পিরোজপুর প্রতিনিধি:
পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার বৈঠাকাটা বাজার সংলগ্ন বেলুয়া নদীতে সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার বসে এই ভাসমান হাট। এ হাটে তরমুজ বেচাকেনার ধুমপরে প্রতি বছর তরমুজের সিজনে। নাজিরপুর উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে বেলুয়া নদী। বৈঠাকাটা বাজার ও বেলুয়া মুগারঝোর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে এই নদী। এই নদীতে প্রায় ৭০ বছর ধরে ভাসমান তরমুজের হাট বসে। মার্চ থেকে শুরু করে এপ্রিল পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। ঢাকা, খুলনা, যশোর, নরসিংদী, উত্তরাঞ্চল, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের বড় বড় ব্যবসায়ী এই হাটে তরমুজ কিনতে আসেন। স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তাঁদের কাছে তরমুজ বিক্রি করে ভালো দাম পান। সরেজমিন দেখা গেছে, বেলুয়া নদীতে ভাসমান বাজারে বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০-৫০টি ট্রলার বোঝাই করে হাটে তরমুজ নিয়ে এসেছে ব্যবসায়ীরা। পটুয়াখালী, চরফ্যাশন, বরগুনার ট্রলার বেশি। অনেক ব্যবসায়ী আবার ট্রলার পাঠিয়ে লেবারদের মাধ্যমে বিক্রি করায় তরমুজ। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা ট্রলারে উঠে দরদাম করছেন। ক্রেতা-বিক্রেতার হাকডাকে সরব তরমুজের হাট। দামে বনিবনা হলে ট্রলার থেকে তরমুজ কিনে আরেক ট্রলারে তোলা হচ্ছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও ট্রলার থেকে তরমুজ কিনে ছোট নৌকায় তুলছেন। অনেক ব্যবসায়ী ট্রলার থেকে তরমুজ কিনে পাশের বৈঠাকাটা বাজারে রাখা ট্রাকে বোঝাই করছেন।খুলনার কয়রা উপজেলা থেকে তরমুজের খেত কিনে পাইকারী ধরে ভাসমান বাজারে তরমুজ বিক্রি করতে আসা ষাটার্ধ বৃদ্ধ মোতাহার আলী বলেন, উপকূলীয় জেলাগুলোর চরাঞ্চলে প্রচুর তরমুজ আবাদ হচ্ছে। আমরা খেত হিসেবে তরমুজ কিনি। প্রতি বিঘা খেতের দাম পড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা শুরু করে ১২-২০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এরপর খেত থেকে তরমুজ কেটে আকারভেদে পাইকারী বাজারে বিক্রি করি। পাইকারি বাজারে ১০০টি হিসেবে তরমুজ বিক্রি হয়। তিনি আরো বলেন, এবছর ৫ কোটি টাকা বিক্রি করেছি এ পর্যন্ত আরো খেত বাকি আছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারে লাভ ভালো পাচ্ছি।বৈঠাকাটা বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেন জানান, ভোলার চরফ্যাশন, পটুয়াখালী, বরগুনার বিভিন্ন চরে আবাদ করা তরমুজের খেত কেনেন ব্যবসায়ীরা। এরপর খেত থেকে পাকা তরমুজ ট্রলারে করে বৈঠাকাটাসহ বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হয়। বড় আকারের ১০০টি তরমুজের পাইকারি মূল্য ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। মাঝারি আকারের তরমুজ ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। ছোট তরমুজ আকার ভেদে ৫ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। হাট থেকে তরমুজ স্থানীয় ফল ব্যবসায়ী ও দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বড় ব্যবসায়ীরা কিনে নেন। পাশাপাশি অনেকে সিজনি তরমুজ বিক্রেতা আছে তারাও আসে এ বাজারে এখান থেকে তরমুজ কিনে বেশি লাভবান হওয়া যায়।এই হাট থেকে তরমুজ কিনে নিয়ে যান পার্শ্ববর্তী নেছারাবাদ উপজেলার ব্যবসায়ী ওমর আলী। তিনি জানান, প্রতি হাটে কয়েক কোটি টাকার তরমুজ কেনাবেচা হয় এখানে। আমিও এবারে এখান থেকে তরমুজ কিনে বিভিন্ন জায়গায় পাইকারী বিক্রি করেছি প্রায় ৫ কোটি টাকার। গত বছর দাম চড়া ছিলো সঙ্গে মালও খারাপ। এবার দাম মোটামুটি, সব চেয়ে বড় বিষয় হলো মাল ভালো। চাহিদাও বেশি।বৈঠাকাটা বাজার কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা হয়। এসময় তারা বলেন, বাজারটি একশত বছরের পুরানো। এ বাজারে বিভিন্ন জায়গা থেকে কাচাঁমাল ট্রালার যোগে আসে ট্রলারেই হাট বসে। প্রতি বছরের নেয় এবারও তরমুজের বাজার জমজমাট। তরমুজ শেষের দিকে হলেও বাজারে এখনো শুরুর মত ট্রলারে তরমুজ আসে। এই ভাসমান বাজারে মানুষ কেনাবেচা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করার কারন হল এখানে খাজনার পরিমাণ অন্য জায়গার তুলনায় কম।