বিশেষ প্রতিবেদকঃ
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার দাবি করেছেন, তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন। তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছিলেন, ছাত্রদের দাবি মেনে নিতে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের স্বপক্ষে এই বক্তব্য রাখার কারণে তার গণভবনে ঢোকা নিষেধ ছিল।
আজ সোমবার আদালতে এসব কথা বলতে বলতে একপর্যায়ে কামাল আহমেদ মজুমদার কাঁদতে থাকেন। তিনি আদালতকে বলেন, ‘একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে।’ তবে কামাল আহমেদ মজুমদারের এসব বক্তব্য অসত্য বলে দাবি করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।
ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১০টা ৫ মিনিট। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের কাঠগড়ার এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিলেন কামাল আহমেদ মজুমদার।
হঠাৎ বিচারকের উদ্দেশে কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, ‘দেশে যদি সত্যিকারের আইনের শাসন থাকত, তাহলে আমাকে এভাবে হয়রানি করা হতো না। একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। বাদীর কোনো খবর নেই। এখন আমার পরিবার বাসায় থাকতে পারছে না।’
এ পর্যায়ে কাঁদতে শুরু করেন কামাল আহমেদ মজুমদার। তিনি আবার আদালতের উদ্দেশে বলতে থাকেন, ‘আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। আদালতের প্রতি আমার সম্মান রয়েছে। আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।’
অবশ্য কামাল আহমেদ মজুমদারের এসব বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি আদালতকে বলেন, কামাল আহমেদ মজুমদার কোনো রাজনৈতিক নেতা নন। তিনি একজন ব্যবসায়ী। তিনি রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন।
মিরপুরে নিরীহ ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করেছেন। সরকারের খাসজমি দখল করে সেখানে ভবন বানিয়েছেন। তার কথা শুনে মনে হচ্ছে, তিনি অন্য গ্রহ থেকে এ পৃথিবীতে নেমে এসেছেন। তিনি বলছেন, বাদীর কোনো খবর নাই। শত শত স্কুল বাচ্চা, ছাত্র-জনতাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তারা বাদী হয়ে মামলা করেছেন। রাষ্ট্র এই বিচারের দায়িত্ব নিয়েছে। যখন মামলার বিচার শুরু হবে, তখন বাদীরা আদালতে আসবেন।
‘মিথ্যা মামলা’ প্রসঙ্গে কামাল আহমেদ মজুমদারের বক্তব্যের বিষয়ে পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশ যে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যে গণহত্যা হয়েছে, সেটি পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন ঘটনা। মিথ্যা মামলা দায়েরের কথা বলা মানে হচ্ছে, খুনের শিকার সেই সব নিহত সন্তানদের সঙ্গে পরিহাস।
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, ‘কামাল আহমেদ মজুমদার বলছেন, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি মানুষ হত্যা করা? দিনের ভোট রাতে করা? ভোটবিহীন বছরের পর বছর ক্ষমতায় থাকা? মানুষ গুম করা? হত্যা করা? উনি কেন দাবি করেন, তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা?’
কামাল আহমেদ মজুমদার আদালতকে আরও বলেন, ‘আগের সরকারের অনেক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলেছিলাম, আপনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার দাবিদাওয়া মেনে নেন। আমার এ বক্তব্যের কারণে গণভবনে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়।’
কামাল আহমেদ মজুমদারের এ বক্তব্যের বিরোধিতা করেন ওমর ফারুক ফারুকী। তিনি আদালতকে বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের যারা বিরোধিতা করেছিল, তাদের জেলে যেতে হয়েছে। হাসিনা সরকারের মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকেও জেলে যেতে হয়েছে। এখন কামাল আহমেদ মজুমদার বলছেন, তিনি শেখ হাসিনার অনেক সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিলেন। বাস্তবে তিনি মিথ্যা কথা বলছেন। তিনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার একজন অন্যতম সহযোগী।
মোঃ কামরুজ্জামান মিলন
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক তুহিন প্রিন্টিং প্রেস ফকিরাপুল ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ই-মেইল: 𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
ই-পেপার: 𝐞𝐩𝐚𝐩𝐞𝐫.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট: 𝐰𝐰𝐰.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
মোবাইল: ০১৯২৭-৩০২৮৫২/০১৭৫০-৬৬৭৬৫৪
আলোকিত মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড