বাদল মিয়া,সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধিঃ
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল অরুয়াইল ও পাকশিমুল ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া চেত্রা নদী’র ওপর স্থায়ী সেতু নির্মাণ না হওয়ায় ভোগান্তিতে ১৫ টি গ্রামের লাখো জনতা। যার ফলে এখানকার মানুষদের নদী পারাপারে একমাত্র ভরসা ৭০০ ফুট বাঁশের সাঁকো।
সরজমিন থেকে জানা যায় , সরাইল উপজেলার অরুয়াইল-পাকশিমুল এ দু’টি ইউনিয়ন ছাড়াও কিশোরগঞ্জের ভৈরব ও বাজিতপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের মানুষ এ সাঁকো ব্যবহার করে থাকে। বর্ষা মৌসুমে নৌকা এবং শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হেটে যাতায়াত করেন তারা।
চেত্রা নদীর এই সেতুটির অভাবে চিকিৎসা, শিক্ষা’সহ নানা ধরণের সুবিধাবঞ্চিত স্থানীয়রা। বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে নানা দূর্ঘটনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৭ সালে রানীদিয়া গ্রামের রহমত আলী ও মজর মিয়া প্রায় দুই লাখ টাকা ব্যয়ে প্রথমে উপজেলার অরুয়াইল বাজারের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া চেত্রা নদীতে বিশাল এই সাঁকোটি নির্মাণ করেছিলেন। এরপর থেকে প্রতি বছর নভেম্বর মাসে প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ করে এই সাঁকোটি পুননির্মাণ করা হয়। শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৭ মাস লোকজন এই সাঁকো দিয়ে পারাপার হয়। জুনের মাঝামাঝি বর্ষায় পানি এলে সাঁকোটি আবার ভেঙে ফেলা হয়।
এ বিষয়ে রাণীদিয়া গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য ইসলাম উদ্দিন বলেন, নদীর দক্ষিণপাড়ের গ্রামগুলোতে প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া অন্য কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই। মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ নদীর উত্তরপাড়ের অরুয়াইলে গড়ে ওঠায় সেখানে যাতায়াত করতে সাঁকো পারি দিতে হচ্ছে। দীর্ঘ এই সাঁকো দেখে দূর-দূরান্তের লোকজন প্রথম দর্শনে আশ্চর্য্য ও অভিভূত হয়ে পড়েন। বছরের কার্তিক মাসে সাঁকোটি বসানো হয়। আর জ্যৈষ্ঠ মাসে উঠিয়ে ফেলা হয়। বছরের সাত মাস ১৫ গ্রামের লোকজন ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সাঁকো পারি দিয়ে যাতায়াত করেন।
সাঁকো পরিচালনার দায়িত্বে থাকা রাণীদিয়া গ্রামের নূর ইসলাম বলেন, প্রতিদিন এই সাঁকো দিয়ে প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার লোক যাতায়াত করেন। পণ্য সামগ্রী ও শিক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি থাকলেও অন্যদের কাছ থেকে পারাপারের ক্ষেত্রে পাঁচ টাকা আদায় করা হয়। ভুক্তভোগী গ্রামের লোকজন এখানে স্থায়ী একটি সেতু নির্মাণের দাবি করে এলেও আজ অবধি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
স্থানীয় লোকজন জানান, স্বাধীনতার পর প্রতিবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা এই নদীর উপর সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেতু নির্মাণ হয়ে ওঠেনি। নির্বাচনে ভোটের বাক্স পক্ষে নেয়ার জন্য জনগণ কে সেতু নির্মাণের মিথ্যা আশ্বাস দেয়া ছাড়া আর কিছু নয়। সবই তামাশার ফুল জুড়ি।
রাণীদিয়া গ্রামের শিক্ষক আবুল বাশার বলেন, ছেত্রা নদীর ওপর পাকা সেতু খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে পানির পরিমাপ, বাস্তবায়নযোগ্যতা যাচাই করে গেছেন। আমরা আশাবাদী আগামী প্রাক-একনেকে এখানে পাকা সেতু অনুমোদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, এলাকার কৃতিসন্তানরা এই বিষয়ে বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
এ বিষয়ে অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, এই বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ প্রতিনিয়ত যাতায়াত করে থাকে। আমি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের সময় থেকে দুই বার প্রকল্পের (পিডি) মহোদয়কে এনে সরজমিনে তদন্ত করিয়েছি এবং বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে আমি এখনও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ রাখছি, বাঁশের সাঁকোর স্থলে এখানে পাকা সেতু নির্মাণ করানোর জন্য।
ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, ছেত্রা নদীর ওপর একটি পাকা সেতু হলে ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াত সুবিধা উন্নয়নের পাশাপাশি কৃষি পণ্য পারাপারে সুবিধা হবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে। তাই জরুরি ভিত্তিতে এখানে পাকা সেতু নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
মোঃ কামরুজ্জামান মিলন
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক তুহিন প্রিন্টিং প্রেস ফকিরাপুল ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ই-মেইল: 𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
ই-পেপার: 𝐞𝐩𝐚𝐩𝐞𝐫.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট: 𝐰𝐰𝐰.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
মোবাইল: ০১৯২৭-৩০২৮৫২/০১৭৫০-৬৬৭৬৫৪
আলোকিত মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড