বান্দরবান সদর প্রতিনিধিঃ
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাব ও অনিয়ম যেন এক অভিন্ন চিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে, সিলেটের পাথর উত্তোলনের খবর এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও জানে, কারণ বিষয়টি গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং পরিবেশবাদীদের আন্দোলনের মাধ্যমে আলোচিত হয়েছে, কিন্তু একই ধরনের আরেকটি ভয়াবহ বাস্তবতা রয়ে গেছে মানুষের অগোচরে, সেটি হলো বান্দরবানের পাহাড়ি ছড়াগুলো থেকে অবাধে ও নিয়মবহির্ভূতভাবে পাথর উত্তোলন, যা শুধু পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্যই নয় বরং স্থানীয় জনজীবন ও ভূপ্রাকৃতিক ভারসাম্যের জন্যও মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে, সিলেটের পাথর নদীর উজান থেকে প্রতি বছর প্রাকৃতিকভাবে ভেসে আসে, ফলে সেখানে উত্তোলন হলেও অন্তত কিছুটা প্রাকৃতিক পুনঃসংস্থান ঘটে, কিন্তু বান্দরবানের পাথর তো আর কোনো নদীর স্রোতে ভেসে আসে না, বরং তা পাহাড়ের বুক চিরে, ছড়ার তলদেশ খুঁড়ে, জীবন্ত প্রাকৃতিক গঠন ধ্বংস করে তুলতে হয়, যার ফলে পাহাড় ধসে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে, জলধারার স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়, এবং স্থানীয় বনভূমি ও কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এভাবে একবার যে প্রাকৃতিক গঠন ভেঙে ফেলা হয় তা আর কোনোদিন ফিরিয়ে আনা যায় না, ফলে আমরা এমন এক ক্ষতির দিকে এগোচ্ছি যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভোগ করবে, অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকি ও আইন প্রয়োগের দুর্বলতা, প্রভাবশালী চক্রের দৌরাত্ম্য এবং সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা এই ধ্বংসযজ্ঞকে আরও ত্বরান্বিত করছে, আমাদের দেশীয় প্রাকৃতিক সম্পদগুলো যেমন পাথর, বালু, খনিজ, বনভূমি ও জীববৈচিত্র্য এসবই জাতীয় সম্পদ, যা ধ্বংস হলে আর কখনো পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়, তাই এখনই যদি কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, পরিবেশ ধ্বংসের এই স্রোত থামানো না হয়, তবে বান্দরবানের পাহাড়ি ছড়াগুলো একদিন নিঃস্ব হয়ে যাবে এবং তার প্রভাব পড়বে নদ-নদী, কৃষি, জলবায়ু এবং মানুষের জীবনে, সুতরাং এই মুহূর্তে প্রয়োজন কঠোর আইন প্রয়োগ, স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, নইলে যে ক্ষতি হবে তা শুধু বান্দরবানের মানুষের নয়, বরং পুরো দেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে দাঁড়াবে।