
ফায়েজুল শরীফ,ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
মাদারীপুরের নারী ও শিশু অপরাধ দমন ট্রাইবুনালের বিজ্ঞ বিচারক শরীফ কে,এম রেজা জাকের ২০১৯ ইং সালের দায়েরকৃত ধর্ষণের পর হত্যা মামলায় পুলিশ তদন্ত প্রতিবেদন, বাদী ও বিবাদী পক্ষের স্বাক্ষী-ছাবুদ, আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক এবং অকাট্য প্রমাণাদির ভিত্তিতে দীর্ঘ প্রায় ৬ বছরের মাথায় মাদারীপুর সদরের উপকন্ঠে পূর্ব খাগদী এলাকার মৃত সিরাজুল ইসলাম খানের পুত্র সাজ্জাদ হোসেন খানকে ধর্ষণের পর হত্যার দায়ে ফাঁসির রায় ও ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছেন।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) এ রায় ঘোষণার সময় আদালতে সংশ্লিষ্ট আসামী, বাদী -বিবাদী পক্ষের আইনজীবী, রাষ্ট্রপক্ষের কৌশলী(পিপি) ছাড়াও গণমাধ্যম কর্মীদের ভিড়ে আদালত পাড়া জনাকীর্ণ ছিলো। মাদারীপুর জঅই-৮ ও পুলিশ তদন্ত রিপোর্ট, চার্জশীট ও ঘটনার বিবরণে জানা যায় ২০১৯ ইং সালের ১৩ জুলাই মাদারীপুর শহরের পূর্ব খাগদী এলাকার একটি পরিত্যক্ত পুকুর থেকে অজ্ঞাত এক কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ এবং নিহত কিশোরীর পিতা মাদারীপুর সদর উপজেলার চরনাচনা গ্রামের মজিবর ফকির- লাশটি তার কন্যা দীপ্তির (১৩) বলে সনাক্ত করেন।
এরপর তিনি তার মাদারীপুর সদর মডেল থানায় আসামী অজ্ঞাত উল্লেখ করে একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলা দায়ের করলে মাদারীপুর জঅই- ৮ এর সদস্যরা তদন্ত শুরু করলে বেরিয়ে আসে যে, ইজিবাইক চালক সাজ্জাদ হোসেন খান দীপ্তীকে একা পেয়ে তার বাড়ীতে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করে এবং পরে তার লাশ উদ্ধারস্থল ঐ পুকুরে ফেলে দিয়েছিলো। নিহত দীপ্তি সদর উপজেলার বলাইচর সামসুন্নাহার মহিলা মাদ্রাসার ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী ছিলো। মাদারীপুর জঅই-৮( সিপিসি) এর তদন্তে জানা যায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত সাজ্জাদ খান পূর্বেও আরেকটি শিশু হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী ছিলেন এবং ২০১১ সালে তিনি আদালতের মাধ্যমে সে মুক্তি পায়। ধর্ষক ও হত্যাকারী সাজ্জাদ খান পেশায় একজন ইজিবাইক চালক এবং তার ইজিবাইকে কোনো মেয়ে বা কিশোরী একা পেলে সে অত্যন্ত কৌশলে তাদের ধর্ষণ করে এবং এরই জেরে দীপ্তীকে মাদারীপুরের ইটেরপোল বাসষ্ট্যান্ড থেকে চরমুগিরিয়া যাবার প্রাক্কালে যাত্রী হিসাবে একাই তার ইজিবাইকে উঠিয়ে সুযোগমতো ধর্ষণ ও হত্যা করে।
ফাঁসির রায়ের প্রতিক্রিয়ায় সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যম কর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপক্ষের বিজ্ঞ সিনিয়র আইনজীবী শরীফ মোঃ সাইফুল কবীর বলেন, এ রায়ে মাননীয় আদালত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন, নিহতের পরিবার সুবিচার পেয়েছেন এবং পরবর্তীতে এহেন মারাত্মক মানবতাবিরোধী গর্হিত অপরাধ করার আগে যে কোনো অপরাধী শতবার ভাববে, এহেন কাজ করা থেকে বিরত থাকবে। এছাড়াও নিহতের পিতা মজিবর ফকির এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে আদালত ও আইনজীবী সহ সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, স্বাধীনতার পরে এটাই প্রথম এমন মামলার রায়। এছাড়াও আদালত কর্তৃক আসামীকে ফাঁসির রায়ের পাশাপাশি ১০ লক্ষ টাকা যা জরিমানা করা হয়েছে- আসামী যদি সেটা প্রদানে ব্যর্থ হন তবে তার অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে তা আদায় করার নির্দেশও প্রদাণ করেছেন বিজ্ঞ বিচারক।