
নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধিঃ
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের পরিত্যক্ত গ্রামগুলোতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মি (এএ)। স্থানীয় সূত্র ও মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের বরাতে জানা গেছে, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা বাড়িঘর, মসজিদ ও সামাজিক অবকাঠামো ভেঙে সেখানে নতুন বসতি, সামরিক স্থাপনা এবং প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করছে সংগঠনটি।
গত কয়েক বছর ধরে মিয়ানমারের দমন-পীড়নের মুখে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। তাদের গ্রামগুলো ফাঁকা হয়ে যাওয়ার পর সরকারপন্থী বাহিনী এবং কিছু ক্ষেত্রে বিদ্রোহী গোষ্ঠী এসব এলাকায় নিজস্ব প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি রাখাইনের বুথিডং, মংডু ও রাথেদং টাউনশিপে আরাকান আর্মি ব্যাপক নির্মাণকাজ শুরু করেছে বলে জানা যায়। স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা গ্রামগুলোর ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে ফেলে সেখানে নতুন ইট-পাথরের ভবন তৈরি করা হচ্ছে। নতুন নির্মাণগুলোর বেশিরভাগই সামরিক ঘাঁটি, গোয়েন্দা চেকপোস্ট, কিংবা আরাকান আর্মির প্রশাসনিক কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, রোহিঙ্গাদের ফেলে আসা ভূমিতে এ ধরনের নির্মাণ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল। কেননা এটি ভবিষ্যতে রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায় ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা আরও কমিয়ে দিচ্ছে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে আরাকান আর্মির এই ভূমি দখলকরণ প্রক্রিয়া রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পিত নিপীড়নেরই অংশ।
রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি বর্তমানে অত্যন্ত জটিল। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা, আরাকান আর্মি এবং বিভিন্ন স্থানীয় গোষ্ঠীর সংঘর্ষের কারণে সাধারণ মানুষের জীবন আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, রোহিঙ্গা গ্রামগুলো দখল করে আরাকান আর্মি তাদের ভৌগোলিক নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করতে চাইছে।
বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা নেতারাও এ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি—“আমরা ঘরে ফেরার কথা ভাবলেও এখন আমাদের ঘরবাড়ি, জমিজমা সব ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। ফিরে গেলে আমরা কোথায় থাকব?”
আন্তর্জাতিক মহল বিষয়টি নিয়ে এখনও কোনো শক্ত অবস্থান নেয়নি।