
ফায়েজুল শরীফ,মাদারীপুর প্রতিনিধিঃ
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় তিন বছর আগে মৃত এক নারীকে জীবিত সাজিয়ে তার নামে থাকা ১.৬৬ শতাংশ জমি জালিয়াতির মাধ্যমে দলিল করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, এক দলিল লেখক ও তৎকালীন সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারীরা বলছেন, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এই জালিয়াতি করা হয়েছে।
মামলার সূত্র ও অভিযোগকারীর বক্তব্যে জানা গেছে সম্পত্তটির মূল মালিক ছিলেন রেহানা বেগম, যিনি ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর ঢাকায় মারা যান। তার মা মাহফুজা বেগমের মৃত্যুর পরে ওয়ারিশসূত্রে এ জমির মালিক হন রেহানা বেগম ও তার ভাই-বোনেরা। রেহানা বেগমের মরহুম পিতা নাদের আলী, মাতা মাহফুজা বেগম স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের অ্যাওজ গ্রামের। মৃত্যুর সময় তিনি ঢাকার বাসায় থাকতেন।জালিয়াতির জন্য যাকে রেহানা বেগম সাজানো হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে তার নাম সিমা আক্তার। তিনি মৃত রেহানা বেগমের বড় ভাইয়ের স্ত্রী। সিমা আক্তারের বাবার নাম আঃ লতিফ খন্দকার। তিনি মৃত রেহানার আইডি কার্ড চুরি করে ব্যবহার করেছেন। কালকিনি উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর মাসের ৪৫৮৩/২৪ নম্বর দলিলে এই জালিয়াতি সংঘটিত হয়। ১০ জন জমিদাতার মধ্যে মৃত রেহানা বেগমও একজন। জমিটি রেজিস্ট্রি করা হয় মোঃ বাবুল হাওলাদার ও কোহিনুর বেগমের নামে। স্থানীয় আওয়ামীললীগ নেতা নান্নু হাওলাদার, উপজেলা দলিল লেখক মিজানুর রহমান ও তৎকালীন সাব-রেজিস্ট্রার আহসানুল হক উক্ত জমি জাল-জালিয়াতির সাথে জড়িত। মৃত রেহানা বেগমের বোনের মেয়ে ফাতেমা আক্তার বাদী হয়ে মাদারীপুর আদালতে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করেছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, “আমার বড় মামানিকে আমার খালা রেহানা বেগম সাজিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আমার খালার জমি বিক্রি করে দিয়েছে তারা। এ সকল কাজের মূল নায়ক নান্নু হাওলাদার, তিনি আওয়ামী লীগের নেতা, এছাড়াও সাবেক সাব-রেজিষ্ট্রার আহসানুল হকও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এ কাজ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন। অন্যদিকে, জমিদাতা হিসেবে অভিযুক্ত সিমা আক্তারের স্বামী আবুল কালাম আজাদ স্বীকার করেন, জমির মালিক সাজাতে কয়েকজন তার পেছনে অনেকদিন যাবৎ ঘুরেছেন। জমি জালিয়াতি চক্রের প্রধান নান্নু হাওলাদারের এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আদালতে যেহেতু মামলা হয়েছে সেহেতু আমি যা বলার আদালতে বলবো। আরেক অভিযুক্ত সাবেক সাব-রেজিষ্ট্রার আহসানুল হক বলেন, জমিদাতার নামের সামান্য তারতম্য আছে। তবে এটা কোনো বিষয় না। এ বিষয়ে আমি কোনো কথা বলতে চাচ্ছি না। দলিল লেখকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে তিনি জানান, দলিল লেখক তথ্য গোপন করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে আদালত কর্তৃক মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের জন্য নির্দেশ দিলে তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি অফিসার বাবুল হোসেন জানান, তদন্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে আদালতই পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।