
মুকসুদপুর প্রতিনিধিঃ
গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা আরিফ খন্দকার লাক্ষা চাষে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন। নিজের উদ্যোগ ও পরিশ্রমে তিনি এখন এলাকার তরুণদের অনুপ্রেরণার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে আরিফ খন্দকারপরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি গাছের ডালে লাক্ষা পোকার চাষ শুরু করেন। শুরুতে নানা সমস্যার মুখোমুখি হলেও ধৈর্য ও গবেষণার মাধ্যমে তিনি ইউটিউবে প্রকাশিত ভিডিও দেখে দেখে ধীরে ধীরে চাষে দক্ষতা অর্জন করেন। বর্তমানে তার ব্যবহৃত বাগানে উৎপাদিত লাক্ষা থেকে প্রতি মৌসুমে কয়েক লাখ টাকার আয় হচ্ছে।
আরিফ খন্দকার বলেন,
লাক্ষা চাষ এক সময় গ্রামীণ শিল্পের অংশ ছিল। আমি চেয়েছি সেই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে। এখন আমার এই উদ্যোগ থেকে স্থানীয় অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে চাষ শুরু করেছেন। ও উৎপাদন করেন
লাক্ষা চাষ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও পরিবেশ উন্নয়ণ সহায়ক
লাক্ষার সাথে আমরা কমবেশী অনেকেই পরিচিত। ব্যাবহারিক দিক থেকে লাক্ষা মানুষের জীবনে অতি প্রয়োজনীয় একটি সম্পদ। পৃথিবী ব্যাপী মণুষ্যজগতের দৈনন্দিন নানাবিধ চাহিদা মেটাতে অত্যান্ত স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ন সহায়ক এবং মূল্যবান সম্পদের ভূমিকা পালন করে আসছে লাক্ষা। ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষি ও পরিবেশের ক্ষেত্রে অগ্রগতির দিক থেকে লাক্ষা চাষ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক উজ্জল সম্ভাবনার দিক রয়েছে। পৃথিবীতে আদিকাল থেকেই নানা কাজে লাক্ষার ব্যাবহারের ইতিহাস রয়েছে। পৌরানিক যুগেও বঙ্গ-ভারতসহ এ উপমহাদেশে লাক্ষা বহুবিধ কাজে ব্যবহার করা হতো এমন উদাহরণ রয়েছে। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র মহাভারতে আদিপর্বে, কৌরবগণ পান্ডবদের ধ্বংস করার জন্য লাক্ষা দিয়ে ‘জতুগৃহ’ তৈরী করেছিল লাক্ষার নানাবিধ ব্যাবহারের কথা উল্লেখ রয়েছে। লাক্ষা পরিচিতি lacca লাক্ষা এক প্রকার অতি ক্ষুদ্র পোকা Lack-Insect(লাক্ষা পোকা) বৈজ্ঞানিক নাম Keria- Laccak। ক্যারিয়া ল্যাক্কা কতৃক নিঃসৃত রজন জাতীয় পদার্থ। এ পদার্থ মানুষের হাতে পরিমার্জিত রুপ হলো লাক্ষা । এর প্রানীজাত বহুমুখী-কর্মশক্তি সম্পন্ন এক প্রকার রজন যার অনুপম গুনাগুনের কারণে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। লাক্ষা পোকার ত্বকের নীচে সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা এক প্রকার গ্রন্থি থেকে আঠালো রস নিঃসৃত হয়, যা ক্রমশঃ শক্ত ও পুরু হয়ে পোষক গাছের ডালকে আচ্ছাদিত করে ফেলে। পোষক গাছের ডালের এই আবরণই ‘লাক্ষা বা স্থানীয় নামানুসারে লাহা’ নামে পরিচিত। পরবর্তীতে ডালের উক্ত শক্ত আবরণ ছাড়িয়ে ও শোধিত করে ঐ লাক্ষা বিভিন্ন কাজে ব্যাবহার করা হয়। আধুনিক বিশ্বে লাক্ষার নানাবিধ ব্যবহার বিজ্ঞানের উৎকর্ষের যুগেও আধুনিক বিশ্বে নানাবিধ কাজে লাক্ষার ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু এর ব্যবহারের গুরুত্বের দিকটি ব্যাপক জনগোষ্ঠির নজরে না এলেও বিজ্ঞানের কৃতকৌশলের সুবিধাভোগী মানুষদের জন্য লাক্ষা নামক সম্পদ (অতি ক্ষুদ্র পোকা) পর্দার অন্তরালে থেকে জীবন দিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষকে সেবাদান করে যাচ্ছে। পৃথিবীতে কোটি কোটি জীব, অনুজীবসহ অতিশয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কীটপতঙ্গ, পোকামাকড় একে অপরের পরিপূরক হিসেবে জীবনসাধন করলেও পৃথিবীতে অতি ক্ষুদ্রাকার পোকা লাক্ষার পরিচয় শিল্প পোকা হিসেবে। পোকা বলতে অনেকের কাছে বিরক্তিকর কিছু। কিন্তু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পোকারাও যে মানুষের জীবনের প্রয়োজনীয়তা মেটাতে অর্থনৈতিক উৎপাদনের উপকরণ হতে পারে এটি কখনও মানুষ গভীরভাবে তার নিজস্ব অনুভূতি দিয়ে এখনও বিবেচনা করেনা। পৃথিবীতে হাজারো কীটপতঙ্গ আছে যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানুষের জীবন রক্ষার কাজে তারা অনুসর্গ হিসেবে কাজ করছে। অথচ পৃথিবীর সকল জীবের ওপর প্রাধান্য বিস্তারকারী মানুষের কাছে সৃষ্টিজগতের এমন অনেক রহস্য এখনও অজানা রয়েছে। আদিকাল থেকেই বঙ্গদেশে লাক্ষা ও রেশমের চাষ ছিল লাক্ষা পোকার মত আদিকাল থেকেই আমাদের দেশে রেশম পোকার চাষ ছিল। সে কারনে ঐ পোকার জীবন চক্রের অবদানকে ঘিড়ে বঙ্গভূমিতে রেশম চাষ, রেশম সুতা তৈরী ও রেশমী কাপড় উৎপাদনের ধারা আজও আমাদের মাঝে টিকে রয়েছে। আর এ কারনেই রেশম শিল্পের আদি ঐতিহ্য দাবিদার বাঙালিরা। আমাদের রক্তের ধারার সাথে মিশে রয়েছে রেশম ও লাক্ষা চাষের বহুবিধ বৈচিত্রের
মুকসুদপুর
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে লাক্ষা পোকার “রজন” সংগ্রহ করে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। ও বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে এতে একদিকে যেমন গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে দেশের প্রাচীন এক ঐতিহ্য নতুনভাবে পুনর্জীবিত হচ্ছে।
লাক্ষা পোকা চাষের নিয়ম। বিভিন্ন ধরনের লাক্ষা ফসল উৎপাদনের সাথে জড়িত। বরই,পলাশ,বাবলা ইত্যাদি পোষক গাছসমূহে যে সমস্ত পোকা লাক্ষা উৎপাদন করে তাদের রং লাল বলে এদের রঙ্গিনী পোকা বলে। অন্য আর এক ধরনের লাক্ষা কীট কেবলমাত্র কুসুমগাছে ভালভাবে বৃদ্ধি লাভ ও বংশ বিস্তার করতে পারে এবং যে লাক্ষা উৎপাদন করে তাদের রং হলদে বা কুসুমী বলে এরা কুসুমী পোকা নামে পরিচিত। প্রতি বছর প্রত্যেক প্রকারের লাক্ষা পোকা দুইবার ফসল দিতে পারে। রঙ্গিনী পোকার ক্ষেত্রেঃ- কার্তিকী ফসল ‘অক্টোবর-নভেম্বর’ মাস(ফসল সংগ্রহের সময়) । বীজ লাক্ষা লাগানোর সময় জুন-জুলাই(আষাঢ়) মাস। বৈশাখী ফসল-‘এপ্রিল-মে(ফসল সংগ্রহের সময়)। বীজ লাক্ষা লাগানোর সময়- অক্টোবর-নভেম্বর ও (কার্তিক) মাস। আবার কুসুমী পোকার ক্ষেত্রেঃ- অগ্রহণী ফসল- ডিসেম্বর-জানুয়ারী মাস(ফসল সংগ্রহের নময়)। বীজ লাক্ষা লাগানোর সময় জুন-জুলাই (আষাঢ়) মাস। জুন-জুলাই (ফসল সংগ্রহের সময়)। বীজ লাক্ষা লাগানোর সময় জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী (মাঘ) মাস। এভাবে বাংলাদেশে বছরে মোট ৪টি লাক্ষা ফসল পাওয়া সম্ভব।
প্রতিটি বরই গাছ থেকে প্রতি বছর ২০ কেজি ছাড়ানো লাক্ষা উৎপাদন সম্ভব হবে। প্রতিগাছ থেকে কৃষকের আয় হবে ১৫০০/- টাকা, খরচ হবে ৪৫০/- টাকা, নীট লাভ হবে ১০৫০/- টাকা। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা এ কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন। এ কাজে এলাকার নারীপরুষদের উদ্বুদ্ধ করণ সহ লাক্ষা চাষ বিষয়ে প্রশিক্ষন দেয়া অত্যান্ত জরুরী।
আরিফ খন্দকার বলেন। আমি যদি সরকার থেকে সার্বিক সহযোগিতা পাই তাহলে বিপুল আকারে উৎপাদন করতে সক্ষম হব,
এতে করে বেকারত্ব্য যুবকদের আয়ের উৎস বাড়বে ও সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা ও বৃদ্ধি পাবে।