প্রিন্ট এর তারিখঃ এপ্রিল ২৫, ২০২৫, ৪:৫০ পি.এম || প্রকাশের তারিখঃ জানুয়ারি ৩১, ২০২৫, ৪:২২ অপরাহ্ণ
শ্রীপুরের সংরক্ষিত গজারী বনের ভিতর দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি,ঝুঁকিতে বন ও পরিবেশ দেখার মতো কেউ নেই
হাবিবুর রহমান,বিশেষ প্রতিনিধিঃ
গাজীপুরের শ্রীপুরে ভেরামতলী শ্রীপুর রেঞ্জের রাথুরা বিটে, বনবিভাগ ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বেপরোয়া হয়ে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট রাতের আঁধারে মাটি কেটে ড্রাম ট্রাক। পিকআপ ও ট্রাক্টরের মাধ্যমে বিভিন্ন ইটভাটা,সিরামিক শিল্প প্রতিষ্ঠান ও নিচু জমি ভরাট কাজে মাটি সরবরাহ করছে। তরুবীথি পিকনিক স্পট,স্পটের আশপাশে যেন মাটি কাটার ধুম পড়েছে। এতে স্থানীয় গাজীপুর সদর উপজেলার প্রভাবশালী জনৈক বিএনপি নেতার নাম উঠে আসলেও প্রকাশ্যে আছেন তরুবীথি পিকনিক স্পটের মালিক রফিক ও গাজীপুর জেলা জিয়া পরিষদের সহ সভাপতি মো. আব্দুল আলীম। প্রভাবশালী চক্র নির্বিচারে ভেকু ও এসকেভেটর মেশিনের সাহায্যে মাটি কেটে নিচ্ছে। এতে ঝুঁকিতে পড়েছে গ্রামীণ মেঠোপথ, নষ্ট হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও উজাড় হচ্ছে নুহাশ পল্লীর আশপাশে দীর্ঘ এলাকা জুড়ে প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট ভাওয়াল গড়। এমনকি নিধন হচ্ছে শত শত শাল গজারিসহ বৈচিত্র্যময় বৃক্ষরাজি। ধুলোতে এ জনপদের মানুষও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছে। সিন্ডিকেটটি থোড়াই কেয়ার করছে বনবিভাগের কর্মকর্তাদের। মাঝে মধ্যে প্রশাসন মোবাইল কোর্টে জরিমানা আর সাজা দিয়েও থামাতে পারছে না মাটি খেকোদের দৌরাত্ম্য। প্রশাসনকে ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে রাতের আধাঁরে চলছে মাটি কাটা উৎসব। এসব মাটি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইটভাটা,সিরামিক কোস্পানি ও নিচু জায়গা ভরাটের কাজে। মিনি ট্রাক, ভারী ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টর দিয়ে মাটি পরিবহন করায় নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ পাকা, আধা-পাকা ও মাটির রাস্তাগুলো। অভিযোগ উঠেছে মাটি কাটা সিন্ডিকেটের মূল হোতা তরুবীথি পিকনিক স্পটের মালিক রফিক ও গাজীপুর জেলা জিয়া পরিষদের সহ সভাপতি মো. আব্দুল আলীমের বিরুদ্ধে। আড়ালে সিন্ডিকেটটি নিয়ন্ত্রণ করছেন সদর উপজেলা বিএনপির একজন প্রভাবশালী নেতা। এতে বনভূমি যেমন ধ্বংস হচ্ছে তেমনি কৃষি জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে।
তাছাড়া ইটভাটা, বসতভিটা ও পুকুর ভরাট কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে এসব মাটি। ভূমি ও বন আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুগুলি দেখিয়ে এক শ্রেণির দালাল বনবিভাগের জমির টপ সয়েল কেটে উজাড় করছে।
এর ফলে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি
কৃষি উৎপাদন,ফসল ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের সরকার নিরলস কাজ করে গেলেও ভুমি খেকোদের ভয়াল
থাবায় পরিবেশে বিপর্যয় নেমে এসেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাটি ব্যবসায়ীদের নিজ স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে বনভূমি। সমতল জমির মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। আর এই মাটিবাহী ড্রামট্রাক, ভেকুমেশিন চলছে সংরক্ষিত বনের ভিতর দিয়ে। প্রশাসন ও বনবিভাগের কর্তাদের চোখ ফাঁকি দেওয়ার জন্য মাটি কাটা হচ্ছে রাতের আঁধারে।
শ্রীপুর রেঞ্জের রাথুরা বন বিটের অদুরেই তরুবীথি পিকনিক স্পষ্টের ভিতর থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। জায়গাটি রাথুরা বিট অফিস থেকে মাত্র দুই কিলোমিটারের ব্যবধান হলেও সিন্ডিকেট নাকের ডগায় বসেই অপকর্মটি করে যাচ্ছে। আমলে নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট বনকর্মকর্তার বিধিনিষেধ। এমনকি এরা স্থানীয় রাথুরা বিট কর্মকর্তাকে হুমকি ধামকি দিয়ে তটস্থ রেখেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাথুরা বিট কর্মকর্তা এমদাদুল হক আলোকিত নিউজ কে বলেন, সিন্ডিকেটটি অনেক শক্তিশালী। এরা বিএনপির লোক। আমরা কাজ বন্ধ রাখার কথা বলেছি। আমাদের বিধিনিষেধ না মেনেই চক্রটি ক্ষমতা দেখিয়ে মাটি কেটে নিচ্ছে। এমনকি এই চক্রটি (বিএনপির লোকজন) আমার মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে। বিট অফিস থেকে অস্ত্র লুট করে নিয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। আগামিকাল তাঁরা সরেজমিনে আসবেন। তারপর আমরা কঠোর পদক্ষেপে যাব।
শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান, জানান" এ বিষয়ে অবগত আছি। আগামিকাল আমি নিজেই সরেজমিনে যাব। তদন্ত সাপেক্ষে সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থাও গ্রহণ করব। তিনি আরও জানান, দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় এল জি আর ডি ও পল্লীবিদ্যুৎ বিভাগ আমাদের বাঁধা উপেক্ষা করে বনের ভেতর দিয়ে জোর পূর্বক রাস্তা নিয়ে যায়। এই রাস্তা দিয়ে চলে ড্রাম ট্রাক, ভেকু। সব চাপ সামলাতে হয় আমাদের।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে আব্দুল আলীম বলেন ভিন্ন কথা। তিনি দাবি করেন তরুবীথি মালিক রফিকের কাজ এটি। রফিক তরুবীথি পিকনিক স্পটের ভেতরের দুটি লেক একত্রিত করার উদ্দেশ্যে তার জোত জমি থেকে মাটি কাটছেন। তাদের ডিমার্কেশন আছে। রফিকের হয়ে তিনি কাজটি করছেন।
এ বিষয়ে কবি,লেখক ও পরিবেশবিদ শাহান সাহাবুদ্দিন বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট টিলা কাটা, নদী থেকে বালু উত্তোলন, বনের বৃক্ষ কর্তন সম্পূর্ণ নিষেধ। অন্যদিকে ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন অনুযায়ী কৃষিজমির উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও সম্পূর্ণভাবে নিষেধ। অথচ আইন অমান্য করে পরিবেশ ধ্বংসযজ্ঞের উৎসবে ব্যস্ত থাকতে দেখা যাচ্ছে মাটি, বালু, নদী ও বন দস্যুদের।
এর ফলে অপূরনীয় ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশ ও জনপদের। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি জীব বৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়ছে। মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তদারকি না করায় এমনটি হচ্ছে। তাদের ঘুম ভাঙা জরুরি। কঠোর হওয়া জরুরি। আইনের সঠিক প্রয়োগ থাকা জরুরি। এসবে ব্যর্থ হলে বা পরিবেশ বিনষ্টকারীদের সঙ্গে যোগসাজশ থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদেরও শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।
মোঃ কামরুজ্জামান মিলন
সম্পাদক ও প্রকাশক কর্তৃক তুহিন প্রিন্টিং প্রেস ফকিরাপুল ঢাকা থেকে মুদ্রিত।
ই-মেইল: 𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬@𝐠𝐦𝐚𝐢𝐥.𝐜𝐨𝐦
ই-পেপার: 𝐞𝐩𝐚𝐩𝐞𝐫.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
ওয়েবসাইট: 𝐰𝐰𝐰.𝐝𝐚𝐢𝐧𝐢𝐤𝐚𝐥𝐨𝐤𝐢𝐭𝐨𝐧𝐞𝐰𝐬.𝐜𝐨𝐦
মোবাইল: ০১৯২৭-৩০২৮৫২/০১৭৫০-৬৬৭৬৫৪
আলোকিত মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত