নাহিদ ইসলাম,রাজশাহী ব্যুরো:
রাজশাহীর বাজারে বিক্রি হওয়া ফল-সবজিতে অনিরাপদ মাত্রার রাসায়নিক অ্যানিয়নের উপস্থিতি শনাক্ত করেছে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা। এতে বাংলাদেশে সারের ব্যবহার, সেচ পদ্ধতি এবং খাদ্য নিরাপত্তা তদারকি ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।
গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক পিয়ার-রিভিউ জার্নাল ফুড কেমিস্ট্রি অ্যাডভান্সেসে প্রকাশিত গবেষণায় রাজশাহীর বাজার থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন ফল ও সবজিতে ছয়টি সাধারণ অ্যানিয়ন ফ্লোরাইড, ক্লোরাইড, নাইট্রাইট, নাইট্রেট, ফসফেট ও সালফেটের মাত্রা বিশ্লেষণ করা হয়। গবেষণার মূল ফোকাস ছিল নাইট্রেট, নাইট্রাইট ও ফসফেট দূষণ। আয়ন ক্রোমাটোগ্রাফি পদ্ধতি ব্যবহার করে বাংলাদেশ বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), প্রযুক্তি স্থানান্তর ও উদ্ভাবন ইনস্টিটিউট এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখতে পান, একাধিক নমুনায় এসব রাসায়নিকের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও খাদ্য ও কৃষি সংস্থা নির্ধারিত নিরাপদ সীমা অতিক্রম করেছে।
গবেষণা অনুযায়ী, শাক ও সবজি বিশেষ করে পালং শাক, লেটুসসহ অন্যান্য সবুজ শাকে ছয়টি অ্যানিয়নের সর্বোচ্চ ঘনত্ব পাওয়া গেছে। গবেষকরা এর জন্য নিবিড় কৃষি ব্যবস্থায় নাইট্রোজেন ভিত্তিক সারের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে গবেষণায়।
তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ভারতে মরক্কো ও পশ্চিমবঙ্গের অনুরূপ গবেষণার তুলনায় রাজশাহীর শাকসবজিতে বিশেষ করে পাতাযুক্ত ও ফসলে ফ্লোরাইডের মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, মূলা ও করলাসহ বেশ কয়েকটি সবজিতে নাইট্রেটের মাত্রা বেশি পাওয়া গেছে, যেখানে পেঁপেতে নাইট্রেটের ঘনত্ব ছিল সর্বোচ্চ। সামগ্রিকভাবে নাইট্রেটের মাত্রা বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল, এমনকি চীন ও নাইজেরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের তুলনায় সমান বা বেশি।
একাধিক নমুনায় ফসফেট ও সালফেটের উচ্চ উপস্থিতি ধরা পড়েছে। কলা ও লাল পালং শাকে এ দুটি অ্যানিয়নের মাত্রা ছিল তুলনামূলক বেশি। সব নমুনাতে ক্লোরাইড শনাক্ত হয়েছে; ফলের মধ্যে খেজুর এবং সবজির মধ্যে পালং শাকের মাত্রা ছিল সর্বোচ্চ।
গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে গত কয়েক বছরে দেশে সারের ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পেলেও সুষম পুষ্টি ব্যবস্থাপনা ও অবশিষ্টাংশ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণ সে হারে বাড়েনি। এর ফলে ভোজ্য উদ্ভিদের টিস্যুতে অতিরিক্ত নাইট্রেট জমে খাদ্য শৃঙ্খলে প্রবেশ করছে।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি হিসেবে গবেষণায় দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে এসব অ্যানিয়নের সংস্পর্শে আসার ঝুঁকি সূচক প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুর উভয়ের জন্য গ্রহণযোগ্য সীমা ছাড়িয়ে গেছে। যা সম্ভাব্য অ-ক্যান্সারজনিত স্বাস্থ্য ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়। শরীরের ওজন তুলনামূলক কম হওয়া এবং ওজনের তুলনায় বেশি খাবার গ্রহণের কারণে শিশুরা বিশেষভাবে ঝুঁকিতে রয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক শঙ্কর কে বিশ্বাস বলেন, মানবদেহে নাইট্রেট ও নাইট্রাইট থেকে কার্সিনোজেনিক নাইট্রোসামিন তৈরি হতে পারে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ফ্লোরাইড, ফসফেট ও সালফেটের দীর্ঘস্থায়ী সংস্পর্শ কিডনি, হৃদরোগ এবং পরিপাকতন্ত্রের জটিলতার সঙ্গে যুক্ত।
গবেষণাটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা শাসনে বড় ধরনের ঘাটতির চিত্র তুলে ধরেছে। এতে বলা হয়েছে, রাসায়নিক অবশিষ্টাংশ পরীক্ষা এখনো বিক্ষিপ্ত এবং মূলত একাডেমিক গবেষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ। বাজারে বিক্রি হওয়া খাবারে নাইট্রেটসহ অন্যান্য রাসায়নিক পর্যবেক্ষণের জন্য কোনো সমন্বিত জাতীয় নজরদারি ব্যবস্থা নেই।
গবেষণার সংশ্লিষ্ট লেখক ও বিসিএসআইআর রাজশাহী ল্যাবরেটরির বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম বলেন, সার ব্যবহার, খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব একাধিক সংস্থার মধ্যে বিভক্ত থাকায় জবাবদিহিতা ও প্রয়োগ দুর্বল হয়ে পড়েছে। খাদ্য সুরক্ষা আইন থাকলেও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পরীক্ষাগারের সক্ষমতা সীমিত এবং পাইকারি বাজারে খাদ্য প্রবেশের আগে বাধ্যতামূলক পরীক্ষা কার্যত অনুপস্থিত।
গবেষকরা নাইট্রোজেন সার ব্যবহারে কঠোর নিয়ন্ত্রণ, কৃষকদের জন্য সুষম পুষ্টি ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক বিশ্লেষণ পদ্ধতির মাধ্যমে নিয়মিত খাদ্য পরীক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন এ গবেষক। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে খাদ্যে নাইট্রেটের সর্বোচ্চ অবশিষ্টাংশ সীমা নির্ধারণ এবং বাংলাদেশ খাদ্য সুরক্ষা কর্তৃপক্ষ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও জনস্বাস্থ্য সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরদারের সুপারিশ করা হয়েছে।
মোঃ কামরুজ্জামান মিলন
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক তুহিন প্রিন্টিং প্রেস ফকিরাপুল ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ই-মেইল: 𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
ই-পেপার: 𝐞𝐩𝐚𝐩𝐞𝐫.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট: 𝐰𝐰𝐰.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
মোবাইল: ০১৯২৭-৩০২৮৫২/০১৭৫০-৬৬৭৬৫৪
আলোকিত মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড