নিজস্ব প্রতিবেদক:
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ হাজার ৯৫৬ কোটি টাকা। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনসহ অন্যান্য খাতের জন্য সংস্থাটিকে এই অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
নির্বাচনি অর্থবছরে ইসির জন্য প্রস্তাবিত মোট অর্থের সরকার পরিচালনা খাতের জন্য ২ হাজার ৭২৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, আর উন্নয়ন খাতে ২২৯ কোটি ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
সোমবার (২ জুন) বিকেলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে ইসি সচিবালয়ের জন্য এ বরাদ্দের ঘোষণা দেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থ উপদেষ্টা জানান, দেশের চলমান প্রেক্ষাপটে এবার নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কার বাজেটকেও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের বাজেটে নির্বাচন কমিশনের জন্য সরকারের বাজেট ছিল ১ হাজার ২৩০ কোটি (২২৯ কোটি ৮৩ লাখ) টাকা। এর মধ্যে পরিচালনা খাতে ৭৯৩ কোটি টাকা ও উন্নয়ন খাতে ৪৩৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়।
২০২৫-২৬ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত অর্থে নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে- রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন, দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচন, ৪টি পৌরসভা, ১০টি উপজেলা, ১০টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন, জাতীয় সংসদ ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রণয়ন, ডেটাবেইজ ও ডেটা সেন্টার রক্ষণাবেক্ষণ; রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ, স্থানীয় সরকার এবং আইন দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য নির্বাচন ও উপ-নির্বাচন পরিচালনা; জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুত ও বিতরণ, ছবিসহ ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণের কার্যক্রম; পেপার লেমিনেটেড জাতীয় পরিচয়পত্র প্রস্তুত, মুদ্রণ ও বিতরণ এবং সেবা দেওয়া, নতুন নাগরিক নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ, এনআইডি সিস্টেমের অডিট ও ডকুমেন্টেশন, প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রবাসেই নিবন্ধনকরণ ও স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ, নির্বাচন কমিশনের প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন এবং নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচনি ব্যবস্থাপনায় আইসিটি ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক সভা-সেমিনার-ওয়ার্কশপের আয়োজনসহ ইসি সচিবালয়ের নানা কার্যক্রম।
উল্লেখ্য, গত ১২ ফেব্রুয়ারি আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশন প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছিল। এর মধ্যে শুধু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ইসির চাহিদা ছিল প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এ ছাড়া স্থানীয় সরকারের ৫ স্তরের নির্বাচনের জন্য ইসি কাঙ্ক্ষিত বরাদ্দ ছিল ৩ হাজার কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, এবারের প্রস্তাবিত বাজেটে নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম লক্ষ্য হলো একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করা এবং গণতান্ত্রিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর। গত দেড় দশকে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এজন্য নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কারকে তারা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। একই সঙ্গে নির্বাচনি ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সংস্কারের লক্ষ্যে বিভিন্ন আইন, নীতিমালা, ও আদেশ সংশোধন ও সংস্কারের কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে।’