ড. আব্দুল ওয়াদুদঃ
‘পিতার কাঁধে সন্তানের লাশ’ পৃথিবীতে সবচাইতে ভারী বস্তু। আর সেটা যদি হয় ছোট ছোট কোমলমতিদের লাশ তাহলে তা বহন করা আরও দুঃসাধ্য’। ছুটির পর যে স্কুল ক্যাম্পাস থাকতো কোলাহলে মুখর তা ভেসে গেল আর্তনাদে। স্কুল ছুটির পর জীবন থেকেও ছুটি নিলো কোমলমতিরা। মুহূর্তেই তারা হয়ে গেলো আকাশের তারা। বিষাদে ছেয়ে গেল আকাশ-বাতাস। এতো শোক সহ্য করা সত্যিই কঠিন।
২১ জুলাই অন্যান্য দিনের মতো ক্লাস চলছিল। কেউ খেলছিল মাঠে। ঠিক তখনই বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান এফ-৭ বিজিআই বিধ্বস্ত হয় শিক্ষার্থীদের ভবনে। বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটির ‘নাক’ ঢুকে যায় ভবনের সিঁড়িতে। এর দুই পাখার আঘাতে ও আগুনে পুড়ে ছাই হয় শিশুদের দুটি ক্লাসরুম। স্কুলের আঙিনা থেকে আগুনে ঝলসে যাওয়া শরীর নিয়ে আট-নয় বছরের শিশু কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে এসেছে। তার ইউনিফর্ম পুড়ে দগ্ধ চামড়ার সঙ্গে মিশে গেছে। মর্মান্তিক এ দৃশ্য দেখে সহ্য করার মতো নয়। পাশে দাঁড়িয়ে মানুষ স্তম্ভিত-বেদনার্ত। হয়তো কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছিলেন তারা। এই ভিডিওচিত্রে সয়লাব সামাজিকমাধ্যম। জানি না কোন মায়ের নাড়িছেঁড়া ধন এই শিশুটি। অবর্ণনীয় কষ্টে কাতর এখন কেমন আছে ছোট শিশুটি? এমনই আরও অনেক শিশু দগ্ধ শরীর নিয়ে কাতরাতে কাতরাতে বেরিয়ে আসে স্কুলের গেটের বাইরে।
১৯৭৩ সালের ভিয়েতনামের রাস্তায় কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে আসা সেই নগ্ন নাপাম বালিকার ছবির কথা মনে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসে সেই ছবি ছাপা হলে কেঁপে উঠেছিল বিশ্ববিবেক। মাইলস্টোন বিপর্যয়ে ঝলসে যাওয়া আমাদের শিশুরাও হয়ে উঠেছে গভীর বেদনার একেকটি জ্বলন্ত প্রতিচিত্র। শিক্ষয়িত্রী মেহেরিন নিজের জীবন-মৃত্যুকে তুচ্ছ জ্ঞান করে আগুনের ভেতর থেকে বের করে এনেছেন। ওদের বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। কিন্তু নিজে বাঁচতে পারেননি। একজন আদর্শ শিক্ষক তো এমনই মহৎপ্রাণ হয়ে থাকেন।
উত্তরা মাইলস্টোন স্কুলে ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনা গোটা জাতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছে বেদনা-বিক্ষোভে। হঠাৎ বিস্ফোরণের শব্দ, কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী এবং চোখের পলকে দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠা আগুনে ঝলসে যাওয়া কোমলমতি ছেলেমেয়েদের ছোটাছুটির ভয়াবহ চিত্র কেউ সহজে ভুলবে না। দগ্ধ শিশুদের আর্তনাদ, দিশাহারা শিক্ষক, মৃত্যু পথযাত্রী শিশু ও কিশোরের গোঙানি, সন্তানের খোঁজে দিশাহারা পিতামাতার চোখেমুখে সীমাহীন উদ্বেগ- সব মিলিয়ে জন্ম দেয় এক তীব্র বিষাদময় দৃশ্যপটের।
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে শুরু থেকেই কিছু বিভ্রান্তি দেখা দেয়। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) থেকে ২৪ জুলাই প্রকাশিত তালিকায় মৃতের সংখ্যা উল্লেখ ছিল ১৫। তবে ২৭ জুলাইয়ের হালনাগাদ তালিকায় সেটি সংশোধন করে ১৪ দেখানো হয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় মোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩৪ জন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিহত শিক্ষার্থীদের একটি তালিকা প্রকাশ করলে তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো ফরেনসিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে, দুর্ঘটনায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা ৩৪ জন। এর মধ্যে সিএমএইচে মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের।
এই শোকাবহ ট্র্যাজেডি কেবল একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি আমাদের রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থাপনা, নাগরিক নিরাপত্তা এবং দুর্যোগে দায়িত্বশীল আচরণের প্রকৃত রূপ উন্মোচন করেছে। তবে আশার কথা, এই ঘটনার মধ্যেও উঠে এসেছে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অসাধারণ মানবিক তৎপরতার চিত্র। আগুন নেভানোর আগেই আশপাশের মানুষ ছুটে গেছে উদ্ধারকাজে। কেউ পানি এনে দিয়েছে, কেউ দগ্ধ শিশুদের হাসপাতালে পৌঁছাতে সাহায্য করেছে। অজস্র অচেনা মুখের এই মানবিক উদ্যোগই আমাদের জাতিসত্তার অন্যতম গৌরব।
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ চিরকালই দুর্যোগে এগিয়ে এসেছে। যখনই হানা দিয়েছে দুর্যোগ দুর্বিপাক তখনই আমরা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের অসাধারণ সংবেদনশীলতা। সত্তরের মানবিক বিপর্যয়ের দিনগুলোতে 'কাঁদো বাঙালি কাঁদো' ব্যানার সামনে নিয়ে মিছিল করে ত্রাণ সংগ্রহ করতে দেখেছি আমরা সংবেদনশীল তরুণদের। ১৯৮৬ সালে জগন্নাথ হল ট্র্যাজেডির খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাজারো তরুণ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল উদ্ধারকাজে। রানা প্লাজা ধস, কিংবা করোনা মহামারির সময়- যেখানেই মানবিক বিপর্যয়, সেখানেই অগণিত মানুষ নিজেদের স্বার্থ ভুলে বিপদগ্রস্তের পাশে দাঁড়িয়েছে। উত্তরা দুর্ঘটনার পরও আমরা দেখেছি, কত মানুষ রক্ত দিতে ছুটে গেছে বার্ন ইনস্টিটিউটে, খাবার-জরুরি ওষুধ নিয়ে পৌঁছেছে স্বেচ্ছায়। এমনকি হাসপাতালে বসে অচেনা দগ্ধ শিশুর হাত ধরে চোখের পানি ফেলেছে অনেকেই। পরিতাপের বিষয়, এ দেশের রাজনীতি বাঙালির, বিশেষ করে তরুণদের এই মানবিকবোধ ও সংবেদনশীলতার পরিচর্যা করেনি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের রাজনীতি বিভেদ ও হিংসাকে উসকে দিয়েছে।
মাইলস্টোন ট্র্যাজেডির পটভূমিতে মানবিকতার পাশাপাশি ভেসে এসেছে কিছু দুঃখজনক ও দৃষ্টিকটু চিত্র। দুর্ঘটনার পরপরই একদল রাজনৈতিক নেতানেত্রী ও তাদের অনুসারীরা দলে দলে হাসপাতালে উপস্থিত হয়েছেন। সংবেদনশীল পোড়া রোগীদের কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে অনাবশ্যক বক্তৃতা দিয়েছেন, প্রেস-ফটোগ্রাফার নিয়ে এসে ‘দুঃখপ্রকাশ’-এর নামে ফটোসেশন করেছেন, কেউ কেউ আবার ঘটনার জন্য সরকার বা কোনো পক্ষকে দায়ী করে রাজনৈতিক বিবৃতি দিয়েছেন। এতে হাসপাতালের সুশৃঙ্খল পরিবেশ বিঘ্নিত হয়েছে, দগ্ধ রোগীদের পরিবার হয়ে পড়েছে আরও উদ্বিগ্ন।
মানবিক বিপর্যয় কখনোই রাজনৈতিক ফায়দা তোলার উপযুক্ত ক্ষেত্র নয়। দুর্যোগে দায়িত্বশীল আচরণ মানে কেবল সহানুভূতির ছবি পোস্ট করা নয়, বরং বাস্তব সহায়তা নিশ্চিত করা। এই সময় সবচেয়ে প্রয়োজন রক্ত, চিকিৎসা, প্রার্থনা এবং নীরবে পাশে থাকা। অথচ কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠীর আচরণে তা নিছক মিডিয়া শোয়ে পরিণিত হয়েছে, যা একদিকে যেমন দৃষ্টিকটু, অন্যদিকে তেমনি আহত মানুষদের প্রতি অসম্মানজনক।
অনুসন্ধানী দৃষ্টিতে অবলোকন করতে হবে উৎসমূলে এবং আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার সীমাবদ্ধতার কথাও এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে নতুন করে ভাবতে হবে। এমন জনবহুল এলাকায় কীভাবে বিমান চলাচল হচ্ছে, স্কুলের পাশে এমন ঝুঁকিপূর্ণ বিমানপথ কীভাবে অনুমোদিত হয়েছে, দুর্ঘটনা-পরবর্তী সময়ে ফায়ার সার্ভিস ও বার্ন ইউনিটের সামর্থ্য কতটুকু- এসব প্রশ্নের উত্তর দরকার। আমরা দুর্ঘটনা ঘটার পর হাহাকার করি, কিন্তু প্রতিরোধে উদ্যোগ নেই। এই শৈথিল্য আমাদের ভবিষ্যতের জন্য এক ভয়ংকর ইঙ্গিত বহন করে। তবে এর মধ্যেও আলোর দীপ্তিময় রেখা আছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা যেমন আবেগপ্রবণ পোস্ট দেখেছি, তেমনি দায়িত্বশীল উদ্যোগও দেখেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা রক্তদানে সংগঠিত হয়েছে, স্থানীয় ক্লাবগুলো আর্থিক সহায়তা দিতে তহবিল গঠন করেছে, সাধারণ মানুষ নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা করতে ছুটে গেছে বার্ন ইউনিটে। এই স্বতঃস্ফূর্ত মানবিক সাড়া প্রমাণ করে, মানুষের ভেতর এখনও করুণার আলো জ্বলে।
ঢাকায় তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দর এবং কুর্মিটোলা এয়ারবেস—এই দুটির অবস্থান। রাজধানীর আকাশে নিয়মিত যুদ্ধবিমান উড্ডয়ন কতটা নিরাপদ? আন্তর্জাতিক নিয়ম কি এর অনুমতি দেয়? স্বাভাবিক ভাবনাতেই প্রশ্ন উঠে। কিন্তু যারা রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক, তাদের ভাবনায় কেন আসে না?
আন্তর্জাতিক সিভিল অ্যাভিয়েশন অথরিটি (আইকাও)-এর অ্যানেক্স টু এবং অ্যানেক্স ইলেভেন অনুযায়ী, যে কোনো প্রশিক্ষণ ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে জনবসতিপূর্ণ এলাকার ওপর দিয়ে কম উচ্চতায় উড়ালকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। একইসঙ্গে, ন্যূনতম নিরাপদ অল্টিচিউড বজায় রাখা বাধ্যতামূলক, বিশেষ করে ঘনবসতি ও কূটনৈতিক এলাকাগুলোর ক্ষেত্রে।
যেসব দেশ জননিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেয়, সেসব দেশের ঘনবসতি এলাকায় সামরিক বা বেসামরিক কোনো বিমান প্রশিক্ষণ হয় না। জাপানে শহরের ওপর প্রশিক্ষণ নিষিদ্ধ, বেশিরভাগ প্রশিক্ষণ হয় সমুদ্রের ওপর বা নির্জন এলাকায়। যুক্তরাষ্ট্র জনবসতির ওপর কম উচ্চতায় প্রশিক্ষণ ফ্লাইটে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। প্যারিস শহরের আকাশে কোনো প্রশিক্ষণ বিমান দেখা যায় না—শুধু বিশেষ অনুষ্ঠানে নির্দিষ্ট অনুমতিতে। ভারতের নয়াদিল্লিতে কম উচ্চতায় সামরিক বিমান নিষিদ্ধ। প্রশিক্ষণ হয় উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্রের বিশাল ঘরানার সামরিক ঘাঁটিতে।
জনবসতি এলাকায় যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ চালানো শুধু নিরাপত্তার ঝুঁকি নয়, এটি আন্তর্জাতিক নিয়ম, মানবিক দায়বদ্ধতা ও পরিবেশগত বিবেচনারও বড় ব্যত্যয়।
যুদ্ধবিমান অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ছুটে। যে কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি বা বৈমানবিকের ভুলে জনবসতিতে বিধ্বস্ত হলে ব্যাপক প্রাণহানি ও ধ্বংস হতে পারে। যুদ্ধবিমানের শব্দ ১২০–১৪০ ডেসিবেল পর্যন্ত হতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে শ্রবণশক্তি হ্রাস, স্ট্রেস হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থদের ওপর এর প্রভাব মারাত্মক। হঠাৎ বিকট শব্দ, ঘন ঘন ওড়ার শব্দে মানুষ আতঙ্কিত হয়। স্কুল, হাসপাতাল, পরীক্ষার সময় এসব ফ্লাইট বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশের দীর্ঘ উপকূলীয় এলাকা হতে পারে এই ধরনের প্রশিক্ষণের উপযুক্ত স্থান। এই দুর্ঘটনার পর দ্রুত সরকারের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এদিকে চীনের তৈরি এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানকে চেংডু জে-৭ সিরিজের সবচেয়ে উন্নত সংস্করণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি সোভিয়েত আমলের মিগ-২১ এর ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যে মডেলটি বহু দেশে বহু দুর্ঘটনার সঙ্গে যুক্ত। বাংলাদেশ ২০১১ সালে চীনের কাছ থেকে ১৬টি এফ-৭ বিজিআই কেনে এবং ২০১৩ সালে সেগুলো বহরে যুক্ত হয়। একই বছর চীন নিজেই এই মডেলের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। বলা হয়, এফ-৭ বিজিআই বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ‘স্বল্প ব্যয়ে আধুনিকায়নের’ প্রতীক। কিন্তু বাস্তবে এটি প্রযুক্তিগতভাবে পিছিয়ে থাকা একটি ঝুঁকিপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ মিগ-২১ বা তার অনুরূপ মডেলগুলো ফেজ আউট করে ফেলেছে। ভারত নিজেও মিগ-২১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে পুরোপুরি সরে আসার ঘোষণা দিয়েছে।
বাংলাদেশের কাছে এখনো রয়েছে প্রায় ৩৬টি এফ-৭ বিমান, যার বড় অংশই পুরনো প্রযুক্তির। যুদ্ধবিমান শুধু গতি বা অস্ত্রধারণ ক্ষমতায় মাপা যায় না—এর নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। পুরনো ঝুঁকিপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে প্রশিক্ষণ চালানো মানে ভবিষ্যতের সাহসী পাইলটদের জীবন নিয়ে জুয়া খেলা। এটি কেবল বাজেটের প্রশ্ন নয়—এটি ন্যায়ের প্রশ্ন। জীবনের প্রশ্ন।
বিশ্লেষকদের মতে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইসিএও) নির্দেশনা অনুযায়ী, বিমানবন্দরের চারপাশে একটি নির্দিষ্ট এলাকাকে ‘বাফার জোন’ বা নিরাপত্তা বেষ্টনী হিসাবে রাখা বাধ্যতামূলক, যেখানে স্কুল, হাসপাতাল বা ঘনবসতিপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। অথচ এ নগরীতে রানওয়ের পাশে বা কাছাকাছি স্থানে রয়েছে আবাসিক ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা। সে ক্ষেত্রে মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি আমাদের জন্য যে সতর্কবার্তা দিয়েছে, সেটা অনুধাবন করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এখন উচিত হবে বিমানবন্দরের কাছাকাছি অবস্থিত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালের নিরাপত্তার বিষয়টি নিরীক্ষা করা। একই সঙ্গে যুদ্ধবিমান উড্ডয়নের জন্য নির্ধারণ করতে হবে লোকালয় থেকে দূরে বিস্তীর্ণ মাঠ বা চরাঞ্চল অথবা অন্য কোনো জায়গায় স্বতন্ত্র রানওয়ে নির্মাণ করা। ভবিষ্যতে যেন এ রকম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যুদ্ধবিমান চালানো না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। অবিলম্বে বিকল্প রানওয়ে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সরকারকে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে। তাই সরকারকে সবার আগে দেখতে হবে জনগণের নিরাপত্তা । কোথাও অস্থায়ীভাবে বা আধাআধিভাবে কিছু করা যাবে না। অন্তত যেখানে জনগণের নিরাপত্তার প্রশ্ন আছে। এই ট্র্যাজিক ঘটনা, এতগুলো শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু থেকে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শিক্ষা নেবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি। জাতির কাছে তাদের কথা দিতে হবে-ভবিষ্যতে এ রকম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যুদ্ধবিমান চালানো যাবে না। অবিলম্বে বিকল্প রানওয়ে প্রতিষ্ঠা করা হবে। কারন সবাই সতর্ক না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় ক্ষতি হতে পারে। কাজেই আমাদের শেষ কথা হলো, দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সরকারকে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ নিয়ে সময়ক্ষেপণ কোনোভাবেই কাম্য নয়।
এই ধরনের আকস্মিক ও ভয়াবহ দুর্ঘটনা শিশু-কিশোরদের উপর গভীর মানসিক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে যারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল, আহত হয়েছে, বা চোখের সামনে বন্ধুবান্ধব, সহপাঠীদের অসহায় অবস্থায় দেখেছে—তাদের মধ্যে অ্যাকিউট স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (ASD), ট্রমাটিক স্ট্রেস, দুঃস্বপ্ন, আতঙ্ক, চমকে ওঠা, ঘুমে সমস্যা, স্কুলে যেতে না চাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।মনো-দৈহিক-সামাজিক পদ্ধতিতে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার আক্রান্তদের চিকিৎসা করতে হবে। কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি, আই মুভমেন্ট ডিসেনসিটাইজেশন রিপ্রসেসিং থেরাপি (ইএমডিআর), লং টার্ম এক্সপোজার থেরাপির মাধ্যমে পিটিএসডির চিকিৎসা দীর্ঘদিন চালিয়ে যেতে হয়। রোগীকে মানসিকভাবে সমর্থন দিতে হবে, কাউন্সিলিং করতে হবে, সাইকোথেরাপি দিতে হবে এবং প্রয়োজনে ঔষধ খেতে হবে দীর্ঘমেয়াদে। একইসঙ্গে সামাজিক সমর্থন, সহযোগিতাও দিতে হবে।
মাইলস্টোন ট্রাজেডি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে- আমরা কতটা ঝুঁকির মধ্যে আছি এবং মানবিকতার কী অপার সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে আমাদের জনগণের মধ্যে। শোককে শক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। শুধু ফেসবুক স্ট্যাটাস নয়, বাস্তব পদক্ষেপে তা প্রমাণ করতে হবে। যেন আগামীকাল আবারও এমন কোনো সকাল না আসে, যেখানে বাতাসে সন্তানের পোড়া মাংসের গন্ধ মিশে যায় মায়ের আর্তনাদে।
লেখক : ফিকামলি তত্ত্বের জনক
শিক্ষাবিদ, গবেষক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
ওয়াইল্ডলাইফ বিশেষজ্ঞ
মোঃ কামরুজ্জামান মিলন
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক তুহিন প্রিন্টিং প্রেস ফকিরাপুল ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ই-মেইল: 𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
ই-পেপার: 𝐞𝐩𝐚𝐩𝐞𝐫.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট: 𝐰𝐰𝐰.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
মোবাইল: ০১৯২৭-৩০২৮৫২/০১৭৫০-৬৬৭৬৫৪
আলোকিত মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড