ক্রীড়া ডেস্ক:
২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নেয় ব্রাজিল। সেই হার দিয়ে শুরু হয় ব্রাজিলের ফুটবলের বেদনাদায়ক একটি অধ্যায়। সম্ভবত ব্রাজিলের ফুটবলের যেকোনো অতীত ব্যর্থতাকে ছাপিয়ে গেছে বিশ্বকাপোত্তর সময়টা।
তবে সবচেয়ে বড় আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, সেই সময়টা এখনো শেষ হয়ে যায়নি। বরং ব্রাজিলের ব্যর্থতায় মোড়ানো সময় এখনো চলমান, যার সর্বশেষ ধাক্কা হচ্ছে ব্যর্থতার জেরে দরিভালের চাকরি হারানোর ঘটনা।
অথচ গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই দরিভালই বলেছিলেন, আমরা ২০২৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলব। আমি ১০০ ভাগ নিশ্চিত।’ ব্রাজিলের বর্তমান পারফরম্যান্স নিয়ে যতই আক্ষেপ থাকুক, দরিভালের এই কথাটা উড়িয়ে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দলটা যে ব্রাজিল, যেকোনো পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর সামর্থ্য তাদের ঠিকই আছে।
ফলে ব্রাজিলের ফাইনাল খেলার যে স্বপ্ন, তা হয়তো পূরণ হয়েও যেতে পারে। কিন্তু দরিভালের ভবিষ্যদ্বাণী যদি শেষ পর্যন্ত সত্যি হয়ও, সেই ঘটনার নৈপুণ্য নায়ক হওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই দরিভালের। ব্যর্থতার দায় নিয়ে বিশ্বকাপের যে প্রায় ১৪ মাস আগেই ছাঁটাই হয়েছেন দরিভাল। এর মধ্য দিয়ে শেষ হলো ব্রাজিল দলে তার প্রায় ১৪ মাসের অধ্যায়ও।
কাতার বিশ্বকাপে ব্যর্থতার পরই দায়িত্ব ছাড়েন সে সময়ের কোচ তিতে। তখন নতুন কোচ নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েন ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলাররা। রোনালদো নাজারিওর মতো কেউ কেউ বিদেশি কোচ চাইলেও রিভালদোসহ অনেকেই থাকেন দেশি কোচের পক্ষে। এই তর্কবিতর্কের মধ্যেই ব্রাজিল নতুন কোচ নিয়োগ ঝুলে থাকে দীর্ঘদিন।
সে সময় অন্তর্বর্তীকালীন কোচ দিয়েই কাজ চালিয়ে নিচ্ছিল দলটি। পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের (সিবিএফ) বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, ২০২৪ সালের কোপা আমেরিকা থেকে ব্রাজিলের কোচ হচ্ছেন রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি। সে সময় অন্তর্বর্তীকালীন কোচ হিসেবে ফার্নান্দো দিনিজকে নতুন করে দায়িত্বও দেওয়া হয় দলটির।
কিন্তু একই বছরের নভেম্বরে বদলে যায় দৃশ্যপট। রিয়ালের সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেন আনচেলত্তি। আর সেই নাটকীয়তার মধ্যে কোচ হিসেবে আবির্ভূত হন দরিভাল। ব্রাজিলিয়ান ঘরোয়া ফুটবলের পরিচিত মুখ দরিভাল তখন সাফল্যের চূড়ায় অবস্থান করছিলেন।
ফ্ল্যামেঙ্গোর পর সাও পাওলোকে এনে দিয়েছিলেন ঘরোয়া শিরোপা। তাঁর কোচিং কৌশলও সে সময় বেশ আকর্ষণ করে ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কর্তৃপক্ষকে। ধারণা করা হচ্ছিল, দায়িত্ব নিয়ে ব্রাজিল দলকেও আমূল বদলে দেবেন এই কোচ।
বদলের প্রত্যয় নিয়ে শুরু করা দরিভালের শুরুটাও ছিল দারুণ। ওয়েম্বলিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয় দিয়ে যাত্রা শুরু করেন দরিভাল। এরপর সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে স্বাগতিক স্পেনকে দরিভালের ব্রাজিল রুখে দেয় ৩-৩ গোলে। তবে শুরুর ঝলক সময় গড়াতেই ফিকে হতে থাকে। ব্রাজিল ম্যাচ হারছিল না ঠিকই, কিন্তু পারফরম্যান্স ক্রমেই নিম্নগামী ছিল।
ব্রাজিলের অন্তঃসারশূন্য ফুটবলের আসল রূপটা ধরা পড়ে কদিন আগে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে। এই ম্যাচে আর্জেন্টিনার কাছে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হয়েছে দলটি।
কোপা আমেরিকার কথাই ধরা যাক। সেটি ছিল দরিভালের সামনে প্রথম প্রতিযোগিতামূলক কোনো টুর্নামেন্টের চ্যালেঞ্জ। সেই টুর্নামেন্ট ব্রাজিল শুরু করে কোস্টারিকার সঙ্গে গোলশূন্য ড্রয়ে। পরের ম্যাচে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ৪-১ গোলে জিতলেও শেষ ম্যাচে ফের ড্র করে কলম্বিয়ার সঙ্গে। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে উরুগুয়ের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রয়ের পর টাইব্রেকারে হেরে যায় ৪-২ গোলে। এর ফলে ব্রাজিলের হয়ে নিজের প্রথম শিরোপা জয়ের স্বপ্ন শেষ হয়ে যায় দরিভালের।
এরপর বিশ্বকাপ বাছাইয়েও অপেক্ষাকৃত খর্বশক্তির দলগুলোর বিপক্ষে বেশ সংগ্রাম করতে দেখা যায় ব্রাজিলকে। দলের আক্রমণভাগে সমন্বয়হীনতা, রক্ষণে দুর্বলতা এবং মাঝমাঠে নিয়ন্ত্রণহীনতার কারণে ক্রমে কোণঠাসা হয়ে পড়তে থাকে ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। এমনকি গড়পড়তা মানের দলগুলোর বিপক্ষে জেতা ম্যাচগুলোতেও মন কাড়তে পারেনি ব্রাজিলের খেলা।
ব্রাজিলের অন্তঃসারশূন্য ফুটবলের আসল রূপটা ধরা পড়ে কদিন আগে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে। এই ম্যাচে আর্জেন্টিনার কাছে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হয়েছে দলটি। আর ফলাফল, ৪-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে ব্রাজিলের হার।
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে এমন পারফরম্যান্সের পর ব্রাজিল কোচের বিদায়টা অবশ্যম্ভাবী ছিল। শেষ পর্যন্ত গতকাল রাতে ঘোষণাটা দিয়েও দিয়েছে সিবিএফ। ফলে মাত্র ১৬ ম্যাচেই অতীত হয়ে গেল ব্রাজিলিয়ান ফুটবলে দরিভাল যুগ। তাঁর অধীন ৭টি ম্যাচে জিতেছে ব্রাজিল, হেরেছে ২টি, ড্র ৭ ম্যাচে। প্রশ্ন হচ্ছে, কোচ তো বিদায় নিলেন এরপর কী?
দরিভালের বিদায়ের পর এখন ব্রাজিলের চোখ সেই আনচেলত্তির দিকে। বিকল্প হিসেবে হোর্হে জেসুস ও ফিলিপে লুইসও আছেন। কিন্তু কোচ বদলালে কি ব্রাজিলের ফুটবলও আমূল বদলে যাবে? আর দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্বকাপের আগে কোচের হাতে সময় থাকবে এক বছরের মতো।
এত অল্প সময়ে বিশ্বকাপ জেতানোর জন্য অবিশ্বাস্য কিছুই করে দেখাতে হবে কোচকে। ব্রাজিল দলে অবশ্য তারকার অভাব নেই। কিন্তু ব্রাজিলের খেলোয়াড়দের মধ্যে পারফরম্যান্সের পার্থক্যটা বিশাল। ভিনিসিয়ুস, রাফিনিয়া, রদ্রিগোরা বিশ্বসেরাদের তালিকায় আছেন।
মোঃ কামরুজ্জামান মিলন
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক তুহিন প্রিন্টিং প্রেস ফকিরাপুল ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ই-মেইল: 𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
ই-পেপার: 𝐞𝐩𝐚𝐩𝐞𝐫.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট: 𝐰𝐰𝐰.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
মোবাইল: ০১৯২৭-৩০২৮৫২/০১৭৫০-৬৬৭৬৫৪
আলোকিত মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড