
কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ঢাকা মহানগরী ও উপজেলা এলাকার ইজারাবিহীন খাস পুকুর ও জলাশয় সংস্কার, উন্নয়ন, সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিবেশ সংরক্ষণ প্রকল্প (১ম পর্যায়)-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়েছে। আজ শনিবার (১৫ নভেম্বর ২০২৫) কেরানীগঞ্জ উপজেলার দাড়িপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এই প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা জেলা প্রশাসক তানভীর আহমেদ এর সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ, ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আনিসুজ্জামান পিপিএম, কেরানীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়া,সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, ঢাকা জেলা প্রশাসন এবং ঢাকা জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দসহ কেরানীগঞ্জের নানা পেশার মানুষ। উদ্বোধনের পর দাড়িপাড়া খাসপুকুর পরিষ্কারকরণের মধ্য দিয়ে প্রকল্পের মাঠপর্যায়ের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে ঢাকা জেলা প্রশাসন ৯ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা জেলা ও মহানগরীর ৪৪টি খাস পুকুর ও জলাশয় খনন, সংস্কার, উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ বাস্তবায়ন করবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ঢাকার জলাধারগুলো স্বাভাবিক ধারণক্ষমতা ফিরে পাবে, জলাবদ্ধতা কমবে এবং একটি জলবায়ু–সহনশীল নগর ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠবে। তিনি দ্রুততার সঙ্গে প্রকল্পের কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেন। তিনি আরও বলেন, জাতীয় সম্পদ হিসেবে খাস পুকুর ও জলাশয় রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। সরকারি তথ্য অনুযায়ী ঢাকা জেলা ও মহানগর এলাকায় ১১৩টি খাস পুকুর রয়েছে, যার মধ্যে ৪৪টি প্রথম পর্যায়ে সংস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। এসব জলাশয়ে সীমানা নির্ধারণ, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, সীমানা পিলার স্থাপন, পুনঃখনন, পাড় বাঁধাই, দূষণমুক্তকরণ, পানি প্রতিস্থাপন, বাঁধানো ঘাট, ওয়াকওয়ে, বেঞ্চ স্থাপন ও বৃক্ষরোপণসহ সামগ্রিক উন্নয়নকাজ করা হবে। তিনি বলেন, এসব উদ্যোগের ফলে জলাবদ্ধতা নিরসন, বৃষ্টির পানি ধারণ, মৎস্যচাষ, কৃষি কার্যক্রম, বাফার জোন উন্নয়ন এবং নগরবাসীর জন্য পরিবেশবান্ধব বিনোদনকেন্দ্র তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হবে। ঢাকার পুকুরগুলো দখল ও দূষণের চাপে থাকা উল্লেখ করে তিনি বাকি জলাশয়গুলোর তালিকা প্রণয়ন করে ধাপে ধাপে পুনর্গঠনের আহ্বান জানান। আগামী প্রজন্মের জন্য টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করতে এসব কার্যক্রম অব্যাহত রাখা জরুরি বলেও তিনি উল্লেখ করেন। পরিবেশ উপদেষ্টা আরও জানান, মৎস্যজীবী সম্প্রদায়, স্থানীয় জনগণ এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সম্পৃক্ত করেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে, যা পরিবেশ সংরক্ষণের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের আর্থ–সামাজিক উন্নয়নেও সহায়ক হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে এলাকায় উৎসবমুখর পরিবেশ দেখা যায়। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় জনগণ উপকৃত হবে এবং জলাধার ভিত্তিক পরিবেশ সংরক্ষণ কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।