
নাহিদ ইসলাম,রাজশাহী ব্যুরো:
রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় অবৈধভাবে পুকুর খননে বাধা দেওয়ায় এক্সকাভেটরের নিচে ফেলে কৃষক আহমেদ জোবায়েরকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে ‘মোহনপুর উপজেলা নাগরিক কল্যাণ কমিটি’র ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়। সকাল থেকে মোহনপুর উপজেলা চত্বরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। মিছিলটি উপজেলা চত্বর প্রদক্ষিণ শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বক্তারা বলেন, নিহত কৃষক জোবায়েরের হত্যাকা- অত্যন্ত নৃশংস ও মানবতাবিরোধী ঘটনা। দ্রুত দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না করা হলে জনমনে ক্ষোভ আরও বাড়বে। এ জন্য তারা প্রশাসনের প্রতি অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। পরে বেলা ১২টার দিকে মোহনপুর উপজেলা নাগরিক কল্যাণ কমিটির পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নিকট একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
এ সময় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং সাধারণ জনগণ উপস্থিত ছিলেন। স্মারকলিপিতে ১২১ জন কৃষক স্বাক্ষর করেছেন। এতে বলা হয়েছে, ‘কৃষি কাজই তাদের একমাত্র উপার্যনের অবলম্বন। কিন্তু তারা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছেন যে, এক শ্রেণির ভূমিদস্যু গত কয়েক বৎসর ধরে কৃষি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন করে পরিবেশ দুষণ করছে। যার ধারাবাহিকতায় গত ১৭ ডিসেম্বর রাতের বেলায় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই উপজেলার ভীমনগর গ্রামের মুন্তাজ আলীর ছেলে রুহুল আমিন ও রুবেল হোসেন, মুনসুর আলীর ছেলে জাকির হোসেন, আ: মজিদের ছেলে আনিসুর রহমান বকুল এবং ভাতুড়িয়া গ্রামের আ. আলিম খামারুর ছেলে বিপ্লবের নেতৃত্বে মোহনপুর উপজেলার ধুরইল ইউনিয়নের বড় পালশা গ্রামে জোর পূর্বক পুকুর খনন করতে যায়। স্থানীয় জনসাধারণ এতে বাধা দেন। এ সময় ভূমিদস্যুদের নির্দেশে এক্সকাভেটর মেশিনের চালক আবদুল হামিদ জমির মালিকের ছেলে আহমেদ জোবায়েরকে মেশিনের মাথা দিয়ে আঘাত করে।
জোবায়ের মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মেশিনের চাকায় পিষ্ট করে হত্যা করে। হত্যা মামলাটি থানায় দায়ের করা হলেও এখন পর্যন্ত প্রকৃত আসামিদের গ্রেপ্তারের তেমন তৎপরতা পরিলক্ষিত হয়নি। এই অবস্থায় তারা অবিলম্বে প্রকৃত সকল হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার, মেশিনের চালককে দ্রুত রিমান্ডে আনা, মোহনপুর উপজেলায় কৃষি জমিতে অবৈধভাবে পুকুর খনন বন্ধ করা এবং আহমেদ জোবায়ের পরিবারের নিরাপত্তা প্রদান করারসহ তারা হত্যাকান্ডে জড়িত সকল অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। স্থানীয় লোকজন বলেন, বড় পালশা গ্রামে মাঠে সব আবাদি জমি।
সেখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কেউ কোনো পুকুর খনন করেননি। হঠাৎ করে গত বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে তাঁরা জানতে পারেন, সেখানে পুকুর খনন করার জন্য গোপনে এক্সকাভেটর নামানো হয়েছে। এই খবর মসজিদের মাইক থেকে মোয়াজ্জিন আবদুল মান্নান ঘোষণা করেন। তখন গ্রামের লোকজন মাঠের দিকে ছুটে যান। প্রথম দিকে জুবায়েরসহ সাত থেকে আটজন পুকুর খননের প্রতিবাদ জানান। তখন চালক আবদুল হামিদ দ্রুত এক্সকাভেটরের বাকেট (মাথা) চারপাশে ঘোরাতে থাকেন। এতে ধাক্কা লেগে জোবায়ের মাটিতে পড়ে যান। চালক আবদুল হামিদ এক্সকাভেটর নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন।
এক পর্যায়ে জোবায়ের গায়ের ওপর দিয়ে এক্সকাভেটর চালিয়ে দেন তিনি। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। স্মারকলিপি গ্রহণ করে মোহনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহিমা বিনতে আখতার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখার আশ্বাস দিয়ে বলেন, প্রশাসন সব সময় অবৈধ পুকুর খননসহ যে কোনো অবৈধ কাজের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে রয়েছে। তিনি এই কৃষক হত্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে পুলিশকে অনুরোধ করেছেন।
এছাড়া তিনি কৃষকদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দীন বলেন, চালক আবদুল হামিদকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। নিহতের বাবা বাদী ৭ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশী অভিয়ান অব্যাহত রয়েছে।