দ্বীন ইসলাম, নড়াইল প্রতিনিধি:
লোহাগড়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লোহাগড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় সম্প্রতি অস্বাভাবিক এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। বহিষ্কৃত প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম খান পুনরায় বেআইনিভাবে বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ এবং শিক্ষাপ্রক্রিয়া ব্যাহত করার অভিযোগে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আঃ রহিম খান নিজেই বিদ্যালয় পরিচালনায় অক্ষমতা স্বীকার করে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। তবে এর ১১ দিন পর, অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি লোহাগড়া সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন, দাবি করেন তাকে জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। দীর্ঘ সাত বছর মামলা চলার পর, বারবার আদালতে অনুপস্থিত থাকার কারণে ২০২৪ সালে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। এমনকি একাধিক শুনানিতে হাজির না হওয়ায় বিচারক তাকে ৫০০ টাকা জরিমানাও করেছিলেন।
এরপর ২০২৫ সালের ২৪ মে, আঃ রহিম খান কোনো বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোসাঃ সেলিনা পারভিনকে প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে জোরপূর্বক বের করে দেন। তিনি দাবি করেন, ইউএনও সাহেব তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করেছেন। বৈধ কাগজ দেখাতে বললে সেলিনা পারভিনের ওপর তিনি আক্রমণাত্মক আচরণ করেন এবং অফিস সহকারীকে আদেশ দেন, যেন সেলিনা পারভিনকে ঝাঁটা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়—যা দেখে উপস্থিত শিক্ষকরা হতবাক হয়ে যান।
শুধু তাই নয়, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আঃ রহিম স্যারের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক ও অশালীন আচরণের অভিযোগ করেছে। নবম শ্রেণির এক ছাত্রী জানান, স্যার তাদের সাথে খারাপ ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলেন। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী বলেন, তিনি ক্লাসে দেরি করে আসেন এবং বইয়ের বাইরে অপ্রাসঙ্গিক ও আপত্তিকর কথা বলেন। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী অভিযোগ করেন, তিনি অন্যান্য শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রদের সামনেই নিন্দা করেন, যা শিষ্টাচার পরিপন্থী। ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, স্যার নিয়ম ভেঙে বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষককে অন্য বিষয় পড়াতে বাধ্য করেন, যার ফলে তারা ক্লাসে বিভ্রান্ত হন।
শিক্ষকরাও অভিযোগ করেন, আঃ রহিম খান শিক্ষক সমাজকে ছোট করতে এনটিআরসি সার্টিফিকেট নিয়ে কটাক্ষ, মিথ্যা অভিযোগ, এবং ব্যক্তিগত বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করেন। গণিত শিক্ষক তারেক চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, শুধুমাত্র ‘ক্লাস নিতে অসুবিধা হবে না’ বলার কারণে আঃ রহিম তাকে রুম থেকে বের করে দেন। পরে জানা যায়, আঃ রহিম নিজেই তার পরিচিত একজনকে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
অফিস সহকারী তপন কুমার বিশ্বাস জানান, আঃ রহিম তাকে নিজ নাম হাজিরা খাতায় তুলতে বললে তিনি নিয়ম মেনে অস্বীকৃতি জানান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আঃ রহিম তাকে লাথি মারার হুমকি দেন এবং চাকরি থেকে বের করে দেওয়ার ভয় দেখান।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা এই পরিস্থিতিতে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অভিভাবকরা বলেন, এভাবে চলতে থাকলে তাদের মেয়েদের অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করানো ছাড়া উপায় থাকবে না। শিক্ষকরা জানান, আঃ রহিম খান শিক্ষকদের মধ্যে সম্প্রীতি নষ্ট করার অপচেষ্টা করছেন।
সবার দাবী, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ দ্রুত হস্তক্ষেপ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিক, যেন বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় থাকে এবং শিক্ষার্থীরা নিশ্চিন্তে পড়ালেখা করতে পারে।
মোঃ কামরুজ্জামান মিলন
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক তুহিন প্রিন্টিং প্রেস ফকিরাপুল ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ই-মেইল: 𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
ই-পেপার: 𝐞𝐩𝐚𝐩𝐞𝐫.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট: 𝐰𝐰𝐰.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
মোবাইল: ০১৯২৭-৩০২৮৫২/০১৭৫০-৬৬৭৬৫৪
আলোকিত মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড