আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ
আফগানিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় হেরাত প্রদেশে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৭১ জন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন নারী, পুরুষ ছাড়াও অন্তত ১৭ জন শিশু ও কিশোর-কিশোরী। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে হেরাতের গুজারা শহরে যাত্রীবাহী একটি বাসের সঙ্গে মোটরসাইকেল এবং পরবর্তীতে একটি তেলবাহী ট্রাকের সংঘর্ষে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থলে বহু মানুষ পুড়ে মারা যান, বেঁচে ফিরেছেন মাত্র তিনজন যাত্রী।
হেরাত প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র আব্দুল্লাহ মুত্তাকি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপিকে দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অন্যদিকে প্রাদেশিক পুলিশের কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইউসুফ সাইদি জানান, দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটি ইরান থেকে কাবুলগামী ছিল এবং এতে থাকা যাত্রীরা সবাই আফগান নাগরিক। তার ভাষ্য অনুযায়ী, চালকের বেপরোয়া গতি ও অসতর্কতাই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, দ্রুতগতির বাসটি প্রথমে একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা মারে। এর কয়েক মিনিট পর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি ধাক্কা খায় একটি জ্বালানিবাহী ট্রাকে। সংঘর্ষের পরপরই ট্রাকে বিস্ফোরণ ঘটে এবং মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে বাসে। এতে ভেতরে আটকে পড়া অধিকাংশ যাত্রী জীবন্ত দগ্ধ হয়ে মারা যান। নিহতদের মধ্যে ট্রাকের চালক, তার সহকারী এবং মোটরসাইকেলের চালক ও যাত্রী মিলিয়ে চারজন ছিলেন। বাকি ৬৭ জনই ছিলেন বাসযাত্রী।
এ দুর্ঘটনায় নিহতদের অধিকাংশই ছিলেন ইরান থেকে সম্প্রতি ফিরে আসা আফগান শরণার্থী। গত শতকের আশির দশকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক অভিযানের সময় লাখ লাখ আফগান আশ্রয় নিয়েছিলেন প্রতিবেশী ইরানে। চলতি বছরের শুরুতে ইরান সরকার সেসব শরণার্থীকে দেশে ফেরার নির্দেশ দেয়। আন্তর্জাতিক সংস্থার হিসাবে, জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ ৬০ হাজার আফগান শরণার্থী ইরান থেকে নিজ দেশে ফিরেছেন। দুর্ঘটনায় পড়া বাসের যাত্রীরাও তাদের মধ্যেই ছিলেন।
দুর্বল সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা, অনভিজ্ঞ চালক, নিয়ম না মানা এবং পাহাড়ি দুর্গম পথ—এসব কারণে আফগানিস্তানে সড়ক দুর্ঘটনা নতুন কিছু নয়। প্রায়ই বড় ধরনের দুর্ঘটনায় বহু প্রাণহানি ঘটে। কেবল গত বছরের ডিসেম্বরে এক জ্বালানি ট্যাংকার ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষে ৫২ জন নিহত হয়েছিলেন। সর্বশেষ হেরাতের এ দুর্ঘটনা আবারও দেশটির সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি করেছে।