ফায়েজুল শরীফ,ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
দুর্নীতি ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মাদারীপুর আদালতে আলোচিত মিজান ফকিরের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), মাদারীপুর কার্যলয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদক অফিস,মাদারীপুরের সহকারী পরিচালক মোঃ আখতারুজ্জামান বাদী হয়ে সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে অভিযুক্ত মিজান ফকিরের বিরুদ্ধে ঐ চার্জশীট দাখিল করেন। দুদকের চাজশীট সূত্র ও ঘটনার বিবরণে জানা গেছে অভিযুক্ত আসামি মো. মিজানুর রহমান ফকির (৫৩) রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী-কাম-মুদ্রাক্ষরিক এবং বর্তমানে তিনি মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত আছেন। তিনি মাদারীপুর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের পাঠককান্দী এলাকার মোঃ কিনাই ফকিরের ছেলে। মিজান ফকিরের বিরুদ্ধে ৫৪ লক্ষ ২০ হাজার ৭৪৭ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ভোগদখলে রাখায় আসামি দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন এবং তদন্তে-সাক্ষ্য প্রমাণে প্রাথমিকভাবে তার অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া আসামি ৫৬ লাখ ৮০ আশি হাজার ৯৭০ টাকার সম্পদের তথ্য অসৎ উদ্দেশ্যে গোপন রেখে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে, দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে অসৎ উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের মালিকানা অর্জন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনেও শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
অন্যদিকে তদন্তে জব্দকৃত আলামত ও রেকর্ডপত্র মোতাবেক দুদক আরও জানতে পারে যে, আসামি মো. মিজান ফকির গাড়ি ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। গাড়ি ক্রয়ের ব্যবসা করেছেন বলে তিনি নিজে তার বক্তব্যে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। তার গাড়ি ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত ১২ লাখ ৫০ পঞ্চাশ হাজার টাকা আয় তিনি করেছেন। যেহেতু তিনি একজন সরকারি কর্মচারী হিসেবে গাড়ি ব্যবসা করায় কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং গণকর্মচারী (আচরণ), ১৯৭৯ এর বিধি-১৭ ধারায় এ বিষয়ে বলা আছে যে, কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্বানুমতি ব্যতিরেকে সরকারি কার্য ব্যতীত অন্য কোনো ব্যবসার সাথে জড়িত হতে অথবা অন্য কোনো চাকরি বা কার্য করতে পারবেন না। তিনি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত নিয়ম-নীতি ও চাকুরীকালীন বিধি-বিধান মানতে বাধ্য। তিনি সজ্ঞানে জেনে বুঝে তা লঙ্ঘন করেছেন। যা দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ১৬৮ ধারা সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
গণকর্মচারী আচরণ, ১৯৭৯-এর বিধি-১১ ধারা বিষয়ে বলা আছে যে, কোনো সরকারি কর্মচারী ২ লাখ ৫০পঞ্চাশ হাজার টাকার অধিক মূল্যের কোনো স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদ ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর বিভাগীয় প্রধান বা সরকারের অনুমোদন গ্রহণ নিতে হবে কিন্তু তিনি তা লংঘন করেছেন। এছাড়াও ১৯৭৯ এর বিধি-১২ ধারা [ভবন, অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট ইত্যাদি নির্মাণ অথবা ক্রয়] বিষয়ে বলা আছে যে, কোনো সরকারি কর্মচারী আবেদনের মাধ্যমে সরকারের পূর্বানুমতি গ্রহণ ব্যতিত ব্যবসায়ীক বা আবাসিক ব্যবহারের অভিপ্রায়ে নিজে বা ডেভেলপারেরর দ্বারা কোনো ভবন, অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্লাট ইত্যাদি নির্মাণ করতে বা ক্রয় করতে পারবেন না। সেটাও তিনি লংঘন করেছেন। তাছাড়া আসামি আইন বহির্ভূত ভাবে ভিপি লীজ কেস মূলে ০.১৪০০ একর সরকারি (ভিপি) সম্পত্তি বরাদ্দ নিয়ে ভোগ-দখলে আছেন। ভিপি বা অর্পিত সম্পত্তি আইন মোতাবেক যে শহরে লীজ গ্রহীতার নিজস্ব বাড়ি বা জায়গা রয়েছে এবং তাকে ওই শহরের অর্পিত সম্পত্তির কোনো বাড়ি বা জায়গা লীজ দেয়া যাবে না এই ধরনের পূর্ব লীজ গ্রহীতার লীজ বাতিল করা যাবে। আসামি সজ্ঞানে তা লঙ্ঘন করে নিজে লাভবান হওয়ার জন্য ভিপি সম্পত্তি আইন বহির্ভূত লীজ বরাদ্দ নিয়ে বাউন্ডারি দরজা-ঘর নির্মাণ করে ভোগ-দখলে আছেন।