সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
সাংবাদিকতা কোনো অপরাধ নয়। কলম ধরে সত্য উচ্চারণ করাই একজন গণমাধ্যমকর্মীর দায়িত্ব। অথচ সেই কলমধারীদেরই যদি রক্তাক্ত হতে হয়, আক্রান্ত হতে হয় সন্ত্রাসীদের হাতে, তাহলে সেটি কেবল ব্যক্তিগত নয়—সেটি পুরো সমাজ, রাষ্ট্র এবং গণতন্ত্রের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।
সোমবার (৩০ জুন) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের গেটে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, তা নিঃসন্দেহে এক ন্যাক্কারজনক ও বর্বরোচিত আক্রমণ। ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি বেলাল হোসেন, ভোরের আকাশের আমিনুর রহমান, ঢাকার ডাকের তৌফিকুজ্জামান লিটুসহ অন্তত ১০ জন সাংবাদিক গুরুতর আহত হয়েছেন—এই সংবাদ আমাদের মর্মাহত করে। মাথা ফেটে রক্তাক্ত সাংবাদিকদের দৃশ্য একটি সভ্য সমাজে কল্পনাও করা যায় না।
এ ঘটনায় সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো, পুলিশের উপস্থিতি থাকা সত্ত্বেও হামলাকারীরা নির্বিঘ্নে আক্রমণ চালাতে পেরেছে। তাদের এই নিস্ক্রিয়তা স্বাভাবিক নয়—এটি দায়িত্বে অবহেলা নয়, বরং তা প্রশ্ন তোলে পুলিশের নিরপেক্ষতা ও দায়বদ্ধতা নিয়েও।
প্রকাশ্য দিবালোকে, সাতক্ষীরার মতো জেলাশহরে, একটি পেশাদার সংগঠন প্রেসক্লাবের চত্বরে এমন হামলা কেবল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিরই নয়, বরং রাজনৈতিক ও গোষ্ঠীগত দখলদার মানসিকতার নগ্ন প্রকাশ। প্রেসক্লাবের অভ্যন্তরীণ নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে—তবে তা সমাধানের পথ কখনোই রক্তাক্ত সংঘর্ষ হতে পারে না।
এই ঘটনার পর সেনাবাহিনীর উপস্থিতি একদিকে আশ্বস্ত করলেও, অপরদিকে এটি বোঝায় যে পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠেছিল। এভাবে যদি একজন সাংবাদিকও নিরাপদ না থাকেন, তাহলে সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা কোথায়?
আমরা আশা করি, এই হামলার সুষ্ঠু তদন্ত হবে। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। একইসঙ্গে প্রশাসনের দায়িত্বরতদের ভূমিকা নিয়েও নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন। প্রেসক্লাবের নেতৃত্ব সংক্রান্ত যে সংকট চলছে, তা সম্মিলিত আলোচনার মাধ্যমে সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় সমাধান হোক—সন্ত্রাস ও সহিংসতায় নয়।
প্রেসক্লাব একটি পবিত্র পেশাদার প্রতিষ্ঠানের নাম। এটি যেন কোনো দলের দখলদার বাহিনীর ঘাঁটিতে পরিণত না হয়, সেটাই এখন সবচেয়ে জরুরি।