রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে নিজের প্রাণ বিসর্জন দেওয়া শিক্ষক মাহরীন চৌধুরীর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) নিজের পৈতৃক নিবাস নীলফামারীর জলঢাকার বগুলাগাড়ী গ্রামে তাকে দাফন করা হয়।
এ সময় কেউ তাকে ‘মানবতার প্রতীক’, কেউবা ‘বীর নারী’ বলে সম্মান জানান। গ্রামবাসীর অনেকেই তাকে একজন নিঃস্বার্থ শিক্ষানুরাগী হিসেবে বর্ণনা করেন।
জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল থেকেই জলঢাকা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বগুলাগাড়ী গ্রামে মাহরীনের দাফনের প্রস্তুতি শুরু হয়। তিনি ছিলেন জলঢাকা বগুলাগাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি। স্থানীয় শিক্ষা, মসজিদ ও অবকাঠামোগত উন্নয়নেও ছিল তার নিরব অবদান। প্রতিবেশীরা জানান, তিনি দুই ঈদে গ্রামে এলেই অসচ্ছল মানুষদের পাশে দাঁড়াতেন, কারও সন্তানের পড়াশোনার খরচ দিতেন, আবার কারও চিকিৎসায় সাহায্য করতেন।
মাহরীন চৌধুরীর প্রতিবেশী আব্দুল জব্বার বলেন, দুই ঈদ ও মাঝেমধ্যে গ্রামে আসতেন মাহরীন আপা। এলাকার গরিব মানুষকে আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কালভার্ট নির্মাণেও সহযোগিতা করেছেন। তিনি শিক্ষানুরাগী হিসেবে বগুলাগাড়ী স্কুল অ্যান্ড কলেজের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে তাকে মনোনীত করেছিল এলাকাবাসী।
নিহতের স্বামী মনছুর হেলাল বলেন, ক্লাস শেষে শিক্ষার্থীদের নিয়ে বের হওয়ার সময় বিমান দুর্ঘটনাটি ঘটে। এ সময় মাহরীন সামান্য আঘাত পান। কিন্তু ২০ থেকে ২৫ জন শিক্ষার্থী ভেতরে আটকা পড়ে যায়। শিক্ষার্থীদের আটকা পড়ার বিষয়টি তিনি মোবাইলে আমাকে জানান এবং তাদের উদ্ধারে ভেতরে ঢুকে পড়েন। শিক্ষার্থীদের উদ্ধারের সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাত ৯টার পর তার মৃত্যু হয়।
মনছুর হেলাল জানান, নিহত মাহরীনের বাবা মহিতুর রহমান চৌধুরী ছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আপন চাচাতো ভাই।
গত সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে কথা বলে জানা গেছে, শিক্ষক মাহরীন চৌধুরীকে দগ্ধ অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল। আগুনে ঝলসে ও শ্বাসনালী মারাত্মক ক্ষত হওয়ার তার মৃত্যু হয়।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারের আত্মীয় ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের চাচাতো বোন হলেও মাহরীন রাজনৈতিক পরিচয়ের চেয়ে শিক্ষক পরিচয়কে বেশি গুরুত্ব দিতেন