আলোকিত নিউজ ডেস্কঃ
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বদলি ও পদায়নের ক্ষমতা পরিপত্র অনুযায়ী বিভাগীয় কমিশনারদের হাতে। কিন্তু বুধবার (২৬ নভেম্বর) ইউএনও বদলি ও পদায়নের পরিপত্র লঙ্ঘন করে সারাদেশে ৮ বিভাগে ১৬৬ জন কর্মকর্তাকে সরাসরি পদায়ন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এক দিনেই এই বদলি হওয়ায় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা–সমালোচনাও চলছে। কারণ, সর্বশেষ গত ১৬ নভেম্বরেও জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার ইউএনও শামিমা আক্তার জাহানকে ময়মনসিংহ বিভাগে বদলির জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনারের অধীন ন্যস্ত করা হয়। এরপর ১০ দিন পরই সেই নিয়ম মানা হয়নি। কেন এই নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে সেবিষয়ে কিছুই বলা হয়নি গতকালের প্রজ্ঞাপনে। ফলে বদলিকৃত কর্মকর্তা ও বিভাগীয় কমিশনার এনিয়ে নানা রকম চিন্তা পড়েছে। কারণ, এবিষয়ে তাদেরও কোন নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। মাঠ প্রশাসনের হঠাৎ এই পরিবর্তন উত্তর খুঁজছেন অনেকে। কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কিছুই বলছেন না।
এবিষয়ে জানতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এহছানুল হককে মোবাইলে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, একসঙ্গে অনেকগুলো কর্মকর্তা বদলি করা হওয়ায় তাদের কর্মস্থল সরাসরি নির্ধারণ করা হয়েছে। যাতে কোন অব্যবস্থাপনা না হয়। ঝুঁকিমুক্ত থাকার জন্য জনপ্রশান এভাবে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রধান উপদেষ্টা লটারির মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইউএনওদের লোভনীয় পদ ঢাকা বিভাগের ইউএনও হওয়া। এবারের পদায়ন লটারি বলা হলেও ঢাকায় কর্মরতরাই ঢাকা বিভাগে পদায়ন পেয়েছন। এরমধ্যে ঢাকা ডিসি কার্যালয়, সচিবদের একান্ত সচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে কর্মরতরা বড় উপজেলায় পদায়ন পেয়েছন। ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় পদায়ন হওয়া ২৯ জনের মধ্যে ১৫ জনই সচিবালয়সহ ঢাকার মধ্যে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও ঢাকার আশে পাশে লোভনীয় অনেক উপজেলায় পদায়ন করা হয়নি।
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, জনপ্রশাসন কেন নিজেই প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে। আমাদের কিছুই জানাইনি। তবে আমাদের বিবেচনায় দিতে পারত। এখন যাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে শুধু তাদের প্রজ্ঞাপন পেয়েছি। কিন্তু প্রত্যাহারের যাদের করা হয়েছে তাদের প্রজ্ঞাপন পাইনি।
মন্ত্রণালয়ে কাজের চাপ কমানো এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে ইউএনওদের পদায়ন ও বদলির ক্ষমতা বিভাগীয় কমিশনারদের অধীনে দিয়ে ২০১০ সালের ৩০ ডিসেম্বর পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সেই থেকে বিভাগীয় কমিশনাররা তাদের বদলি ও পদায়ন করে আসছেন।
ইউএনওদের বদলি পদায়ন-সংক্রান্ত ২০১০ সালের পরিপত্রে বলা হয়, ইউএনওর শূন্য পদ পূরণের জন্য ফিটলিস্ট তৈরি করবে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় (বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়)। ফিটলিস্টভুক্ত ওই সব কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে ন্যস্ত করা হবে। এসব কর্মকর্তার পদায়ন ও বদলির কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বিভাগীয় কমিশনাররা। এক বিভাগের ইউএনওকে অন্য বিভাগে সরাসরি বদলি করা যাবে না। কেউ অন্য বিভাগে বদলি হতে চাইলে তার নিজ বিভাগীয় কমিশনার প্রত্যাহারের প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে।
তবে যুক্তিসংগত কোনো কারণ ছাড়া কোনো ইউএনওকে দুই বছরের আগে বদলি করা যাবে না। পাশাপাশি তিন বছরের বেশি কোনো কর্মকর্তাকে একই কর্মস্থলে রাখা যাবে না। তবে পার্বত্য এলাকা এবং সরকার ঘোষিত দুর্গম এলাকায় কোনো কর্মকর্তাকে ইউএনও হিসেবে দুই বছরের বেশি রাখা যাবে না। কোনো ইউএনওকে একই জেলার অন্য উপজেলায় বদলি করা যাবে না। কোনো কর্মকর্তাকে পাঁচ বছরের অধিক ইউএনও পদে রাখা যাবে না। ইউএনও হিসেবে যাদের চাকরি পাঁচ বছর পূর্ণ হবে তাদের তালিকা বিভাগীয় কমিশনার মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। এজন্য সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তা চাকরির মেয়াদ পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার ত্রিশ কর্ম দিবস আগে লিখিতভাবে বিভাগীয় কমিশনারকে জানাবেন।
কোনো কারণে বা ব্যক্তিগত কারণে ইউএনওকে বদলি করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে এবং তার কর্মকাল যদি দুই বছরের কম হয় সেক্ষেত্রে সংশ্নিষ্ট জেলা প্রশাসকের মতামতসহ বিভাগীয় কমিশনার যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গঠিত কমিটির কাছে পাঠাবেন। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি এবং সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের (জনপ্রশাসন) উপসচিবকে (মাঠ প্রশাসন) সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে বিভাগীয় কমিশনাররা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। ফিটলিস্টভুক্ত নারী কর্মকর্তাদের ইউএনও পদে অধিকতর ভালো যোগাযোগ সম্পন্ন উপজেলায় পদায়নে অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা পরিপত্রে বলা হয়।
বুধবার পৃথক ৮টি প্রজ্ঞাপনে ১৬৬ উপজেলায় নতুন ইউএনও নিয়োগ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে এসব নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে ন্যস্ত করা কর্মকর্তাদের তাদের নিজ অধিক্ষেত্রে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য 'দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮ এর সেকশন-১৪৪ এর ক্ষমতা অর্পণ করা হলো।
আরও বলা হয়, নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বদলি করা কর্মস্থলে যোগদান করবেন, অন্যথায় আগামী ৩০ নভেম্বর বিকেলে বর্তমান কর্মস্থল (প্রশিক্ষণ/কর্মস্থল) থেকে তাৎক্ষণিক অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) বলে গণ্য হবেন। বদলি করাকর্মকর্তার দপ্তর/কর্মস্থল ইতোমধ্যে পরিবর্তন হলে কর্মরত দপ্তরের নাম/ঠিকানা উল্লেখ করে তিনি যোগদানপত্র দাখিল করবেন বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
মোঃ কামরুজ্জামান মিলন
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক তুহিন প্রিন্টিং প্রেস ফকিরাপুল ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ই-মেইল: 𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
ই-পেপার: 𝐞𝐩𝐚𝐩𝐞𝐫.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট: 𝐰𝐰𝐰.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
মোবাইল: ০১৯২৭-৩০২৮৫২/০১৭৫০-৬৬৭৬৫৪
আলোকিত মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড