ষ্টাফ রিপোর্টারঃ
ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে বৃষ্টির মধ্যে বেপরোয়া গতিতে গাড়ী চালাতে গিয়ে সড়ক দূর্ঘটনায় পতিত হলো বিলাসবহুল গোল্ডেন লাইন, টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস ও সাকুরা পরিবহনের বিলাসবহুল ৩ টি যাত্রীবাহী বাস সহ আরো কয়েকটি যানবাহন । শনিবার (৩০ আগষ্ট) সকাল ৮:৩০ টার দিকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার পাচ্চর এলাকায় এ ভয়াবহ সড়ক দূর্ঘটনা ঘটে। এতে ২০ জন বাসযাত্রী মারাত্মক আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫/৬ জনের অবস্থা আশংঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় জনতা, ফায়ার সার্ভিস, হাইওয়ে ট্রাফিক পুলিশ ও শিবচর থানা পুলিশ মিলে দ্রুত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছেন। বাকী আহতদের শিবচর ও ভাঙ্গা উপজেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের নিকট থেকে জানা গেছে, দূর্ঘটনার সময় সেখানে তখন বৃষ্টি হচ্ছিলো এবং বৃষ্টির মধ্যে একটি দ্রুতগামী যাত্রীবাহী বাস হঠাৎ ব্রেক কষলে রাস্তা পিচ্ছিল থাকায় বাসের ড্রাইভার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন , ফলে বাসটি এদিক-সেদিক করতে না করতেই পিছন দিক থেকে আরো কয়েকটি দ্রুতগতির বাস চলে আসে। এসময় কয়েকটি বিকট শব্দ হয়। উক্ত বাসগুলোর ড্রাইভাররা সামনের বাসের সমস্যা প্রত্যক্ষ করে তারাও কড়া ব্রেক কষে চেষ্টা করেন প্রথম বাসটির সাথে সংঘর্ষ এড়াতে, কিন্তু সকল চেষ্টা বিফলে গিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই গোল্ডেন লাইন পরিবহন, সাকুরা পরিবহন ও টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস পরিবহনের বিলাসবহুল ৩ টি বাস উক্ত সড়কের মজবুত ষ্টিলের রেলিং ভেঙ্গে সড়ক থেকে ছিটকে গিয়ে সড়ক ডিভাইডার ও ষ্টিলের রেলিংয়ের আশেপাশে গিয়ে আটকে যায়, পাশাপাশি আরো ৩/৪ টি গাড়ী একই সাথে দূর্ঘটনায় পতিত হয়। এসময় বাসে থাকা যাত্রীদের কম আহত হওয়া অনেকেই তাড়াহুড়ো করে গাড়ী থেকে নামতে সক্ষম হন এবং ১৫/২০ জন মারাত্মক আহতরা বাসের মধ্যেই আর্তচিৎকার করতে থাকেন। তাদের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন ছুটে এসে উদ্ধার কাজ শুরু করলে ততক্ষণে খবর পেয়ে দ্রুত হাইওয়ে ট্রাফিক পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও শিবচর থানা পুলিশ এসে উদ্ধার কাজে অংশ নেয়।
ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে কর্তব্যরত হাইওয়ে পুলিশের সার্জেন্ট সবুজ মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ১৫ থেকে ২০ জন গুরুতর আহত হয়েছে এবং মারাত্মক আহত ৫/৬ জনকে তারা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ীতে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং সামান্য আহতের স্থানীয় শিবচর ও ভাঙ্গা সদর উপজেলা হাসপাতালে পাঠানোর পাশাপাশি এক্সপ্রেসওয়েকে যানবাহন চলাচলের জন্য ক্রেন এনে দূর্ঘটনায় পতিত হওয়া গাড়ীগুলো সরিয়ে নিয়েছেন এবং ঘন্টা খানেকর মধ্যে যানবাহন চলাচল পূণরায় শুরু হয়েছে। দূর্ঘটনার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃষ্টির মধ্যে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ী চালনা এবং ড্রাইভারদের অসচেনাই এ দূর্ঘটনার মূল কারণ। শেষ পর্যন্ত দূর্ঘটনায় কারো নিহতের খবর নিশ্চিত করেনি হাইওয়ে পুলিশ। দূর্ঘটনার আরো কি কারণ রয়েছে- এ ব্যাপারে মহাসড়কের পাশে বসবাস করা নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সাবেক বাসমালিক পরিবহন ব্যবসায়ী বলেন, ভাঙ্গা-ঢাকা এক্সপ্রেসওয়েতে সরকার থেকে অনুমোদিত যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার। কিন্তু বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই পরিবহন চালক ও ষ্টাফরা মানছেন তা মানেন না, অনেক সময় পাল্লাপাল্লি করে তারা ১২০/১৩০ কিঃমিঃ গতিও উঠিয়ে দেন যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও সড়ক পরিবহন আইনে দন্ডনীয় অপরাধ। আবার অনেক সময় ধীরে গাড়ী চালালে যাত্রীরা চালক সহ ষ্টাফদের কটু কথা বলে বেশী গতিতেও গাড়ী চালানোর জন্য চাপ দিয়ে থাকেন। এছাড়াও যত্রতত্র তারা গাড়ী থামিয়ে যাত্রী উঠানো-নামানো করে থাকেন, তাতেও ঘটছে দূর্ঘটনা। ফলশ্রুতিতে দূর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে যাত্রী সাধারণ, এমকি ড্রাইভার-হেলপার ও সুপারভাইজারও। আর এসব দূর্ঘটনা ঘটলে আহত ও নিহত পরিবারগুলোর পাশাপাশি সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হন বাস মালিকেরা, এমনকি জেলেও যেতে হয়। আর লক্ষ- লক্ষ টাকাতো গচ্ছা দিতেই হয় এসব দূর্ঘনায়, যা ষ্টাফদের দিতে হয় না।
তিনি আরো বলেন, ভাঙ্গা-ঢাকা এক্সপ্রেসওয়েতে বেশ কয়েকটি স্থানে রয়েছে ছোট-বড় বাঁক- যেখান দিয়ে সামনের সড়ক দেখতে অনেক সমস্যা হয়, অনেক সময় একই রাস্তায় চলাচল করা বাস কোনো বাসষ্ট্যান্ডে যাত্রী নামাতে বা উঠাতে গেলে তখন নিশ্চয়ই বাস দাঁড় করাতে হয়। কিন্তু দেখা যায় ঐ সড়কের নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়াও বাসের ষ্টাফরা অন্যান্য জায়গা থেকেও যাত্রী তোলেন বা নামান, এরফলেও ঘটে দূর্ঘটনা। আক্ষেপ করে উক্ত সাবেক বাসমালিক জানান, বাস শ্রমিকদের উক্ত খাম-খেয়ালীপনা, দূর্ঘটনায় সক্ষতিগ্রস্থ হয়ে লক্ষ- লক্ষ টাকা লোকসান গুনতে হয় বিধায় সকল বাস বিক্রি করে দিয়ে আমি অন্য পেশায় আছি। চালক ও ষ্টাফরাতো বোঝেনা যে, একটি দূর্ঘটনায় একজন বাস মালিকের কি পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি ও হয়রাণিতে পড়তে হয়।
মোঃ কামরুজ্জামান মিলন
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক তুহিন প্রিন্টিং প্রেস ফকিরাপুল ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ই-মেইল: 𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
ই-পেপার: 𝐞𝐩𝐚𝐩𝐞𝐫.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট: 𝐰𝐰𝐰.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
মোবাইল: ০১৯২৭-৩০২৮৫২/০১৭৫০-৬৬৭৬৫৪
আলোকিত মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড