
কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি:
নিরাপদ সড়ক ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে কেরানীগঞ্জে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছে আইন সহায়তা কেন্দ্র ফাউন্ডেশন (আসক)। এলাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর রঙহীন স্পিড ব্রেকারগুলোতে রঙ দিয়ে চিহ্নিত করার মাধ্যমে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানোর কাজ শুরু করেছে সংগঠনটি। শনিবার দুপুরে শিকারিটোলা এলাকায় কেরানীগঞ্জ মডেল থানা বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থিত বছরের পর বছর রঙহীন থাকা স্পিড ব্রেকারটিতে রঙ দেওয়ার মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচির সূচনা হয়।
সংগঠনের স্থানীয় ইউনিটের সদস্যরা জানান, কেরানীগঞ্জের অনেক এলাকার স্পিড ব্রেকারগুলো রঙহীন, ফলে চালকেরা সেগুলো সময়মতো বুঝতে পারেন না। বিশেষ করে রাতের অন্ধকারে, বৃষ্টি কিংবা কুয়াশার সময় এসব অচিহ্নিত স্পিড ব্রেকার বড় ধরনের দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়।তাই আমরা স্বেচ্ছাশ্রমে, নিজেদের অর্থায়নে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতা নিয়ে এই কার্যক্রম করছি—যাতে কেউ অন্তত অদৃশ্য স্পিড ব্রেকারের ধাক্কায় আহত না হন।”
আসকের প্রধান উপদেষ্টা এডভোকেট সাইফুল ইসলাম বলেন,“সড়কে নিরাপত্তা বজায় রাখা কেবল সরকারের একার দায়িত্ব নয়—সচেতন নাগরিকদেরও ভূমিকা রাখতে হয়। রঙহীন স্পিড ব্রেকার অনেক সময় প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে, বিশেষ করে স্কুল-কলেজ, বাজার ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়। আমাদের এই উদ্যোগ খুব ছোট—কিন্তু প্রয়োজনীয়। আমরা চাই, দল-মত-নির্বিশেষে সবাই এগিয়ে আসুক। কেরানীগঞ্জ অনেক বড় এলাকা, আমাদের একার পক্ষে সব জায়গায় এই কাজ করা সম্ভব নয়। এলাকায় থাকা রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, ব্যবসায়ী, অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও যদি নিজেদের এলাকায় একই কাজ করে, তাহলে খুব অল্প সময়েই পুরো কেরানীগঞ্জকে দুর্ঘটনামুক্ত করা সম্ভব হবে।”
তিনি আরও বলেন,“এখন অনেকেই নিজেদের মতো করে সড়কে স্পিড ব্রেকার তৈরি করেন, যা আইনত দণ্ডনীয়। অনিয়মিতভাবে তৈরি এসব ব্রেকারে কোনো ইন্ডিকেশন না থাকায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। তাই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে এগিয়ে এসে এসব অনিয়ম রোধ করতে হবে।”
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া সদস্যরা পথচারী, অভিভাবক ও মোটরসাইকেল চালকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং নিরাপদ সড়ক বিষয়ে লিফলেট বিতরণ করেন।
স্পিড ব্রেকার এলাকায় অবস্থিত অ্যালবাট্রস স্কুল এন্ড কলেজের পরিচালনা পর্সদ এর সদস্য মহসিন বলেন,“এই জায়গার স্পিড ব্রেকারটি অনেক দিন ধরে রঙহিন পড়ে ছিল।এখন রঙ দেওয়ার পর দূর থেকেই বোঝা যায়। এতে চালকসহ সাধারণ মানুষ আরও সচেতন হবে এবং দুর্ঘটনার পরিমাণ কমবে। ”
শাক্তা ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক হালিমা আক্তার আসকের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেন,“দেশের প্রতিটি স্পিড ব্রেকারে রঙ দিয়ে চিহ্নিতকরণ বাধ্যতামূলক করা উচিত। বিশেষ করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে মানুষ নিজেদের ইচ্ছেমতো স্পিড ব্রেকার নির্মাণ করে যা পুরোপুরি বেআইনি। তার ওপর রঙ না থাকায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি আরও বাড়ে। আসক যে উদ্যোগ নিয়েছে তা শুধু কেরানীগঞ্জ না—সারা দেশের জন্য অনুসরণযোগ্য উদাহরণ।”
সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশজুড়ে স্পিড ব্রেকারগুলোর সঠিক মান, উচ্চতা, রঙ ও চিহ্নিকরণ বিধি মেনে করা হলে দুর্ঘটনার হার প্রায় ২০–২৫ শতাংশ কমে আসতে পারে।
আসকের এই কার্যক্রম স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে, এবং অনেক এলাকাবাসী নিজেদের উদ্যোগে আশপাশের আরও কয়েকটি স্পিড ব্রেকারে রঙ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এ ধরনের উদ্যোগ নিয়মিত হলে সড়কে অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনা কমে আসবে এবং মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে। কেরানীগঞ্জে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করতে এমন উদ্যোগ আরও জোরদার করার আহ্বান জানান তারা।