1. news@dainikalokitonews.com : দৈনিক আলোকিত নিউজ : দৈনিক আলোকিত নিউজ
  2. info@www.dainikalokitonews.com : দৈনিক আলোকিত নিউজ :
সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:৩০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :

ফিল্ড স্কুল’ বদলে দিচ্ছে নড়াইলের কৃষি চিত্র: জ্ঞানে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কৃষক-কৃষাণীরা

  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০২৫
  • ১৮৪ বার পড়া হয়েছে

নড়াইল প্র‌তি‌নি‌ধি:

নড়াইল জেলার গ্রামীণ প্রান্তরে গড়ে উঠছে এক নতুন ধরণের শিক্ষাঙ্গন—যেখানে শিক্ষার্থীরা বইয়ের বদলে হাতে তুলে নিচ্ছেন কাস্তে, বীজ ও সার; কলমের জায়গায় চাষের কলাকৌশল। কেউ পঞ্চাশের কোঠায়, কেউ বা পঁইত্রিশ—তবে সবার চোখেই শেখার আগ্রহ, নিজের ভাগ্য বদলে নেওয়ার অদম্য ইচ্ছা।

এই অনন্য উদ্যোগ কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ‘প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্টারপ্রেনরশিপ অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ইন বাংলাদেশ (PARTNER)’ প্রকল্পের অংশ। এ প্রকল্পের আওতায় নড়াইল সদর, কালিয়া ও লোহাগড়া উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ‘পার্টনার ফিল্ড স্কুল (PFS)’ ও কৃষক সেবা কেন্দ্র—যেখান থেকে কৃষক ও কৃষাণীরা হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও উদ্যোক্তা হওয়ার কৌশল।

প্রতি গ্রুপে ২৫ জন করে নারী-পুরুষ কৃষক-কৃষাণী অংশ নিচ্ছেন এই দশদিনব্যাপী ‘রবি প্রকল্প’ ভিত্তিক প্রশিক্ষণে। এদের প্রত্যেককে ২ হাজার টাকা ভাতা ও নাস্তা সরবরাহ করা হয়। প্রশিক্ষণ শেষে দেওয়া হয় একটি সনদপত্রও। এই সুযোগ পেয়ে প্রশিক্ষণার্থীরা খুশি, আত্মবিশ্বাসী এবং আগ্রহী হয়ে উঠছেন কৃষির প্রতি।

গত ২৯ জুলাই, মঙ্গলবার সরেজমিনে কালিয়া উপজেলার বিভিন্ন ফিল্ড স্কুল ঘুরে দেখা যায় ভিন্ন এক শিক্ষার আবহ। উড়সী গ্রামের ফিল্ড স্কুলের প্রশিক্ষণার্থী আজিজুল গাজী বলেন,“বাপ-দাদার আমল থেকে চাষাবাদ করে আসছি। কিন্তু এতদিন পরে এসে বুঝলাম, শেখার শেষ নেই। এই প্রশিক্ষণে এসে নতুনভাবে কৃষিকে চিনতে পারছি।”

তিনি আরও জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইভা মল্লিক নিয়মিত ক্লাস পরিদর্শন করেন এবং কৃষকদের উৎসাহ দেন।

একই স্কুলের শেফালী বেগম বলেন,
“আমরা কীটনাশক ব্যবহার, জমিতে সঠিকভাবে বীজ ফেলা, সার প্রয়োগ—এই সব আধুনিক পদ্ধতি হাতে কলমে শিখেছি। শুধু শিখেই থেমে নেই, বরং নিজের জমিতে তা প্রয়োগ করেও উপকার পাচ্ছি।”

বাঁকা গ্রামের প্রশিক্ষণার্থী আছিয়া খানম জানান, কীটনাশক ও বালাইনাশক ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি, বীজ সংরক্ষণের কৌশলও তারা শিখেছেন। প্রশিক্ষণকালীন সময়ে সকলেই সময়মতো ভাতা ও অন্যান্য সুবিধা পেয়েছেন।

কালিয়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা ইভা মল্লিক বলেন,“গত জুনে কালিয়াতে ১৪টি স্কুল কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। প্রতিটি স্কুলেই প্রশিক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রশিক্ষণ শেষে প্রতিটি দলে সমবায় সমিতি গঠন ও ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয়েছে, যাতে ভবিষ্যত কৃষি কার্যক্রমে তারা একত্রে কাজ করতে পারে।”

তিনি আরও জানান, প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হচ্ছে কৃষকদের দক্ষ করে গড়ে তোলা, তাদের আত্মনির্ভরশীল ও উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করা।

নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন বলেন,“ফিল্ড স্কুলের মাধ্যমে কৃষক-কৃষাণীদের আধুনিক কৃষি পদ্ধতি ও উদ্যোক্তা হওয়ার পথে প্রস্তুত করা হচ্ছে। তারা নিজেরাই এখন সঞ্চয় করছেন, দলবদ্ধভাবে কৃষি কাজ করছেন, এবং নিজের ভাগ্য বদলের পথে হাঁটছেন।”

তিনি আরও বলেন, প্রতিটি প্রশিক্ষণার্থীর যেন ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সঠিকভাবে পৌঁছায় সেজন্য জেলা কৃষি অফিস সদা তৎপর।

এই প্রকল্পের সাফল্য প্রমাণ করে, শুধু সাহায্য নয়—সঠিক প্রশিক্ষণ, দিকনির্দেশনা ও সহযোগিতাই পারে কৃষিকে বদলে দিতে। আর এই পরিবর্তনের হাত ধরেই স্বপ্ন বুনছেন নড়াইলের হাজারো কৃষক-কৃষাণী স্বাবলম্বী হবার, উদ্যোক্তা হবার ও আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ গড়ার।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ,কলাম,তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট