তাওহিদুল ইসলাম.শৈলকুপা প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার ২ নম্বর মির্জাপুর ইউনিয়নের চরগলোকনগর থেকে চরপারমন্দপুর পর্যন্ত গ্রামীণ রাস্তা নির্মাণ প্রকল্পে নজিরবিহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তথ্যমতে, এই রাস্তা নির্মাণের জন্য বরাদ্দ করা হয় প্রায় ৬৪০ মিটার কাজের বাজেট। তবে বাস্তবে কাজ হয়েছে মাত্র ১০০ মিটার। আশ্চর্যজনকভাবে এই সামান্য কাজের জন্যই ব্যয় দেখানো হয়েছে প্রায় ৬ লাখ ৭১ হাজার টাকা।
এলাকাবাসী বলছেন, যেখানে পুরো বরাদ্দে রাস্তা নির্মাণ হওয়ার কথা ছিল, সেখানে টাকার অর্ধেক কাজও সম্পন্ন হয়নি। বরং সামান্য যে কাজটি হয়েছে, তার মানও অত্যন্ত নিম্নমানের। ফলে বর্ষা মৌসুম সামনে থাকায় গ্রামবাসীর মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করেন, প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী এ ধরনের কাজ শ্রমিক (লেবার) দিয়ে সম্পন্ন করার কথা থাকলেও বাস্তবে তা ভেকু (মাটি কাটার যন্ত্র) দিয়ে দ্রুততার সঙ্গে শেষ করা হয়েছে। এতে এলাকার দরিদ্র ও বেকার জনগণের কাজের সুযোগ নষ্ট হয়েছে।
চরগলোকনগর গ্রামের বাসিন্দা মোঃ মিজানুর রহমান বলেন,“সরকার গরিব মানুষের উন্নয়নের জন্য প্রকল্প নেয়, কিন্তু তার সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। এত টাকা বরাদ্দের পরেও কাজের এই বেহাল দশা। ভেকু দিয়ে কাজ করে দরিদ্রদের আয় থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।”
TIC-এর অভিযোগ: “বরাদ্দের ১০০% টাকা হাতে আসে না”
এমনকি এই প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন Transparency Implementation Committee (TIC) সদস্যরাও। তাদের অভিযোগ, প্রকল্পের বরাদ্দের পুরো টাকা মাঠপর্যায়ে পৌঁছায় না। কাগজে-কলমে কাজের মান ও অগ্রগতি দেখানো হলেও বাস্তবে কাজের পরিমাণ ও মান অত্যন্ত দুর্বল।
একজন TIC সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,“প্রকল্পের বাজেটের পুরো টাকা আমরা হাতে পাই না। কাগজে কাজ শেষ দেখানো হলেও বাস্তবে কাজ অল্পই হয়। এইভাবে দুর্নীতি হলে উন্নয়নের টাকাও গায়েব হয়ে যাবে।”
এলাকার গরিবদের আক্ষেপ কাজ পেলে জীবন চালানো সহজ হতো:
স্থানীয় দরিদ্র জনগণের বক্তব্য, এই ধরনের কাজ সাধারণত ম্যানুয়াল লেবার দিয়ে করালে এলাকার অসংখ্য বেকার মানুষ কাজ পেত। এতে তারা সংসার চালাতে পারত এবং এলাকার অর্থনীতিতেও স্বস্তি ফিরত। কিন্তু ভেকু দিয়ে কাজ করানোয় সে সুযোগও হারিয়েছে চরগলোকনগরের অসংখ্য হতদরিদ্র পরিবার।
একজন দিনমজুর বলেন,“এখানে তো আমাদের মতো গরিব লোকদেরই কাজ করার কথা ছিল। কিন্তু আমাদের বাদ দিয়ে ভেকু দিয়ে একদিনে কাজ শেষ করেছে। আমরা তো খালি হাতে বসে রইলাম।”
স্থানীয়দের প্রশ্ন,বাকি টাকা কোথায় গেল?
এলাকাবাসী বলছে, মাত্র ১০০ মিটার কাজেই যদি ৬ লাখ ৭১ হাজার টাকা শেষ হয়ে যায়, তবে প্রকল্পের বরাদ্দকৃত পুরো ৬৪০ মিটার রাস্তার জন্য যে বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছিল, তার ভাগ কোথায় গেল? এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর মেলেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে।
দায়ীদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি:
এলাকাবাসী অভিযোগ করেছেন, এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু তাই নয়, অসমাপ্ত রাস্তার কাজ দ্রুত ও সঠিকভাবে সম্পন্ন করার দাবি জানান তারা। মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদ এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (PIO) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তদন্ত দাবি করেছেন এলাকাবাসী। তাদের বক্তব্য, সরকারি টাকার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত না হলে উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে এবং দুর্নীতি সংস্কৃতির শিকড় আরও গভীরে প্রোথিত হবে।