আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি জানিয়েছেন, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল ঠেকাতে ইউরোপীয় দেশগুলোর কাছে একটি ‘ন্যায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ’ পরমাণু কর্মসূচির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) তেহরান থেকে এক্স-এ (পূর্বের টুইটার) পোস্টে আরাকচি বলেন, ইরান একটি ‘সৃজনশীল, ন্যায্য ও ভারসাম্যপূর্ণ প্রস্তাব’ দিয়েছে, যা প্রকৃত উদ্বেগ দূর করবে এবং উভয় পক্ষের জন্য সুফল বয়ে আনবে। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ই-থ্রি নামে পরিচিত ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানিকে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
আরাকচি আরও বলেন, ‘এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন হলে দ্রুত সংকট নিরসন সম্ভব হবে। তবে এর দায়ভার কেবল ইরানের ওপর চাপানো যায় না।’
শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ঘিরে কঠোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের বিষয়ে ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ইরানের কাছে প্রয়োজনীয় নয়টি ভোট নেই। ফলে মাসের শেষ নাগাদ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।
ই-থ্রি দেশগুলো ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি (জেসিপিওএ)-এর স্বাক্ষরকারী। ওই চুক্তির আওতায় ইরান পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করলে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল। মূল লক্ষ্য ছিল ইরানকে পরমাণু অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখা। তবে পশ্চিমা শক্তি ও ইসরাইলের অভিযোগ, ইরান গোপনে পরমাণু অস্ত্রের পথে এগিয়েছে—যা ইরান সবসময় অস্বীকার করেছে।
২০১৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একতরফাভাবে চুক্তি থেকে সরে গিয়ে ইরানের ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। এর পর থেকে চুক্তিটি কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে। ২০১৯ সালে ইরানও পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় নিজস্ব অঙ্গীকার শিথিল করে, জাতিসংঘ পরমাণু সংস্থার পরিদর্শনেও সীমাবদ্ধতা আরোপ করে।
গত জুনে ইসরাইল ইরানের পরমাণু ও সামরিক স্থাপনায় নজিরবিহীন হামলা চালায়। এতে এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হন, যাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীরাও ছিলেন। এর জবাবে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়, যাতে ইসরাইলেও প্রাণহানি ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রও সাময়িকভাবে ইসরাইলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ইরানে হামলা চালায়। ১২ দিনব্যাপী এই সংঘাত শেষে যুদ্ধবিরতি হয়।
সম্প্রতি ইরান জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর সঙ্গে নতুন কাঠামোয় সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে। আইএইএ সতর্ক করেছে, পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ না হয়েও ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে—যা ২০১৫ সালের চুক্তিতে নির্ধারিত ৩.৬৭ শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি এবং অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের কাছাকাছি।