আব্দুল হালিম,বিশেষ প্রতিবেদকঃ
জুলাই যোদ্ধাদের নামে অটোরিকশার লাইসেন্স ৫ কোটি টাকা বাণিজ্যের পাঁয়তারা। রংপুর মহানগরীতে প্রধান সড়ক মাত্র একটি বর্তমানে এখানে লাইসেন্সপ্রাপ্ত অটোরিকশার সংখ্যা ৫ হাজার। যন্ত্রচালিত রিকশা রয়েছে ৬ সহস্রাধিক। নগরীতে ২৫ সহস্রাধিক অটোরিকসা ও যন্ত্রচালিত রিকসা চলাচল করে। সার্বক্ষণিক যানজট ও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় নগরবাসীকে। এ কারনে নতুন অটোরিকশার লাইসেন্স দেয়া বন্ধ রাখা হয়েছিল বলে সিটি করপোরেশনের লাইসেন্স শাখার সূত্রে জানাগেছে। সম্প্রতি জুলাই যোদ্ধা হিসেবে ২৫০ জন এবং জুলাই রাজবন্দী হিসেবে ৪৫১ জনের কাছ থেকে ৬০০ অটোরিকশার লাইসেন্সের আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়েছে গোপনে। গত ৮ সেপ্টেম্বর সিটি করপোরেশনের মাসিক সভা আহ্বান করা দেখিয়ে এ বিষয়টি লিখিত এজেন্ডা এনে তড়িঘড়ি করে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জুলাই যোদ্ধা হিসেবে তালিকা কারা করেছেন কাদের নাম আছে, তা জানা না গেলেও জুলাই যোদ্ধাদের নামে লাইসেন্স বাণিজ্য করার পায়তারা হিসেবে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, লাইসেন্স দেয়ার নামে ৫ কোটি টাকা বাণিজ্য হচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কতিপয় স্বঘোষিত যোদ্ধা এবং আহ্বায়ক জুলাই রাজবন্দী সেজে এই আবেদন করেছেন। এবিষয়ে বিএনপির নেতারা বলছেন,তারা এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছুই জানেন না। জাতীয় পার্টির নেতারা অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন নগরবাসী। সেপ্টেম্বর মাসে সিটি করপোরেশনের মাসিক সভা ছিল। মাত্র ১ দিন পর ৮ সেপ্টেম্বর ওই সভার দ্বিতীয় এজেন্ডা হিসেবে জুলাই যোদ্ধা ৩ জুলাই রাজবন্দীদের অটোরিকশা প্রদান বিষয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। সভা আহ্বান করেন রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমা। ওই সভায় ৫শ অটোরিকশার লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সভা সূত্রে জানা যায়। এ ব্যাপারে সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা তানজিলা তাসনিমকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুত তালিকা প্রস্তুত করে লাইসেন্স প্রদান করতে বলেছেন বদলি হওয়া প্রশাসক শহীদুল ইসলাম। প্রসঙ্গত বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বিভিন্ন অভিযোগে সম্প্রতি তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে নতুন প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়েছে রংপুর সিটি করপোরেশনে। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশ জারির পর জুলাই যোদ্ধা ও জুলাই রাজবন্দী নাম দিয়ে সন্তা সেন্টিমেন্ট তৈরী করে গোপনে তাদের নামে নিষিদ্ধ অটোরিকশার লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, বলছেন অনেকে। এদিকে লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে রাজবন্দী হিসেবে লাইসেন্স নেয়ার আবেদন সম্পর্কে বিএনপির মহানগর ও জেলার কোনো নেতাই জানেন না ফলে এ ঘটনায় বিএনপি নেতা কর্মীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শামসুজ্জামান শামু বলেন, ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে রংপুর বিএনপি আন্দোলন সংগ্রাম করেছে,শত শত নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনেও অনেকেই গ্রেপ্তার হয়েছেন। কিন্তু রংপুর মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ-সংগঠনের কোন নেতা-কর্মী অটোরিকশার লাইসেন্স নেয়ার আবেদন করেনি। আর এ বিষয়ে মহানগর বিএনপি কিছুই জানে না বলে জানান তিনি। একই কথা বলেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব মাহফুজ উন নবী (ডন)তিনি বলেন, অটোরিকশার লাইসেন্স জুলাই রাজবন্দীর নামে দেয়া হচ্ছে,কই আমি তো জানি না বরং তিনি পুরো ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। রংপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুও বলেন, জুলাই আন্দোলনে রাজবন্দীর নামে অটোরিকশার লাইসেন্স দেয়ার বিষয়টি জেলা বিএনপির কোনো নেতাকর্মী জানে না। রংপুর জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু বলেন, কিসের অটোরিকশার লাইসেন্স, কারা আবেদন করেছে,আমরা জানি না। একই অবস্থা জুলাই যোদ্ধাদের ক্ষেত্রে, কারা তাদের পক্ষে আবেদন করলো তা জানেন না তাদের অধিকাংশ। তবে এ ব্যাপারে রংপুর মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহাম্মেদ ইমতির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্বীকার করে বলেন,আমি যতটুকু জানি, আড়াইশ জুলাই যোদ্ধা অটোরিকশার লাইসেন্স পাওয়ার আবেদন করেছেন। তারা কি লাইসেন্স নিয়ে নিজেরা চালাবে, না ভাড়া দেবে, সে সম্পর্কে তিনি জানেন না বলে জানান। তবে অটোরিকশার লাইসেন্স নেয়ার নামে জুলাই যোদ্ধাদের নাম ব্যবহার করে তাদের খাটো করা হচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন আবেদন করা হয়েছে, জানি। এদিকে রংপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,অটোরিকশা আর যন্ত্রচালিত রিকশা মিলিয়ে ১১ হাজার লাইসেন্স আছে। অথচ নগরীতে চলাচল করে ২৫ হাজারেরও বেশি। কোনো অবস্থাতেই নতুন করে লাইসেন্স দেয়া মানে এর সঙ্গে দুর্নীতি আর ইল-মোটিভ (অসৎ উদ্দেশ্য) আছে বলে মনে করেন তিনি। সার্বিক বিষয়ে জানতে রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জুলাই যোদ্ধা ও জুলাই রাজবন্দীদের জন্য কিছু। অটোরিকশার লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, এটা এখন প্রক্রিয়াধীন আছে।
মোঃ কামরুজ্জামান মিলন
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক তুহিন প্রিন্টিং প্রেস ফকিরাপুল ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ই-মেইল: 𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
ই-পেপার: 𝐞𝐩𝐚𝐩𝐞𝐫.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট: 𝐰𝐰𝐰.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
মোবাইল: ০১৯২৭-৩০২৮৫২/০১৭৫০-৬৬৭৬৫৪
আলোকিত মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড