জসিম উদ্দিন (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধিঃ
বাচ্চাদে স্কুলে ভর্তি করাতে পারবেন না। ইউনিয়ন পরিষদের কোনো সেবা পাবেন না। জমি ক্রয়-বিত্রন করতে পারবেন না। বিয়ের যোগ্য ছেলে-মেয়ে থাকলে তাদের বিয়ে দিতে পারবেন না, যদি না আপনাদের কাছে এই স্মার্টকার্ড থাকে। স্মার্ট হোল্ডিং কার্ড নামক এমন ‘জাদুর কার্ডের’ ভয়ভীতি দেখিয়ে পাহাড়ি এলাকার মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র।
অভিযোগ রয়েছে, শুধু হোল্ডিং কার্ড নায় এই চক্রকে পরিষদের প্রশাসক দিয়েছেন ট্যাক্স আদায়ের দায়িত্বও। ঘাটাইলের রসুলপুর ইউনিয়ান পরিষদের প্রশাসকের সই করা কিছু কার্ড ও টাকা আদায়ের রসিদ।
ইউনিয়ন পরিষদের হিসাব সহকারী মামুন মিয়ার দাবি, তার কাছ থেকে ট্যাক্স আদায়ের কোনো বই নেয়নি কেউ। ইউএনও বললেন, ‘হোল্ডিংয়ের স্মার্টকার্ড দিতে হয়, জীবনে প্রথম শুনলাম।’
ঘাটাইল উপজেলায় রয়েছে ১৪টি ইউনিয়ন। গত বছরের ৫ আগস্টের পর অপসারিত হয়েছেন ১৪ জন ইউপি চেয়ারম্যান। এসব পরিষদে প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা। রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বে আছেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হান্নান সরকার। গত মাসে উপজেলা থেকে ইউনিয়নগুলোতে উন্নয়ন প্রকল্পের চাহিদা চাওয়া হয়। সে মোতাবেক হান্নান সরকার স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং ইউপি সদস্যদের সমন্বয়ে একটি সভা করেন। সভার কোনো এক সময় ট্যাক্স (কর) আদায়ের বিষয়ে কথা তোলেন প্রশাসক।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ওই পরিষদের একজন কর্মচারী জানান- ‘জন উন্নয়ন শক্তি’ নামে একটি সংগঠনকে ট্যাক্স আদায় ও হোল্ডিং কার্ডের দায়িত্ব দেন প্রশাসক। এই ইউনিয়নে হোল্ডিং সংখ্যা
হোল্ডিংয়ের স্মার্টকার্ড দিতে হয়, জীবনে প্রথম শুনলাম’
প্রশাসকের একক সিদ্ধান্তে হচ্ছে সব প্রায় পাঁচ হাজার। এরই মধ্যে আদায় করা হয়েছে প্রায় দুই হাজার।
সরাবাড়ি গ্রামের জুয়েল মিয়া জানান, একটি বাড়িতে তিনটি ঘর থাকলে প্রতি ঘর থেকে স্মার্টকার্ড বাবদ ১০০ করে টাকা নেওয়া হচ্ছে। কোনো বাড়িতে দালান থাকলে নেওয়া হচ্ছে ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা। আদায় করা হচ্ছে ট্যাক্স।
এ বিষয়ে একাধিক ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক। তারা জানান, প্রতি বছর হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করা হয় আম পুলিশের সহযোগিতায় স্থানীয় কিছু লোকের সমন্বয়ে। কোনো এনজিও বা বাইরের লোক দিয়ে ট্যাক্স আদায়ের কোনো বিধান নেই। হোল্ডিং কার্ড দেওয়ার বিধান তো আরও নেই।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সরাবাড়ি বাজারে হোল্ডিং স্মার্টকার্ডের নামে টাকা নেওয়ার বিষয়ে সন্দেহ হলে সাজ্জাদ হোসেন আবির নামে এক ব্যক্তিকে আটক করে এলাকাবাসী। বিষয়টি জানাজানি হলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। পরে পুলিশ গিয়ে আবিরকে উদ্ধার করে। পরে তাকে ইউএনওর কাছে হস্তান্তর করা হয়। ইউএনংলা ভাগ্য, আবিরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রসুলপুর ইউনিয়ন। পরিষদের প্রশাসকের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়- ‘জন উন্নয়ন শক্তি’ নামে যে সংস্থাটি ট্যারা ও হোল্ডিং কার্ড দেওয়ার কাজ করছেন তার ম্যানেজার আহাদ মিয়া। তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ওই ইউপির এক কর্মকর্তা জানান, আহাদ মিয়ার বড় ভাই পরিষদের প্রশাসক হান্নান সরকারের বন্ধু। তাদের বাড়ি একই এলাকায় হওয়ায় কাজটি পেয়েছেন আহান। ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘গত রোববার পরিষদের সভায় হোল্ডিং কার্ডের বিষয়ে প্রতিবাদ করি আমি। আমার কথায় একমত হন অন্য সদস্যরাও। এ কাজ বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেন সবাই। কত টাকা উত্তোলন করা হয়েছে তার হিসাব চাওয়া হয়। এরপরও প্রশাসকের নির্দেশে কাজ চালিয়ে যান তারা।’
পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘অফিসিয়াল কোনো রুলাস ওনারা (জন উন্নয়ন শক্তি) মেনে চলেননি। আমার কোনো কথা ওনারা শুনেনি। ওনারা ওনাদ্যের মতো করে ট্যাক্স আদায় ও হোল্ডিং কার্ডের কাজ করছে। নিয়ম অনুযায়ী ট্যাক্স আদায়ের টাকা ব্যাংকে জমা করার কথা থাকলেও কোনো টাকা জমা দেওয় হয়নি। বিষয়টি ইউএনওকে জানানো হয়েছে।’
রসুলপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বে আছেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তী হান্নান সরকার। তার ফোনে কয়েকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। মেসেজ পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি। ইউএনওর ভাষ্য, গত বৃহস্পতিবারের পর থেকে তার ফোনও বিসিভ করছেন না এই কর্মকর্তা।
ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাঈদ বলেন, হোল্ডিংয়ের ‘স্মার্টকার্ড দিতে হয় এটা আমার জীবনে প্রথম শুনলাম। ইউনিয়নে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষদের রাস্তাঘাটসহ নানা ধরনের ভোগান্তি সহ্য করতে হয়। যদি হোল্ডিং কার্ডের নামে বাড়তি টাকা চাপিয়ে দেওয়া হয় তা হবে আরেক ভোগান্তির সামিল। ইউনিয়ন পর্যায়ে নাগরিকদের হোল্ডিং স্মার্টকার্ড দেওয়ার সরকারি কোনো বিধান নেই।