ক্রীড়া ডেস্কঃ
মিরপুরের উইকেটের মান নিয়ে আলোচনা দীর্ঘদিনের। ঘরের মাঠের সুবিধা নেওয়া আর ভালো উইকেটে খেলার দ্বিধা ও দ্বন্দ্ব নিয়ে বিতর্কও চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে।
সবকিছুর কেন্দ্রে বরাবরই ছিলেন গামিনি সিলভা। শ্রীলঙ্কার সাবেক এই ক্রিকেটার ও পরে ৩ টেস্ট ১১ ওয়ানডে পরিচালনা করা আম্পায়ার ২০১০ সালে বিসিবিতে যোগ দেন কিউরেটর হিসেবে।
শুরুর কয়েক বছর তাকে নিয়ে প্রশ্ন ওঠেনি, মিরপুরের উইকেটের মানও ছিল ভালো। তবে ক্রমে একটা সময় উইকেটের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে, বিশেষ করে বিপিএলে।
২০১৬-১৭ সময়টায় দেশের মাঠে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দলগুলোর সঙ্গে টেস্ট সিরিজে ভয়াবহ টার্নিং উইকেটে খেলার কৌশল নেয় বাংলাদেশ। কিন্তু বিপিএলে মৌসুমের পর মৌসুম মিরপুরে মন্থর, নিচু বাউন্সের উইকেট নিয়ে সমালোচনা হতে থাকে প্রবল।
তবে এতকিছুর পরও গামিনির জায়গা নড়েনি। দুই বছরের চুক্তিতে শুরু করা গামিনির মেয়াদ বাড়ানো হয় মোট সাত দফায়। সবশেষ গত মাসে মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও এক বছরের জন্য।
তবে সেই মেয়াদ তার পূর্ণ করার সম্ভাবনা এখন প্রায় নেই বললেই চলে। গামিনির সঙ্গে টানাপোড়েন ও আরও কিছু কারণে গত বছরের জুলাইয়ে পদত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন যিনি, সেই টনি হেমিংকে আবার ফিরিয়ে এনেছে বিসিবি। এখন তার পদবি ‘হেড অব টার্ফ ম্যানেজমেন্ট।’ গামিনিসহ দেশের সব কিউরেটর কাজ করবেন হেমিংয়ের তত্ত্বাবধানে।
গামিনি তা করবেন কি না বা বিসিবি তাকে রাখবে কি না, সেই উত্তর মিলতে পারে কিছুদিনের মধ্যেই। আপাতত ছুটিতে শ্রীলঙ্কায় গেছেন ৬৪ বছর বয়সী এই কিউরেটর। তবে সব মিলিয়ে যা আভাস, তাতে বাংলাদেশে তার সময় শেষ বলা যায়।
বিসিবি যে সভায় শনিবার হেমিংয়ের নিয়োগ চূড়ান্ত হয়, সেই সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ইঙ্গিতটা দিয়ে রাখলেন বিসিবি পরিচালক ইফতেখার রহমান।
“আমরা যদি খুশি হতাম (গামিনিকে নিয়ে), তাহলে কিন্তু টনি হেমিংয়ের কাছে আমরা যেতাম না। আমরা উন্নতির প্রক্রিয়ায় যাচ্ছি আমরা। সব বিভাগেই উন্নতির চেষ্টা করছি আমরা।
আমরা অবশ্যই মনে করি, মিরপুরের উইকেট আমাদের জন্য একটি সমস্যা। এটা আমাদের সভাপতি সাহেব বা সবাই মনে করেন। ফাহিম ভাই (ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদীন) তো সবসময়ই ভালো উইকেটে খেলার পক্ষে।
ক্রিকেটার পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল এরপর তুলে ধরলেন হেমিংয়ের দক্ষতা ও গামিনির ঘাটতির ব্যাপারটি। তার বিশ্বাস, হেমিংয়ের হাত ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সামগ্রিক উন্নতি হবে।
টনি হেমিংয়ের সম্পর্কে অনেকের কাছ থেকেই ভালো কথা শুনেছি। পাকিস্তানে আমি গিয়ে দেখেছি, সেখানে যে উইকেট হেমিং বানিয়েছিল, ওখানে ওদের পিএসএল হয়েছে, আরও টুর্নামেন্ট হয়েছে, তার পরও শেষের দিকে যে কন্ডিশন দেখেছি, তাতে অবাক হয়েছি যে এত ভালো। আমরা আমাদের এখানে বলি যে, এত বেশি ক্রিকেট হয় এখানে, তাই উইকেট ভলো হয় না। অথচ পাকিস্তানে উইকেট এত সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন। এসব বাস্তবে দেখে মুগ্ধতার ব্যাপার ছিল। টনি হেমিং আসলেই দারুণ কিউরেটর।
গামিনির ব্যাপারটি হলো, সে যে চেষ্টা করেনি, তা নয়। তবে তার হয়তো একটা সীমাবদ্ধতা আছে, যা সে টপকাতে পারেনি। সে কারণেই আমরা যা চেয়েছি, তা সে পারেনি। তবে সময় এসেছে আরও এগিয়ে যাওয়ার। কারণ সম্ভবত একজন ভালো কোচের চেয়েও ভালো উইকেট বেশি সহায়তা করে ভালো ক্রিকেট খেলতে। আগে ভালো উইকেট থাকলে হয়তো অনেক কিছুই ভালো হয়ে যেত। এখন আমরা তা আশা করতে পারি।
মিরপুরের ‘টিপিক্যাল’ উইকেটে খেলার প্রশ্নটি তখনই উঠল। অনেক সময়ই বাংলাদেশ ইচ্ছে করেই কৌশলের অংশ হিসেবে বেছে নিয়েছে এই ধরনের উইকেট। সবশেষ এই কদিন আগেই পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে দেখা গেছে মিরপুরের সেই চেনা উইকেটই, যেখানে শট খেলা ছিল ভীষণ কঠিন।
নাজমুল আবেদীনের দাবি, এই সিরিজে এরকম উইকেট দলের চাওয়া ছিল না। উইকেটের আচরণে কোচ ফিল সিমন্সও নাকি ছিলেন হতাশ।
অবশ্যই… নিশ্চিতভাবেই… (মিরপুরেও সামনে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হবে)। সত্যি বলতে, পাকিস্তানের সঙ্গে যখন এবার খেলা হয়েছিল, আমাদের প্রধান কোচ খুবই হতাশ হয়েছিলেন উইকেট দেখে। কারণ, আমরা জানি যে, আমরা যেখানে খেলতে যাব, সেটির আদর্শ প্রস্তুতি এখানে হবে না।
এই কারণে আমরা নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে সিলেটে খেলব (এই মাসের শেষে), মিরপুরে খেলব না। নিউ জিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষেও আমরা সিলেটে খেলেছি (গত মে মাসে), যেখানে কন্ডিশন তাদের (কিইউদের) মতো ছিল।
ওই জায়গাটায় আমরা আপোস করতে চাই না। আমরা ভালো উইকেটে খেলব, তাতে যদি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়, তাতেও সমস্যা নয়।