ড. আব্দুল ওয়াদুদ.
১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। Human Rights: Our Everyday Essentials এই স্লোগানে বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হচ্ছে দিবসটি।
বিগত বিংশ শতাব্দী এবং বর্তমান একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে জটিল মানবীয় বিষয় হলো মানবাধিকার। বর্তমানে তা এক বিরাট চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। মানবাধিকার এখন আধুনিক সভ্য মানুষের মূলমন্ত্র ও আদর্শ এবং তার পরিচিতি ও মর্যাদার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন নীতিনির্ধারণ করার ক্ষেত্রে মানবাধিকার থেকে উদ্ভূত বিভিন্ন ধরনের পরিভাষা, যেমন মৌলিক স্বাধীনতা, আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার এবং মানবীয় আচার-আচরণ, এমনকি নারী অধিকার ইত্যাদির ব্যাপক প্রভাব ও কার্যকারিতা রয়েছে। কিন্তু এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, আসলে কি বর্তমান বিশ্বে প্রকৃত মানবাধিকার সংরক্ষিত ও বাস্তবায়িত হয়েছে বা হচ্ছে? আজ বিশ্বে মানবাধিকার বলে যা কিছু করা হচ্ছে বা বলা হচ্ছে, আসলে তা প্রকৃত ও পূর্ণাঙ্গ মানবাধিকার নয়; বরং তা হচ্ছে খণ্ডিত। প্রকৃত মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণ কেবল তখনই সম্ভব হবে, যখন তা ‘মানুষ’ সংক্রান্ত প্রকৃত বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি ও দর্শন থেকে উৎসারিত হবে। এ নিয়ে বিতর্ক নেই যে, ফিলিস্তিনে পৈশাচিক গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে জায়নবাদী ইসরায়েলের ঘৃণ্য আগ্রাসনে। এখন সেখানে সাময়িক যুদ্ধবিরতি চলছে। একে একে বের হচ্ছে ধ্বংসযজ্ঞের আরো বীভৎস খবর। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলি হামলায় এক লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের নতুন গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
২৫ নভেম্বর ২০২৫ এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা আনাদোলু।
বার্তাসংস্থাটি বলছে, গাজায় চলমান যুদ্ধে মৃতের সংখ্যা এতদিন যা ধারণা করা হচ্ছিল, বাস্তবে তা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে সোমবার জার্মান সাপ্তাহিক পত্রিকা জাইট প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জার্মানির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরনগরী রস্টকের খ্যাতনামা ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ডেমোগ্রাফিক রিসার্চের একদল গবেষকের হিসাব অনুযায়ী, দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধে অন্তত এক লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটেছে বা নিহত হয়েছে।
গবেষণা প্রকল্পটির কো-লিডার ইরিনা চেন জানান, সঠিক মৃতের সংখ্যা আমরা কখনোই জানতে পারব না। আমরা শুধু যতটা সম্ভব বাস্তবসম্মত একটি অনুমান করতে চেষ্টা করছি। গবেষকদের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধের প্রথম দুই বছরে গাজা উপত্যকায় ৯৯ হাজার ৯৯৭ থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার ৯১৫ জন মানুষের মৃত্যু ঘটেছে বা তারা নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যবর্তী বা গড় অনুমান ১ লাখ ১২ হাজার ৬৯ জন। ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের গবেষকরা বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে পরিসংখ্যানগত এই চিত্র তৈরি করেছেন। গাজাভিত্তিক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যের পাশাপাশি তারা একটি স্বাধীন পরিবারভিত্তিক সমীক্ষা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত মৃত্যুসংবাদও এই বিশ্লেষণে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষত ভোগাচ্ছে সমগ্র বিশ্বকে। সাম্প্রতিক সময়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বিশ্বকে অস্থির করে রেখেছে। যুদ্ধ মানেই মানবাধিকারের পরম লঙ্ঘন। নির্বিচারে সাধারণ মানুষ হতাহত হচ্ছে। জীবনই যেখানে বিপন্ন সেখানে মানবাধিকারের সাধারণ হিসাব আর কি করা যায়? আর এসব বিশ্ব মোড়লদের আজব কূটচাল। অস্ত্র ব্যবসায়ীদের অন্যরকম ব্যবসায়িক ক্রিয়াকলাপ বিশ্ব শাসনের অদ্ভুত এক চলমান খেলা। চারপাশে মানবতা নীরবে-নিভৃতে কাঁদছে; কিন্তু শোনার কিংবা দেখার কেউ নেই। দুনিয়ার নিরীহ নিরস্ত্র মানুষ আজ জালিম শোষক-অস্ত্রবাজ শক্তির হাতে জিম্মি। প্রকৃতপক্ষে নিরীহ জনগণের অধিকার নিয়ে দুনিয়াব্যাপী যাদের কথা বলার সামর্থ্য আছে, তারা কিন্তু জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসছে না।
মানবতা ও মানবাধিকারের বিচারে বর্তমান বিশ্ব এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সুদান, কঙ্গো, ইথিওপিয়া, সোমালিয়াসহ কয়েকটি দেশে চলছে জাতিগত নিধনযজ্ঞ। মানবতাবাদী মানুষ পৃথিবীতে যুদ্ধ চায় না। শান্তিবাদী মানুষ যুদ্ধের বিরুদ্ধে সোচ্চার। যুদ্ধ বিগ্রহ থেকে মুক্তি চায় শান্তি প্রত্যাশী মানুষ। কিন্তু কিছু মানুষ যদি মুক্তির পথে না হেঁটে অকারণে যুদ্ধে জড়ায়, অস্ত্রের ভাষায় কথা বলে- তাহলে বন্ধ হবে না রক্তপাত।
জাতি সংঘের মতো সংস্থাও যেন ‘দর্শকে পরিণত হয়েছে’। সংঘাত প্রতিরোধে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয়েছে ঐতিহাসিক সনদ ম্যাগনাকার্টা, জাতিসংঘ সনদ ও সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার সব মন্ত্রই। ৭৫ বছর ধরে ফিলিস্তিনের অধিকার নিয়ে খেলছে ইসরাইল। ধর্ম পালনের অধিকার, ভূমির অধিকারসহ প্রায় সব অধিকারই কেড়ে নিয়েছে। সর্বাধুনিক অস্ত্র দিয়ে জীবনগুলোও কেড়ে নিচ্ছে।
আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের উপর নির্বিচারে চলছে অমানবিক নির্যাতন। মিয়ানমার সেনাদের বর্বরতা সভ্যতার ইতিহাসকে হার মানিয়েছে। নিরস্ত্র রোহিঙ্গাদের গুলি করে ও পুড়িয়ে হত্যা, গুম, ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের বিষয়টি বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তুলেছে। এগারো লাখের অধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। রোহিঙ্গাদের নিজ বাসভূমে ফিরে যাওয়া এখনো অনিশ্চিত। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন দেশের তৎপরতাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ কার্য করে মিয়ানমার সরকারের দীর্ঘ সূত্রতা, অনীহা ও তালবাহানা বিশ্বের বিবেকবান মানুষ মেনে নিতে পারছে না। রোহিঙ্গাদের মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন তথা তাদের বাস্তুচ্যুত করার পরও মিয়ানমার কোনো ক্ষমা চায়নি। কাশ্মীরেও চলছে অকথ্য নির্যাতন। আগ্রাসনবাদী দখলদারদের হাত থেকে মুক্তি মিলছে না শান্তিপ্রিয় জনগণের। তাই তারা-লড়াকু হয়ে উঠছে। নির্যাতন থেকে বাঁচতে তারাও মরণপণ আজ।
সারাবিশ্বেই মানবতা ও মানবাধিকার এখন হুমকির মুখে। সবখানেই অধিকার লঙ্ঘনের মহোৎসব, এক অরাজক পরিস্থিতি। স্বাভাবিকভাবে জীবন ধারণের অধিকার হারিয়েছে মানুষ। নেই খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের অধিকার। পরিকল্পিতভাবে চালানো হচ্ছে গণহত্যা। নির্বিচারে বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে লাখ লাখ নিরীহ ও নিরপরাধ মানুষকে। চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে অন্যায় যুদ্ধ। ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হচ্ছে মানুষ। এক কথায়, একখণ্ড নরকূপে হয়ে উঠছে পৃথিবী। শুধু ক্ষমতার লোভে বিশ্বজুড়ে ধ্বংসলীলায় মেতেছে বিশ্বের রাজনীতিকরা। একদিকে মানবতার বুলি আওড়াচ্ছে, অন্যদিকে মানুষ হত্যার বলি চালিয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি মানবাধিকার হরণ করছে মানবতার রক্ষকরাই।
নির্যাতিত মানুষের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে ‘বিশ্বমানবতার বিবেক’ জাতিসংঘের মতো সংস্থাগুলো। সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা এখন ‘একপ্রস্থ কাগজ ছাড়া আর কিছুই নয়’।
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত ও অবহেলিত প্রসঙ্গটি সম্ভবত মানবাধিকার। একদিকে যখন মানবাধিকার উন্নয়নে ব্যস্ত পুরো পৃথিবী, অন্যদিকে ঠিক তেমনি মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহু ঘটনাও ঘটে চলেছে চারপাশে। বৈশ্বিক সব রকম অস্থিরতার জন্য মানুষই দায়ী। আবার এও সত্য যে, এর সবচেয়ে বড় শিকার মানুষ নিজেই!
মানবাধিকার শব্দটিকে ভাঙলে দুটি শব্দ পাওয়া যাবে—‘মানব’ এবং ‘অধিকার’। অর্থাৎ, মানুষের অধিকার। সাধারণত মানবাধিকার বলতে মানুষের সেসব অধিকারকে বোঝায়, যা নিয়ে সে জন্মগ্রহণ করে, যা তাকে বিশিষ্টতা দান করে। এসব বিষয় হরণ করলে সে আর মানুষ থাকে না। অর্থাৎ, মানুষের মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য যে অধিকারগুলো দরকার, তা-ই মানবাধিকার। এই অধিকারগুলো সহজ, স্বাভাবিক ও সহজাত। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য এবং সামাজিক জীব হিসেবে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য মানবাধিকার অপরিহার্য। মানবাধিকার প্রত্যেক ব্যক্তির মর্যাদাকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের মধ্যেই নিহিত।
১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বিশ্বজনীন মানবাধিকারের একটি সাধাারণ ঘোষনাপত্র প্রনয়ন করে। উক্ত ঘোষণাপত্রে ২৫টি মানবাধিকারের কথা হয়েছে, সব অধিকারসমূহই “মানবাধিকার” নামে আখ্যায়িত হয়। এ ২৫টি অধিকারের মধ্যে ১৯টি হলো পৌর ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত, আর বাকি ৬টি হলো অর্থনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সম্পর্কিত।
নাগরিক অধিকার বলতে এসব অধিকারকে বুঝায়, যা মানবাধিকারের অন্তর্ভূক্ত নয়। যেমন-বানিজ্য করার অধিকার, কোম্পানি গঠন করার অধিকার, বীমা করার অধিকার এগুলো মানবাধিকার নয়। বরং নাগরিক অধিকার। কেননা মানবাধিকারের মধ্যে যে প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেগুলো সবই মানবাধিকারের তত্ত্বগত দিক, বাস্তব চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারণ বাস্তবে মানবাধিকার বিশ্বব্যাপী সর্বত্রই কম-বেশি লঙ্ঘিত হচ্ছে, অনেক মানবাধিকার সরকার ছিনিয়ে নিতে পারে, যেমন জাতীয়তার অধিকার, সম্পত্তির অধিকার ইত্যাদি। আসল কথা হচ্ছে “মানবাধিকার” কোনো আইনগত ধারনা নয়, বরঞ্চ এটি একটি আন্তর্জাতিক আইনের বিষয় বটে। তাই কোনো মানবাধিকারকে যখন দেশের সংবিধানে বা positive আইনে স্বীকৃতি দিয়ে বলবৎকরণের ব্যবস্থা করা হয়, তখনই মানবাধিকার আইনগত অধিকারে পরিনত হয়। যে কারনে মানবাধিকারকে প্রকৃত অর্থে সার্বজনীন নৈতিক অধিকার (Universal moral Right) বলা সঙ্গত হয়।
মানবাধিকারের প্রধানত ২টি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়, যথা-
১। সার্বজনীন সহজাততা (Universal inference)
২। অহস্তান্তরযোগ্যতা (Inalienability)
বিশেষত উক্ত দুই প্রধান বৈশিষ্ট্যের কারণে মানবাধিকার অন্যান্য অধিকার থেকে অনেক পৃথক প্রকৃতির হয়ে থাকে। সার্বজনীন সহজাততা বলতে বুঝায় যে, কোনো ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করা মাত্র যেসব অধিকারগুলো দাবি করতে পারে। অহস্তান্তরযোগ্যতা বলতে এটিই বুঝায়, যেসব অধিকারগুলোকে কেউ ছিনিয়ে নিতে পারে না। এ অর্থে মানবাধিকাগেুলো নাগরিক অধিকার থেকে পৃথক প্রকৃতির হয়। যদিও নাগরিক অধিকারগুলো দেশের positive law দ্বারা স্বীকৃত, আর রাষ্ট্র এগুলোকে ছিনিয়ে নিতে পারে। কিন্তু মানবাধিকারগুলো রাষ্ট্র জন্মলাভ করার পূর্ব থেকেই বিরাজ করে বিধায় এগুলোকে ছিনিয়ে নেওয়া অসম্ভব।
যে কোনো দেশের সংবিধানে স্বীকৃত এবং আদালতের মাধ্যমে বলবৎকর ও কার্যকরযোগ্য অধিকারসমূহকে “মৌলিক অধিকার” বলে। প্রকৃত অর্থে সব মৌলিক অধিকারই মানবাধিকার। তাই মানবাধিকারের অন্তর্গত যেসব অধিকার সংবিধানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে এবং সাংবিধানিক নিশ্চয়তা দ্বারা সংরক্ষণ করা হয় তাই মৌলিক অধিকার। আইনগত ও নৈতিক অধিকারগুলোর মধ্যে সেগুলোই মানবাধিকার যেগুলো পৃথিবীর সব মানুষ শুধু মানুষ হিসেবে দাবি করতে পারে। এ অধিকারগুলো কোনো দেশ বা কালের সীমানায় আবদ্ধ নয়, এগুলো চিরন্তন এবং সার্বজনীন। পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ প্রকৃতিগতভাবে এ অধিকারগুলো নিয়েই জন্মগ্রহণ করে থাকে।
বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের প্রাপ্য অধিকার ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী জনগণের প্রাপ্য স্বীকৃতি ও মর্যাদা অনেকাংশে অর্জিত হলেও তা সন্তোষজনক নয়। এদিকে, সমাজে দলিত মানুষের অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হলেও এখনো তা কাঙ্খিত মাত্রার ধারেকাছে নয়। রাষ্ট্র সংবিধানে নারীদের জন্য নীতিমালা ও আইন করেছে তবুও এই দেশে নারীরা অনেক ক্ষেত্রে অবহেলিত, এদেশের শিশু, প্রবীণ, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীরাও মৌলিক অধিকার থেকে সুবিধাবঞ্চিত, প্রতিনিয়ত হচ্ছে অত্যাচার, বঞ্চনা আর অবহেলার শিকার। এই অবহেলার প্রবৃত্তিরও সামাজিকরণও হয়েছে যুগ যুগ ধরে দেশ, জাতি ও ধর্ম নির্বিশেষে। তাই মানাবধিকার সনদ বা রাষ্ট্রীয় আইন ও নীতিমালা থাকা সত্ত্বেও পদে পদে লংঘিত হয় এসব মানুষের অধিকার। আমাদের আশেপাশে এমন কিছু মানুষ রয়েছে যেমন- মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী,হিজড়া, যৌনকর্মী, সামাজিকভাবে চিহ্নিত নিম্ন সম্প্রদায় যেমন বেদে সম্প্রদায়, ঋষি সম্প্রদায় এবং আরও অনেকে; তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা খুব কমই উচ্চারিত হয়। অন্যদিকে পাহাড়ের কান্না ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা আজ চরম বিতর্কে রূপ নিয়েছে 'আদিবাসী' না 'উপজাতি' এ দুটো শব্দ নিয়ে। এই মানুষদের যারা বাংলাদেশেরই নাগরিক তাদের অবহেলিত রেখে, বঞ্চিত করে, তাদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা না করে কোন ভাবেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। প্রয়োজন তাদের উন্নয়নে সরকারের উপযোগী নীতিমালা গ্রহণ, প্রয়োজনে আইন ও নীতিমালার প্রয়োগ। আরও প্রয়োজন আমরা যারা সুবিধাভোগী আছি তাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা, সবাইকে সচেতন করে তোলা, সরকারকে সহযোগিতা করা। বাস্তব অর্থে তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ মানুষকে এ বিষয়ে জাগ্রত করা হচ্ছে না, যারা তাদের অধিকার সম্পর্কে অসচেতন এবং যার ফলে তারা কোন প্রতিকার পাচ্ছে না। বাস্তব অর্থে তৃণমূল পর্যায়ে মানবাধিকার বিষয়টি তুলে ধরতে হবে। উঁচু স্তরে সভা সেমিনার না করে মাঠ পর্যায়ে মানবাধিকারের তাৎপর্য তুলে ধরতে হবে।
মানবাধিকার বিষয়টি অনেকেরই অজানা, অচেনা। তাই মানবাধিকার বিষয়টি সরকারি কিংবা বেসরকারিভাবে মাঠ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। সকলকে অবগত করতে হবে তাদের অধিকার সম্পর্কে। এজন্য আমাদের সুশীল সমাজ ও মিডিয়াগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে মানবাধিকার সম্পর্কে জন সাধারণকে অবগত করতে ও অধিকার সচেতন করতে। আর যখনই সাধারণ মানুষ তাদের অধিকার সম্পর্কে অবগত ও সচেতন হবে তখনই প্রকৃত অর্থে প্রতিষ্ঠা পাবে মানবাধিকার এবং মানবাধিকার দিবসটি আমাদের জন্য বহুমুখী তাৎপর্য বয়ে আনবে।
মানবাধিকার রক্ষার দ্বায়িত্ব শুধু সরকারের নয়। সমাজের প্রতিটি বিভাগে প্রত্যেকটি মানুষের রয়েছে দ্বায়িত্ব, তার অধিকার বুঝে নেয়ার। শুধু ১০ ডিসেম্বর নয়, বছরের প্রতিটি দিনই মানবাধিকারের কথা বলতে হবে সবাইকে।
মানুষ বেঁচে থাকুক তার বাঁচার অধিকার নিয়ে। এই প্রত্যাশা আজ প্রতিটি বিবেকবান সচেতন মানুষের।
লেখক: ফিকামলি তত্ত্বের জনক,
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।
মোঃ কামরুজ্জামান মিলন
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক তুহিন প্রিন্টিং প্রেস ফকিরাপুল ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ই-মেইল: 𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
ই-পেপার: 𝐞𝐩𝐚𝐩𝐞𝐫.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট: 𝐰𝐰𝐰.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
মোবাইল: ০১৯২৭-৩০২৮৫২/০১৭৫০-৬৬৭৬৫৪
আলোকিত মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড