কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি:
রাজধানীর কেরানীগঞ্জের আগানগর এলাকায় অবস্থিত জাবালে নুর সুপার মার্কেট কাম আবাসিক ভবনে লাগা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এখনও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মোট ১৫টি ইউনিট একযোগে কাজ করছে। এ পর্যন্ত ভবনটি থেকে ৪২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে ঘটনাস্থলে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. তাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব তথ্য জানান।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, ভবনটির বেজমেন্টে থাকা একটি জুটের গোডাউন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ভবনের নিচতলায় জুট, পোশাকসহ বিভিন্ন গুদাম থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ঘন ধোঁয়ায় পুরো ভবন ঢেকে যায়।
তিনি বলেন, “ধোঁয়ার কারণে উদ্ধার অভিযান ও আগুন নেভানোর কাজে চরম বেগ পেতে হচ্ছে। বেজমেন্টে থাকা প্রতিটি গোডাউনের শাটার ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে আগুন নেভাতে হচ্ছে। তবে আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি যে আগুন আশপাশের ভবনে ছড়িয়ে পড়েনি।”
ফায়ার সার্ভিস জানায়, ঘটনাস্থলে কোনো ধরনের কেমিক্যালের অস্তিত্ব বা বিস্ফোরণের আলামত পাওয়া যায়নি। ফলে আগুনের মাত্রা আরও ভয়াবহ রূপ নেওয়ার আশঙ্কা আপাতত নেই।
অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতা ও জননিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। তারা উদ্ধারকাজ, ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায় , ভবনের ওপরের তলাগুলোতে বসবাসকারী বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে এখনও কেউ ভেতরে আটকা রয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত করতে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।অভিযান শেষে সব কিছু নিশ্চিত ভাবে জানা যাবে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন শেষে কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. উমর ফারুক বলেন, “ভবনটির অনুমোদন সংক্রান্ত কাগজপত্র যাচাই করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে, এই ভবনে বিল্ডিং কোড মানা হয়নি। গ্যারেজের জন্য নির্ধারিত জায়গায় গোডাউন তৈরি করা হয়েছে, যা আইনের সুস্পষ্ট ব্যত্যয়।”
তিনি আরও জানান, “এই ঘটনায় পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর ভবন মালিকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভোরের সময় আগুন লাগায় বড় ধরনের প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব হয়েছে। তবে দিনের ব্যস্ত সময়ে এ ধরনের ভবনে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে তা ভয়াবহ রূপ নিতে পারত বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
কেরানীগঞ্জের আগানগর—‘গার্মেন্টস পল্লি’ নামে পরিচিত এই এলাকায় অগ্নিকাণ্ড যেন আর কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়, বরং এক নির্মম বাস্তবতা। বারবার আগুন লাগে, প্রতিবারই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, কিছুদিন তৎপরতা দেখা যায়। এরপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু ধীরে ধীরে বিস্মৃতির আড়ালে চলে যায়। স্থানীয় মানুষ, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট সবাই যেন আবারও আগের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ফিরে যায়।
সাম্প্রতিক এই অগ্নিকাণ্ড আবারও নগ্নভাবে সামনে এনে দিয়েছে—বিল্ডিং কোড উপেক্ষা, অনুমোদনবহির্ভূত গোডাউন এবং কার্যকর অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি রাজধানীর জননিরাপত্তাকে কতটা ভয়াবহ ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। কাগজে-কলমে নিয়ম থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ না থাকলে এসব তদন্ত আর আশ্বাস কেবল আনুষ্ঠানিকতা হয়েই থেকে যায়।
এই ঘটনা স্পষ্ট করে দিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডকে আর ‘দুর্ঘটনা’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এটি একটি কাঠামোগত ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি। তদন্তের ফলাফলের ভিত্তিতে যদি দৃষ্টান্তমূলক ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তবে আগানগরের মতো ঘনবসতিপূর্ণ শিল্পাঞ্চলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় শুধু সময়ের অপেক্ষা—যার মূল্য দিতে হতে পারে অসংখ্য নিরীহ প্রাণ দিয়ে।
মোঃ কামরুজ্জামান মিলন
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক তুহিন প্রিন্টিং প্রেস ফকিরাপুল ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ই-মেইল: 𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
ই-পেপার: 𝐞𝐩𝐚𝐩𝐞𝐫.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট: 𝐰𝐰𝐰.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
মোবাইল: ০১৯২৭-৩০২৮৫২/০১৭৫০-৬৬৭৬৫৪
আলোকিত মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড