ডুমুরিয়া প্রতিনিধিঃ
এক সময় ব্যস্ততম যাতায়াতের অন্যতম সড়ক ছিল পুরাতন খুলনা–সাতক্ষীরা সড়ক। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি আজ পরিণত হয়েছে জনদুর্ভোগের প্রতীকে। পুরাতন খুলনা–সাতক্ষীরা সড়ক যেন আজ এক আহত শরীর। বিশেষ করে শলুয়া বাজার থেকে শাহাপুর পর্যন্ত প্রায় পুরো পথজুড়েই রয়েছে ভাঙাচোরা গর্তের সারি। খানাখন্দে ভরা এই অংশ দিয়ে চলাচল করা মানেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এগোনো। প্রতিটি ধাক্কা যেন যাত্রীদের বুকে বিদ্ধ হওয়া আঘাত, প্রতিটি গর্ত যেন অবহেলার দীর্ঘ ক্ষতচিহ্ন। বর্ষায় সামান্য বৃষ্টিতেই এই অংশটুকু ডুবে যায় কাদাজলে। রিকশা, ভ্যান কিংবা মোটরসাইকেল উল্টে যাওয়া যেন নিয়মিত ঘটনা। পণ্যবাহী ট্রাক থমকে যায়, অ্যাম্বুলেন্সে রোগীর নিঃশ্বাস ধুকপুক করে ওঠে প্রতিটি ধাক্কায়। স্কুলগামী শিশুদের মনে ভয়, শ্রমজীবী মানুষের মনে ক্ষোভ, আর সাধারণ মানুষের চোখে অসহায় অপেক্ষা। স্থানীয় এক প্রবীণ বৃদ্ধের কণ্ঠে রাগ আর হতাশার মিশ্র সুর— “এই রাস্তা একদিন ছিল জীবনের সেতু, আজ সেটা কেবল কষ্টের শেকল। আমাদের দাবি কেউ শোনে না, আমাদের কান্না যেন মাটির নিচে চাপা পড়ে যায়। কতবার লিখিত ও মৌখিকভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানানো হয়েছে, কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।” স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, শলুয়া বাজার থেকে শাহাপুর পর্যন্ত রাস্তার ভাঙা অবস্থার কারণে পণ্য পরিবহন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। সড়কের এ অবস্থার কারণে পণ্য পরিবহনে সময় ও খরচ দুটোই বাড়ছে। কৃষিপণ্য সময়মতো বাজারে পৌঁছানো যায় না, ফলে কৃষককে লোকসান গুনতে হচ্ছে।“ একজন যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম উন্নয়নের ছোঁয়া আসবে, অথচ আমাদের এই পথ যেন অভিশাপের মতো রয়ে গেছে। ছিল। আমরা কবে এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাব?” পুরাতন খুলনা–সাতক্ষীরা সড়কের এই অংশ তাই কেবল একটি ভাঙা রাস্তা নয়, এটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের দুঃসহ বাস্তবতা। এ যেন উপেক্ষার এক দীর্ঘশ্বাস, উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির সামনে বাস্তবতার এক মর্মন্তক প্রতিচ্ছবি। এটি অবহেলার প্রতীক, উন্নয়নের ব্যর্থ প্রতিশ্রুতির নগ্ন সাক্ষী। প্রতিটি গর্তে যেন লুকিয়ে আছে মানুষের দুঃখ, প্রতিটি ভাঙনে যেন প্রতিধ্বনিত হয় হাজারো নিঃশ্বাস। মানুষ অপেক্ষা করছে কবে এই ক্ষতবিক্ষত পথ আবার হবে প্রাণের ধারা, কবে ভাঙা রাস্তার বুকজুড়ে ফুটবে নতুন আশার ফুল। স্থানীয়দের আকুতি দ্রুত সংস্কারের মাধ্যমে যেন শলুয়া বাজার থেকে শাহাপুর পর্যন্ত এই দুঃখের অধ্যায়ের অবসান ঘটে। স্থানীয়রা দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তারা আশা করছেন, বহু প্রতীক্ষিত সংস্কার কাজ শিগগিরই শুরু হবে এবং পুরাতন খুলনা–সাতক্ষীরা সড়ক আবারও নতুন প্রাণ ফিরে পাবে।