বান্দরবান সদর প্রতিনিধিঃ
বান্দরবানের স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের কাছে “শ্বাসনালী খ্যাত” হিসেবে পরিচিত বান্দরবান ৩ নম্বর ওয়ার্ড কালাঘাটার মংক্যঘোনার মধ্যবর্তী সড়ক এখন পৌরসভার বর্জ্যের দুর্গন্ধে দমবন্ধ হয়ে উঠছে।মংক্যঘোনা প্রধান সড়কের পাশে প্রতিদিন পৌরসভার ট্রাক থেকে পচা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে, যা শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করছে এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে। পৌরসভা পরিচ্ছন্নতা বিভাগ।
জানায়, শহরে প্রতিদিন প্রায় ৪০ টন ময়লা ও আবর্জনা উৎপন্ন হয়। কিন্তু ৪১ বছর পেরিয়েও শহরে একটি স্থায়ী ডাম্পিং এলাকা গড়ে তুলতে পারেনি পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। এর ফলে সড়কের পাশে জমে আছে পচা সবজি, ফলমূল, খাবারের উচ্ছিষ্ট, প্লাস্টিক ও পলিথিন। মাঝে মাঝে এসব আবর্জনায় আগুন দেওয়া হয়, যা থেকে ছড়ানো বিষাক্ত ধোঁয়া বাতাসকে দূষিত করে তোলে
মংক্যঘোনার আবর্জনার স্তুপ থেকে মাত্র পাঁচশত ফুট দূরত্বে রয়েছে একটি মনোমুগ্ধকর স্থান, যেখান থেকে দাঁড়িয়ে বান্দরবান শহর ও পাহাড়ের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বান্দরবানের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নানা বয়সী মানুষ কর্মজীবনের ক্লান্তি ভুলে প্রকৃতির সান্নিধ্যে শান্ত পরিবেশে সময় কাটাতে সেখানে ভিড় করেন।
সেখানে রয়েছে একটি মাত্র দোকান। সেই দোকানের মালিক মোহাম্মদ ওসমান দৈনিক – নীলগিরিকে জানান, “এত বছর পেরিয়ে গেলেও বান্দরবান পৌরসভা আবর্জনা ফেলার জন্য একটি স্থায়ী ডাম্পিং স্টেশন গড়ে তুলতে পারেনি
তিনি আরো বলেন এ বিষয়টি নিয়ে বেশ কয়েকবার একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পরেও কর্তৃপক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি।
এই সড়কটি কেবল একটি পাড়ার রাস্তা নয়, বরং এটি রোয়াংছড়ি উপজেলার মূল যোগাযোগের অন্যতম পথ। প্রতিদিন সরকারি স্কুল-কলেজের অসংখ্য শিক্ষার্থীসহ উপজেলার হাজারো মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করে বান্দরবান শহরে আসা-যাওয়া করেন। পথচারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, রাস্তার ধারে জমে থাকা আবর্জনার গন্ধ এতটাই তীব্র যে হাঁটার সময় অনেককে নাক চেপে চলতে হয়। অনেকের আবার দুর্গন্ধে বমি বমি ভাব দেখা দেয়।
কালাঘাটার স্থায়ী বাসিন্দা মোঃ দেলোয়ার হোসেন (মাস্টার) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে আমরা এ সমস্যার মধ্যে বাস করছি। প্রতিদিনের আবর্জনার দুর্গন্ধে এখানকার আশেপাশে প্রত্যেকটি পাড়ার পরিবেশ ও স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ এত বছরেও সঠিক ডাম্পিং স্টেশনের ব্যবস্থা হয়নি।”
এ বিষয়ে তিনি আরো অভিযোগ করেন —বান্দরবানের উন্নয়নের রূপকার দাবি করা বীর বাহাদুর উশৈসিংয়ের উন্নয়নের প্রকৃত চিত্র এটাই। তিনি দুই যুগেরও বেশি সময় এমপি, মন্ত্রী ও উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও তিনি নিজ এলাকায় আবর্জনা ব্যবস্থাপনার জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করতে সক্ষম হননি। তার উন্নয়নের জোয়ারে বান্দরবান জেলা এখন দরিদ্রদের তালিকায় স্থান পেয়েছে।
আবর্জনার স্তুপ শহরের নিকটবর্তী হওয়ায় বাতাসে পুরো বান্দরবান শহরজুড়ে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। এতে পর্যটকরাই সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। বিশেষ করে বান্দরবানের জনপ্রিয় তং রিসোর্টের পাশেই এই বর্জ্যের স্তুপ থাকায় ভ্রমণকারীদের দুর্গন্ধের মধ্য দিয়েই রিসোর্টে প্রবেশ করতে হয়।
স্থানীয়রা জানান, এ পরিস্থিতি শুধু পর্যটকদের নয়, আশপাশের বাসিন্দাদের জন্যও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। পরিবেশ দূষণ ও দুর্গন্ধের কারণে এলাকাটি ধীরে ধীরে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক ডাম্পিং স্টেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় এমন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ফলে পর্যটন নগরী বান্দরবানের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এ বিষয়ে বান্দরবান পৌর প্রশাসক এসএম মনজুরুল হক জানান, সড়কের পাশে আবর্জনা ফেলার বিষয়ে অনেকেই অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, শহরের নির্দিষ্ট স্থানে বর্জ্য ফেলতে এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে পৌরসভা নিয়মিত কাজ করছে। তবে দিনের বেলায় কীভাবে ময়লার গাড়ি শহরের ভেতর দিয়ে চলাচল করে—সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিবারের মত এবারও তিনি এই শুকনো আশ্বাস দেন