নাহিদ ইসলাম, রাজশাহী ব্যুরো:
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) রাষ্ট্রীয় সেবাদানকারী একটি সংস্থা, যেখানে নিয়ম, শৃঙ্খলা ও জবাবদিহির কথা বলাই ছিল মূল দর্শন। অথচ বাস্তব চিত্র ভিন্ন। বছরের পর বছর ধরে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত এই প্রতিষ্ঠানের ভেতর এখন সবচেয়ে আলোচিত নাম পার্কন চৌধুরী। অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ, গুরুতর এবং ভয়াবহ কিন্তু বিস্ময়করভাবে তিনি এখনও বহাল, নির্বিঘ্ন এবং কার্যত প্রশ্নাতীত। বর্তমানে তিনি বিআরটিএর রাজশাহী বিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এবং একই সঙ্গে রংপুর বিভাগের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন। এই দ্বৈত ক্ষমতাই কি তাঁকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে—সে প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বিআরটিএর অন্দরমহলে।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ে বিদেশগামীদের জরুরি লাইসেন্স সেবাকে কেন্দ্র করে একটি সংঘবদ্ধ অর্থ আদায়ের ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। নিয়মে যেখানে নির্ধারিত ফি’র বাইরে কোনো লেনদেনের সুযোগ নেই, বাস্তবে সেখানে অতিরিক্ত অর্থ না দিলে আবেদন কার্যত অচল হয়ে যায়। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ ফাইল আটকে রাখা হয়, অজুহাত তৈরি করা হয়, কখনো বলা হয় “সময় লাগবে”, কখনো “উপর থেকে নির্দেশ নেই”। শেষ পর্যন্ত বার্তাটি পরিষ্কার—টাকা না দিলে কাজ হবে না।
সূত্র বলছে, এই লেনদেনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন হিসাব রক্ষক মোহাম্মদ আলি—যাঁকে পাশ কাটিয়ে কোনো ফাইল এগোয় না। পার্কন চৌধুরী ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা মেট্রো–৪–এর উপপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় প্রশিক্ষণ খাতে বরাদ্দ ছিল প্রায় তিন কোটি টাকার কাছাকাছি। অভিযোগ উঠেছে, এই অর্থ ব্যয় হয়েছে এমন সব প্রশিক্ষণে—যেগুলোর বাস্তব অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে।
অনুসন্ধানে পাওয়া অভিযোগ অনুযায়ী,প্রকৃত অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা কম, কাগজে দেখানো হয়েছে অতিরিক্ত। বাস্তবে না হওয়া প্রশিক্ষণকে কাগজে ‘সম্পন্ন’ দেখানো। সব মিলিয়ে, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম যেন হয়ে উঠেছিল সরকারি অর্থ উত্তোলনের নিরাপদ খাত।
সবচেয়ে ভয়ংকর দিক হলো এই অনিয়মের কিছু চিহ্ন অডিটে ধরা পড়লেও তার পরিণতি শূন্য। কোনো তদন্ত কমিটি হয়নি, কোনো জবাবদিহি হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, অডিট রিপোর্টের ধারই ভেঙে ফেলা হয়েছে প্রভাব খাটিয়ে।একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,“যখনই ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়, তখনই ফাইল থেমে যায়। অডিট চুপ হয়ে যায়। এটা কাকতাল নয়।”
ঢাকা মেট্রো–৪–এর সেই অভিজ্ঞতা এখন রাজশাহী ও রংপুরে আরও শক্তভাবে প্রয়োগ হচ্ছে—এমনটাই বলছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে রংপুর সার্কেলে পরিদর্শন টুর মানেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক।
তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী, পরিদর্শনের আগেই ঠিক হয়ে যায়—কে কত টাকা দেবে। কাগজপত্র দেখা নয়, মূল কাজ অর্থ আদায়। টাকা না দিলে ফাইল আটকে রাখা হয়, বদলির ভয় দেখানো হয়, প্রশাসনিক চাপ সৃষ্টি করা হয়।
রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ে একটি সংঘবদ্ধ বিল–ভাউচার সিন্ডিকেট সক্রিয় থাকার অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন ব্যয়ের নামে ভুয়া ও অতিরিক্ত দামের ভাউচার তৈরি করে অর্থ উত্তোলন করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ পার্কন চৌধুরী ও হিসাব রক্ষক মোহাম্মদ আলির বিরুদ্ধে।
তাঁদের দাবি, এই প্রক্রিয়ায় পার্কন চৌধুরী ও হিসাব রক্ষক মোহাম্মদ আলি ছাড়া অন্য কেউ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সাহস করেন না। ফলে পুরো দপ্তর কার্যত একটি ভয়ভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মধ্যে চলছে।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, যাঁরা অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলার চেষ্টা করেছেন, তাঁদের বদলি, শোকজ কিংবা মানসিক চাপে রাখা হয়েছে। ফলে বিআরটিএতে এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াই সবচেয়ে বড় ঝুঁকি।এক কর্মকর্তা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন,“এখানে নিয়ম নয়, নেটওয়ার্কই শেষ কথা।”
এত গুরুতর অভিযোগ, অভ্যন্তরীণ প্রতিবাদ ও অডিট প্রশ্ন থাকা সত্ত্বেও কেন এখনো তদন্ত কমিটি হয়নি? যায়নি দুদকে কোনো রেফারেন্স। কার ছত্রচ্ছায়ায় পার্কন চৌধুরী এতটা নিরাপদ?এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না দিয়ে পার্কন চৌধুরীকে বহাল রাখার অর্থ কিদুর্নীতির প্রতি নীরব সম্মতি?
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পার্কন চৌধুরী সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,“আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
যোগাযোগ করা হলে হিসাব রক্ষক মোহাম্মদ আলি বলেন,“অফিসে এসে কথা বলুন। অফিসের নিয়মের বাইরে কিছু বলতে পারব না।
মোঃ কামরুজ্জামান মিলন
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক তুহিন প্রিন্টিং প্রেস ফকিরাপুল ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ই-মেইল: 𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
ই-পেপার: 𝐞𝐩𝐚𝐩𝐞𝐫.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট: 𝐰𝐰𝐰.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
মোবাইল: ০১৯২৭-৩০২৮৫২/০১৭৫০-৬৬৭৬৫৪
আলোকিত মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড