নান্দাইল প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলাধীন নান্দাইল সদর ইউনিয়নে IFMC প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে বরাদ্দ পাওয়া আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ধরে যথাযথ ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে।এ ঘটনায় ক্লাব সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে গুরুত্বর অবহেলা,অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় কৃষক ও সমিতির সদস্যরা। মূল্যবান এসব সরকারি সম্পদ অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকায় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এলাকার সাধারণ কৃষকেরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিগত সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে একটি ক্লাব সমিতির নামে কম্বাইন হারভেস্টার ও পাওয়ার টিলারসহ বেশ কয়েকটি আধুনিক কৃষি যন্ত্র বরাদ্দ পাওয়া যায়। বরাদ্দের উদ্দেশ্য ছিল স্থানীয় কৃষকের উৎপাদন ব্যয় কমানো ও কাজের গতি বাড়ানো। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে যন্ত্রগুলো অযত্নে ও অচল অবস্থায় পড়ে থাকায় বিভিন্ন অংশে মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
কৃষকেরা অভিযোগ করেছেন—যন্ত্রপাতি কৃষকের সুবিধার্থে দেওয়া হলেও এগুলো ব্যবহারের কোনো নিয়ম, নীতিমালা বা সুযোগ কখনোই তৈরি করেনি ক্লাব সমিতি। বরং ব্যক্তিগত প্রয়োজনে যন্ত্র ব্যবহার ও বাইরে ভাড়ায় দেওয়ার অভিযোগও দীর্ঘদিনের। ফলে কৃষকেরা নিয়মিতভাবে সরকারি এ সেবাটি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।একজন স্থানীয় কৃষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,“যন্ত্রগুলো সঠিকভাবে ব্যবহৃত হলে আমাদের শ্রম ও সময় দুটোই বাঁচত। কিন্তু সমিতির অবহেলায় সরকারি সম্পদই এখন নষ্ট হচ্ছে। এতে সরকারের টাকাও অপচয় হচ্ছে।”
সমিতির সদস্যদের আক্ষেপ: “১১ বছরে হিসাব নেই”, সমিতির একাধিক সদস্য জানান,“বিনামূল্যে দেওয়া সরকারি কৃষি সামগ্রী আমরা কোনোদিন ব্যবহার করতে পারিনি। সভাপতি ও কোষাদক্ষ যন্ত্রের কাছেও যেতে দিত না। আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব নেই ১১ বছর যাবত।”
অভিযোগ করে তারা আরও বলেন,“কিছু বললেই আওয়ামী লীগের সময় থেকে বিভিন্ন মামলা–হামলার ভয় দেখানো হতো। এখন আমরা এর সঠিক বিচার চাই।”সমিতির সভাপতি আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ।
স্থানীয়দের দাবি, সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম, যিনি আওয়ামী লীগের আমলে নান্দাইল ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড সভাপতি ছিলেন—তার প্রভাব ও ভয়ভীতি দেখানোর কারণে কেউ অনিয়মের প্রতিবাদ করতে সাহস পেতেন না। তার তদারকির অভাবেই সরকারি মূল্যবান যন্ত্রপাতি কার্যত অচল হয়ে পরেছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সমিতির কোষাদক্ষ হেনা রানী গুপ্ত জানান,“সমিতিতে ৩৫ জন সদস্য রয়েছে। প্রত্যেকের কাছ থেকে ৩,২০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ১১ বছরে মোট কত টাকা আয় হয়েছে—সে বিষয়ে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। সব হিসাব জানেন সভাপতি। আমার কোনো দোষ নেই।”
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ নাঈমা সুলতানা জানান,
সরকারি বরাদ্দের এসব যন্ত্র কৃষকের সেবা নিশ্চিত করার জন্যই দেওয়া হয়। কৃষি যন্ত্রপাতি নষ্ট হলে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও সমিতির।