক সাথে কাজ করতে হবে। আমরা সকল স্তরে শান্তির মূল উপাদানগুলো প্রতিষ্ঠা করতে পারি- রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে সহযোগিতা, বৈশিষ্ট্য ও ধর্ম বৈষম্যের পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠা করতে পারি এবং শিক্ষা, সংস্কৃতি ও মানবিক মূল্যানুসারে সমাজ নির্মাণ করতে পারি। মানবসভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে মানবিক সমাজ, রাষ্ট্র, পৃথিবী গড়ে তুলতে হলে সৃজনশীল চিন্তা ও উন্নত পৃথিবীর জন্য যুদ্ধ বন্ধের বিকল্প নেই। যুদ্ধ মানুষের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি করে, ভোগবাদী, দখলদারিত্ব, চরম আত্মকেন্দ্রিকতার চিন্তাকে জাগিয়ে তোলে। ফলে মানুষ দ্বন্দ্ব, সংঘর্ষ, খুন, হত্যার মতো কাজে নিজেকে জড়িয়ে একটা অমানবিক সমাজ গঠনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের এই ভয়াবহতা থেকে পৃথিবীকে বাঁচানো জরুরি হয়ে পড়েছে। যুদ্ধের এই ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেতে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোকে অস্ত্র বিরতির সকল শর্ত মানতে হবে এবং সেই সাথে সকল প্রকার অস্ত্র উৎপাদন বন্ধ করতে হবে। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো তাদের অস্ত্র ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে, এই ব্যবসার প্রসার ঘটাতে দেশে দেশে এবং দেশের অভ্যন্তরে নানা কৌশলে যুদ্ধ বাঁধিয়ে রেখেছে। পৃথিবীর পরাশক্তি দেশগুলো প্রতি বছর সামরিক খাতে যে পরিমাণ ব্যয় করে যদি এক বছর এই ব্যয় সংকোচন করে তবে সেই পরিমাণ অর্থ দিয়ে গোটা পৃথিবীর মানুষের খাদ্য ও শিক্ষার নিশ্চয়তা করা সম্ভব হতো। আজকের পৃথিবীর জন্য অস্ত্রের প্রয়োজন নয়, প্রয়োজন মানবিক শক্তি, ঔদার্যপূর্ণ শিক্ষা, সহানুভূতিপূর্ণ মূল্যবোধ ও পারস্পরিক সম্প্রীতি। শান্তির শ্বেতকপোতের কলতানে মুখরিত হোক বসুন্ধরার আকাশ।
লেখক: ফিকামলি তত্ত্বের জনক, শিক্ষাবিদ, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
ওয়াইল্ডলাইফ বিশেষজ্ঞ।