
কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি:
সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কুশুলিয়া গ্রামে জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও রাস্তার ওপর খড়-কুটো রাখাকে কেন্দ্র করে জুমার নামাজ শেষে এক ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে গুরুতর জখম করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আহতের চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মাহবুবুল আলম (৭১) কালিগঞ্জ থানায় একটি লিখিত এজাহার দায়ের করেছেন। এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কুশুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা ব্যবসায়ী কাজী আব্দুস শুকুর (৫৫) গত ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখ দুপুর আনুমানিক ২টার দিকে জুমার নামাজ আদায় শেষে বাড়ি ফেরার পথে কুশুলিয়া কাজীপাড়া পুরাতন জামে মসজিদের সামনে পাকা রাস্তার ওপর পৌঁছালে পূর্বপরিকল্পিতভাবে তার গতিরোধ করে একই এলাকার কাজী আব্দুল্লাহ (২৬) ও কাজী পলাশ (৪৫)। পূর্ববিরোধের জেরে তারা ধারালো দা ও লোহার রড নিয়ে কাজী আব্দুস শুকুরের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, হামলাকারীরা প্রথমে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। তিনি প্রতিবাদ করলে কাজী আব্দুল্লাহ হত্যার উদ্দেশ্যে ধারালো দা দিয়ে মাথায় কোপ দেওয়ার চেষ্টা করে। তবে কোপটি মাথায় না লেগে তার বাম কানে আঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার বাম কান সম্পূর্ণভাবে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায় এবং প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ শুরু হয়।একই সময় কাজী পলাশ লোহার রড দিয়ে তার বাম পাঁজরে সজোরে আঘাত করে, ফলে হাড় ভেঙে গুরুতর জখম হয়। এরপর অভিযুক্তরা বুকে, পেটে, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি লাথি মারে এবং একপর্যায়ে গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা চালায় বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করেন। স্থানীয়দের সহায়তায় গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। বর্তমানে তিনি সেখানে মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এজাহারের বাদী কাজী মাহবুবুল আলম অভিযোগ করেন, অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক সেবন ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত। তাদের ভয়ে স্থানীয় সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তিনি আরও উল্লেখ করেন, গত ২২ মার্চ ২০২৫ তারিখে তাকেও মারধর করা হলে বিষয়টি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এছাড়া কুশুলিয়া হাটে দোকান ভাঙচুর, আম ব্যবসায়ীদের গাড়ি আটকে চাঁদা আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ ও মামলা রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে।ঘটনার পর থেকে এলাকায় চরম উত্তেজনা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল হাসান জানান, ঘটনায় একটি এজাহার গ্রহণ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।