সম্পাদকীয়:
চৈত্রের খরতাপ শেষে, বাংলা বছরের প্রথম দিন এসে দাঁড়ায় প্রকৃতির মিষ্টি সম্মিলনে। বৈশাখের রোদে পুড়ে যাওয়া মাঠ, হঠাৎ বৃষ্টির পর মাটি থেকে উঠে আসা স্নিগ্ধ গন্ধ— সব মিলিয়ে নতুন বছর যেন প্রকৃতিরই আপন খেয়ালে আঁকা এক অনবদ্য ছবি।
চৈত্রের খররোদ পিছে ফেলে বাংলা নতুন বছর আসে প্রকৃতিরই হাত ধরে। পাতাঝরা গাছের ডালে কুঁড়ি ফোটার খবর, মাঠজুড়ে লাল কৃষ্ণচূড়ার আগুন, আর আম্রমঞ্জরীর মৌমাছিদের গুঞ্জন—এসব যেন প্রকৃতির নিজস্ব ভাষায় বলছে, “এসো নতুন।”
গ্রামের উঠোনে নবান্নের গন্ধ মাখে বাতাসে। নতুন চালের পিঠা বানানোর ধোঁয়া উড়ে যায় বৈশাখী হাওয়ায়। মাটির সানকিতে গুড়ের পায়েশ, কলাপাতায় সাজানো মুড়কি—প্রকৃতি যেন নিজ হাতে সাজিয়েছে এই ভোজের থালা।
বৈশাখের রোদে পুড়ে মাঠ যখন ফাটল ধরে, তখনই হঠাৎ কালবৈশাখী ঝড় নামে অঝোরে। ভেজা মাটির গন্ধ, বিদ্যুতের ঝলকানি, ভেঙে পড়ে পুরনো ডালপালা। ঝড় থামতেই দেখা যায়—আকাশে রংধনুর রেখা, গাছের নতুন পাতায় জমেছে বৃষ্টির ফোঁটা।
নববর্ষের সকালে শহরের রাস্তায় বেজে ওঠে “এসো হে বৈশাখ” বা “ওরে নীল দরিয়া”। গ্রামের মেলায় বাঁশির সুর, মাটির খেলনা আর রঙিন ফিতের ঝালর। গাছের ছায়ায় বসে একঝাঁক শিশু নতুন জামা পরে খায় তালের শাঁস।
প্রকৃতির এই উৎসব কোনো কাগজে-কলমের হিসাব নয়। এ তো মাটির গন্ধ, ফসলের হাসি, আকাশের রঙ বদলানোর খেলা। বাংলা নববর্ষ আমাদের শেখায়—পুরনো যাওয়ার বেদনায় না ভুগে নতুনকে জায়গা দিতে, ঠিক যেমন প্রকৃতি করে চিরকাল।